ইউটিউব থেকে আয় করার নিয়ম

ইউটিউব থেকে আয়

ইউটিউব থেকে আয় | স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করে কিন্তু ইউটিউব ( YouTube) চিনে না, এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বিংশ শতাব্দিতে পদার্পন করার পর টেকনোলজি অনেক ডেভেলপ হয়ে গেছে। যদিও আমাদের বাংলাদেশ এবং পার্শবর্তী দেশ ভারতে এখনো আধুনিক দেশগুলোর মতো টেকনোলজির ছোঁয়া পুরোপুরি ভাবে পায়নি। তবে আস্তে আস্তে করে আমরাও টেকনোলজিতে এগিয়ে যাচ্ছি এই কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

ইউটিউবও টেকনোলজির একটি আবিস্কার। এই আবিস্কারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান। ইন্টারনেট ভিত্তিক যত অর্থ উপার্জনের পদ্ধতি আছে, তারমধ্যে ইউটিউব অন্যতম। ২০২৩ সালে এসে প্রায় মানুষই জানে ইউটিউব থেকেও আয় করা যায়। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ এটা জানেনা যে, ইউটিউব থেকে কিভাবে আয় করা যায়? চলুন জেনে নিই ইউটিউব থেকে আয় এর আদ্যোপান্ত।

ইউটিউব থেকে আয়

এই যুগকে ইন্টারনেট বা টেকনোলজির যুগ বলা হয়। ইন্টারনেটের ব্যবহার পৃথিবীর চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইন্টারনেট ভিত্তিক বাণিজ্যের জোয়ারে এখন ভাসছে পৃথিবী। ইন্টারনেট থেকে আয় করার বিষয়টাও এখন আর গোপন কিছু নয়। ইউটিউব থেকেও এখন টাকা আয় করা যায়।

পড়ার সাজেশনঃ
ওয়েবসাইট কি? ওয়েবসাইটের সুবিধা সমূহ
কিভাবে ব্লগিং শুরু করবো?

ইউটিউব থেকে টাকা আয় করার বিষয়টা বেশ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। অর্থাৎ, আপনি একাধিক পদ্ধতি অবলম্বন করে ইউটিউব থেকে আয় করতে পারবেন। তার আগে আপনাকে ইউটিউব মার্কেটিং বিষয়টা সুস্পষ্ট ভাবে বুঝতে হবে।

আমরা অনলাইনে যা কিছু করি, সবই মার্কেটিং এর উদ্দেশ্যেই করি। ইউটিউবে আমরা যেই ভিডিওগুলো দিই তারও প্রধান উদ্দেশ্যই হলো মার্কেটিং। আমরা চাই আমাদের ভিডিও গুলো লক্ষ লক্ষ মানুষ দেখুক এবং আমাদের পরিচিতি বৃদ্ধি পাক। এটাও একটি মার্কেটিং প্রক্রিয়া। সুতরাং ইউটিউব থেকে টাকা আয় করার মূল উৎস বা প্রসেসটা হলো মার্কেটিং।

কিভাবে ইউটিউব চ্যানেল থেকে টাকা আয় করা যায়

ইউটিউব আয়ের জনপ্রিয় কিছু পদ্ধতি

  • গুগল এডসেন্স
  • অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম
  • কোম্পানি স্পন্সর বা প্রোডাক্ট রিভিউ
  • পার্সোনাল সার্ভিস

(১) গুগল এডসেন্স

আমাদের দেশীয় ইউটিবারদের ইউটিউব আয়ের প্রধান উৎস হলো গুগল এডসেন্স। গুগল এডসেন্স সম্পর্কে কাউকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। ইতোমধ্যেই এই বিষয়ে সকলেই জানেন। তবে নতুনদের জন্য বলি, গুগল এডসেন্স হলো গুগলের একটি প্রোডাক্ট। যেটা ইন্টরনেটে বিভিন্ন উপায়ে ডিজিটাল বিজ্ঞাপন পরিবেশেন করে।

আপনি চাইলে গুগল এডসেন্স এর মাধ্যমে ইউটিউব থেকে আয় করতে পারবেন। গুগল এডসেন্স সম্পর্কে বিস্তারিত জানুনঃ গুগল এডসেন্স কি?

কমন প্রশ্নঃ আমার চ্যানেলে গুগল এডসেন্স ব্যবহার করতে কি কি প্রয়োজন হবে?

