
দেশের প্রত্যেক নাগরিকের কাছে তার নিজস্ব জমির চেয়ে মূল্যবান বস্তু আর কিছুই নেই। প্রত্যেকেই চায় তার নিজস্ব জমিতে বসবাস করতে। এজন্যই জমির মালিকানা সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে জানা প্রত্যেক নাগরিকের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য। এই আর্টিকেলের বিষয় হলো অনলাইনে জমির মালিকানা বের করার উপায়, জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম এবং অনলাইনে জমির মালিকানা যাচাই করা ইত্যাদি।
আপনি যদি বাংলাদেশের নাগরিক হন, তবে আপনি যে কোনো জমির মালিকানা সম্পর্কে খুব সহজেই জানতে পারবেন। কেননা, বাংলাদেশের ভূমি মন্ত্রণালয় এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে দেশের নাগরিকদেরকে ভূমি সেবা প্রদান করছে।
তাই এখন আর জমির মালিকানা চেক করার জন্য ভূমি অফিসে স্বশরীরে যেতে হয় না। নিজ ঘরে বসেই কম্পিউটার -ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই জমি সংক্রান্ত সমস্ত বিষয়াদি জেনে নেওয়া যায়।
একটি বিষয় মনে রাখতে হবে কোনো জমি দখলে থাকলে জমির মালিকানা নয়; বরং সরকারি ভলিয়মে যার নামে জমিটি ইস্যু বা লেখা হয়েছে সেই জমির মূল মালিক। অর্থাৎ, কাগজপত্রে যিনি মালিকানা পেয়েছেন তিনিই জমির প্রকৃত মালিক।
- পড়ুনঃ জমির মৌজা বের করার উপায়।
আজ আমি আপনাকে অনলাইনে জমির মালিকানা বের করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত বলব। আপনি যদি জমির মালিকানা নির্ণয় পদ্ধতিটি ভালো করে ফলো করেন, তবে যে কোনো জায়গার মালিকানা ৫ মিনিটের ভেতরেই বের করতে পারবেন।
জমির মালিকানা বের করার প্রয়োজন হয় কেন?
প্রয়োজনের তাদিকে আমাদেরকে অন্যের থেকে জমি ক্রয় করতে হয়। এক্ষেত্রে নাগরিক হিসেবে জমি ক্রয় করার আগে আমাদের কর্তব্য হলো সেই জমির আসল মালিক কে তা জেনে নেওয়া।
কেননা, আমাদের সমাজে অনেক অসাধু ব্যক্তি আছে, যারা জমির নকল মালিক সেজে অন্যের জমিকে গোঁজামিল দিয়ে বিক্রয় প্রতারণায় ব্যস্ত থাকে। ফলে অনেক সহজ-সরল মানুষ তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাবে প্রতারিত হয়।
এটা ছাড়াও জায়গা-জমি নিয়ে পারস্পরিক বিরোধ এড়াতে জমির মালিকানা যাচাই করার প্রয়োজন হয়। আবার পারিবারিক ভাবেও সম্পত্তি বন্টনে মৃত ব্যক্তির জমির পরিমাণ যাচাই করতে হয়।
এগুলো ছাড়াও আরো বিভিন্ন কারণে জমির আসল মালিক কে তা জানার প্রয়োজন হয়।
অনলাইনে জমির মালিকানা বের করার উপায়
জমির আসল মালিক কে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তা জানার জন্যে আপনাকে ”ব্যক্তির নাম, জমির দাগ নম্বর ও খতিয়ান” এর যে কোনো একটা জানতে হবে। অর্থাৎ, আপনি চাইলে একাধিক পদ্ধতি অনুসরণ করে অনলাইন থেকে জমির মালিক কে তা চিহ্নিত করতে পারবেন।
যেমন,
- দাগ নম্বর দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই করা যায়,
- খতিয়ানের মাধ্যমে জমির মালিকানা বের করা যায়,
- পিতা বা স্বামীর নাম দিয়েও জমির মালিকানা নির্ণয় করা যায়,
- জমির মালিকের নাম দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই করা যায়।
উপরোল্লিখিত চারটি পদ্ধতির যে কোনোটা অনুসরণ করে জমির মালিকানা নির্ণয় করতে পারবেন।
মজার বিষয় হলো একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই এই চারটি পদ্ধতিতেই জমির মালিকানা বের করা যায়। আরেকটু ইন্টারেস্টিং তথ্য হলো ওয়েবসাইটের একটি স্পেসিফিক পেজেই এই ফিচার গুলো রয়েছে।
তাই মাত্র কয়েক মিনিটের মাধ্যমেই সবগুলো পদ্ধতিতেই জমির আসল মালিককে চিনে নিতে পারবেন।
অনেকেই হয়ত “খতিয়ান কি” এই বিষয়টি বুঝতে পারেননি। জমির খতিয়ান বের করার নিয়মসহ অন্য একটি আর্টিকেলে বিস্তারিত বলব ইনশাআল্লাহ।
যাইহোক, স্টেপ বাই স্টেপ জমির মালিকানা বের করার উপায় নিচে তুলে ধরা হলো।
অনলাইনে জমির মালিকানা যাচাই
আপনি যদি অনলাইনের মাধ্যমে কোনো জায়গার মালিকানা যাচাই করতে চান, তবে আপনার একটি কম্পিউটার- ল্যাপটপ অথবা স্মার্টফোন ডিভাইসের প্রয়োজন হবে। পাশাপাশি সেই কাঙ্খিত ডিভাইসটিতে ইন্টারনেট সংযোগ থাকবে হবে।
তারপর বাংলাদেশ সরকারের ভূমি অফিসের ওয়েবসাইট eporcha.gov.bd তে প্রবেশ করতে হবে। ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশ করার পর নিচে দেওয়া স্টেপগুলো ফলো করুন।
স্টেপ -০১