উত্তরঃ আপনার চ্যানেলে অবশ্যই কপিরাইটহীন ভিডিও থাকতে হবে এবং লাস্ট বারো মাসে চ্যানেলের মোট ভিডিতে চার হাজার ঘন্টা ওয়াচ টাইম থাকতে হবে। পাশাপশি আপনার চ্যানেলে লাস্ট বারো এক হাজার সাবস্ক্রাইবার থাকতে হবে।

(২) অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম

উন্নত বিশ্বে ইউটিউব ভিত্তিক যত ইনকাম আছে, তারমধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম ভিত্তিক ইনকাম। আমাদের দেশে যদিও এর চাহিদা তেমন নেই। এর প্রধান কারণ হলো আমাদের দেশে এখনো অ্যামাজন, আলিবাবার মতো বড় বড় ই-কমার্স সাইট ভালোকরে এলাও না। তাছাড়া আমাদের ইন্টারন্যাশানাল মাস্টারকার্ড এর অনেক ঘাটতি রয়েছে। আরো বিভিন্ন কারণে আমরা অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম নিয়ে তেমন চিন্তাও করিনা।

পড়ার সাজেশনঃ
বাউন্স রেট (Bounce Rate) কি? ওয়েবসাইটের বাউন্স রেট কমানোর সেরা ০ উপায়
অনলাইনে ইনকাম বাংলাদেশী সাইট

তবে আস্তে আস্তে অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে আমাদের বাংলাদেশী ইউটিবাররাও কাজ শুরু করেছে। যদিও আমরা এখনো উন্নত বিশ্বের ধারে-কাছেও যেতে পারিনি। তবে অবশ্য আমাদের বাংলাদেশীদের অনেক ইউটিবার আছেন, যারা অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম এর মাধ্যমে মাসে হাজার হাজার ডলার ইউটিউব থেকে আয় করছেন।

আপনি চাইলে ইউটিউব থেকে অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম এর মাধ্যমেও ইনকাম করতে পারবেন। অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম সম্পর্কে বিস্তারিত জানুনঃ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি?

কমন প্রশ্নঃ আমার চ্যানেলে অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম চালু করার জন্য কি কি প্রয়োজন?

উত্তরঃ যে কোনো চ্যানেলে অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম চালু করার জন্য চ্যানেলটি মোটািমুটি একটি ভালো অবস্থানে থাকবে হবে। অর্থাৎ, আপনার চ্যানেলে অনেক সাস্ক্রাইবার এবং দর্শক থাকতে হবে। ( এর কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ নেই কোথাও)।

(৩)  কোম্পানি স্পন্সর বা প্রোডাক্ট রিভিউ

ইউটিউবর থেকে আয় করার জন্য কোম্পানি স্পন্সর বা প্রোডাক্ট রিভিউ এটা খুবই কার্যকরী একটি পদ্ধতি। তবে এই ধরণের ‘কোম্পানি স্পন্সর বা প্রোডাক্ট রিভিউ’ আপনার চ্যানেলে পাওয়ার জন্য আপনার চ্যানেল অবশ্যই বড় মাপের চ্যানেল হতে হবে। পাশাপাশি আপনার চ্যানেলের ভিডিওর মান ভালো হতে হবে। তবেই আপনি বিভিন্ন কোম্পানি থেকে স্পন্সর বা প্রোডাক্ট রিভিউর জন্য অফার পাবেন।

ইউটিউব আয়ের জন্য পৃথিবীর প্রত্যেকটা দেশেই এই পদ্ধতিটি খুবই জনপ্রিয়। আপনার ইউটিউব চ্যানেল যদি বড় হয়ে থাকে তবে আপনি বিভিন্ন কোম্পানির স্পন্সর বা প্রোডাক্ট রিভিউর মাধ্যমে ইনকাম করতে পারবেন।

কমন প্রশ্নঃ আমার চ্যানেলে কোম্পানির স্পন্সর বা প্রোডাক্ট রিভিউ পাওয়ার জন্য কি কি করতে হবে?