ই পর্চা.গভ.বিডি ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর উপরের দেওয়া ছবির মতো একটি পেজ ওপেন হবে। এই পেজে বেশকিছু অপশন দেখতে পাবেন।
এখান থেকে আপনাকে “খতিয়ান” অপশনটিতে ক্লিক করতে হবে।
স্টেপ -০২

”খতিয়ান” অপশনে ক্লিক করার পর উপরের ছবির মতো আরেকটি পেজ ওপেন হবে। এখানে কিছু খালিঘর রয়েছে। সেগুলো সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হবে।
প্রথমেই আপনার বিভাগ সিলেক্ট করতে হবে। তারপর আপনার জেলা। অতঃপর “আর এস” সিলেক্ট করতে হবে। কেননা, আমরা আর এস খতিয়ান -এর মাধ্যমে জায়গার মালিকানা নির্ণয় করবো।
তারপর যথাক্রমে উপজেলা, মৌজা, খতিয়ান নং / দাগ নং / পিতা বা স্বামীর নাম / মালিকানা নাম ইত্যাদি দিয়ে খালিঘর পূরণ করতে হবে।
উল্লেখ্য, “খতিয়ান নং, দাগ নং, পিতা/ স্বামীর নাম এবং মালিকানা নাম” এই সবগুলো আপনাকে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এগুলো থেকে আপনি যে কোনো একটি বেছে নিতে পারবেন।
স্প্যাম রোধে একটি Captcha code রয়েছে। সেই ক্যাপচা কোডটি পাশের খালিঘরে লিখতে হবে। তারপর ”অনুসন্ধান করুন” এই বাটনে ক্লিক করুন।
স্টেপ -০৩

”অনুসন্ধান করুন” বাটনে ক্লিক করার পর আপনার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রেজাল্ট শো হবে। উপরের ছবিটি দেখে হয়ত কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পেরেছেন।
আপনি যদি দাগ নম্বর দিয়ে খালিঘরটি পূরণ করেন, তবে আপনাকে খতিয়ান সহ রেজাল্ট দেখাবে। আবার খতিয়ান নং দিয়ে যদি খালিঘর পূরণ করেন তবে দাগ নম্বর সহ রেজাল্ট দেখাবে।
এখানে একটা ব্যাপার সুস্পষ্ট যে, খতিয়ান ও দাগের তথ্য অনুসন্ধান করার জন্য উপরোল্লিখিত স্টেপগুলো ফলো করলেই হবে। এটাই মূলত জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথাঃ
প্রিয় পাঠক, অনলাইনে জমির মালিকানা যাচাই এবং জমির মালিকানা বের করার উপায় সম্পর্কে আপনাকে পূর্ণাঙ্গ ধরাণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আপনি যদি উপরোল্লিখিত স্টেপগুলো সঠিক ভাবে ফলো করে থাকেন তবে নিশ্চই আপনার কাঙ্খিত জায়গার মালিকানা যাচাই করে ফেলেছেন হয়ত।
এই বিষয়ে আপনার যদি আরো কোনো প্রশ্ন থাকে তবে অবশ্যই কমেন্ট করতে ভুলবেন না। আমি যথাসাধ্য আপনাকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
আর্টিকেলটি যদি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকে তবে আপনার প্রিয়জন এবং বন্ধু-বান্ধবদের সাথে লিংকটি শেয়ার করতে ভুলবেন না। সবাইকেই ধন্যবাদ।