উত্তরঃ এজন্য আপনার চ্যানেল বড় হওয়া চাই এবং ভিডিওর কোয়ালিটি যথেষ্ট ভালো হওয়া চাই। তবেই আপনাকে বিভিন্ন কোম্পানি থেকে স্পন্সর বা প্রোডাক্ট রিভিউর জন্য অফার করা হবে। (চ্যানেল কতটুকু বড় হতে হবে এর কোনো নির্দিষ্ট তথ্য উল্লেখ নেই)।

(৪) পার্সোনাল সার্ভিস

ইউটিউব থেকে আয় করার জন্য পার্সোনাল সার্ভিস এটি খুবই উন্নতমানের একটি ইনকাম পদ্ধতি। তবে এভাবে ইনকাম করার জন্য আপনাকে কোনোনা কোনো বিষয়ের উপর অভিজ্ঞতা অর্জন করতেই হবে।

মনে করেন, আপনি যদি আপনার চ্যানেলে ওয়েব ডিজাইন নিয়ে কথা বলেন, তবে আপনার চ্যানেলের অধিকাংশ দর্শকই ওয়েবসাইট বিষয়ে আগ্রহী হবে, এটাই স্বাভাবিক। আপনি যদি দর্শকদের উদ্দেশ্য করে ভিডিওতে বলেন যে, ”আপনাদের কারো ওয়েবসাইট ডিজাইন করার প্রয়োজন হলে আমার সাথে যোগাযোগ করুন”। তবে আপনি দেখবেন যে, ইউটিউব থেকে আপনি অগণিত কাস্টোমার পাবেন এবং তাদেরকে সার্ভিস দেওয়ার মাধমে ইউটিউব থেকে অনেক ভালো পরিমাণের আয় করতে পারবেন। যা ইউটউব আয় এর জন্য খুবই চমৎকার একটি পদ্ধতিও বটে।

পড়ার সাজেশনঃ
কিভাবে ব্লগার হওয়া যায়? বাংলা ব্লগার গাইড
ওয়েব ডিজাইন ক্যারিয়ার

আপনি যদি এমনি কোনো বিষয়ে অভিজ্ঞ হোন, তবে আপনি চাইলে ইউটিউবের মাধ্যমে এভাবে আয় করতে পারবেন। আমি পার্সোনালি ওয়েব ডিজাইন নিয়ে এটি করি। এতে যথেষ্ট রেসপন্স পাই। আপনি যদি ওয়েব ডিজাইন সম্পর্কে জানতে চান, তবে এখান থেকে জেনে নিনঃ ওয়েব ডিজাইন

কমন প্রশ্নঃ চ্যানেলে পার্সোনাল সার্ভিস দেওয়ার জন্য চ্যানেল কতটুুক বড় হতে হবে?

উত্তরঃ যে কোনো চ্যানেলে সার্ভিস অফার করার আগে সার্ভিস এর উপর ভিত্তি করেই চ্যানেলে বেশকিছু ভিডিও পাবলিশ করতে হবে। যেনো আপনার দর্শকেরা বুঝতে পারে যে, আপনি কাঙ্খিত বিষয়ে অভিজ্ঞ। ( এজন্য আপনার চ্যানেল খুব বেশী বড় হওয়ার প্রয়োজন নেই।)

আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথাঃ

আপনি যদি ইউটিউব থেকে আয় করতে চান, তবে আপনাকে প্রথমেই ইউটিউব সম্পর্কে পুরোপুরি জানতে হবে। আপনার  ভিডিওর জন্য এমন একটি নিশ সিলেক্ট করতে হবে, যেই নিশে আপনি নিজে অভিজ্ঞ এবং চাহিদাগত ভাবেও যেই নিশ সবার কাছে পরিচিত।

আপনি যদি একটি ভাইরাল নিশ নিয়ে কাজ করতে পারেন, তবে আপনি খুব সহজেই ইউটিউব থেকে আয় করে সফলতা পাবেন। ভাইরাল নিশ বলতে যেই ধরণের নিশের ভিডিও মানুষ দেখতে পছন্দ করে। যেমন, আপনি যদি “বিনোদন বা ফানি নিশের উপর ভিডিও দেন, তবে আপনার ভিডিও খুব দ্রুতই ভাইরাল হওয়ার চান্স রয়েছে। কারণ, এটি একটি ভাইরাল নিশ।

ইউটিউব ভিডিওর জন্য এমন আরো ভাইরাল নিশ রয়েছে। যা পরবর্তী একটি আর্টিকেলে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ। আপনি যদি সত্যিই ইউটিউব থেকে আয় করতে চান, তবে আপনি উপরোল্লেখিত পদ্ধতিগুলো ফলো করতে পারেন।

কমন প্রশ্নঃ একটি ইউটিউব চ্যানেলে একসাথে কি ”গুগল এডসেন্স, অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম, কোম্পানি স্পন্সর বা প্রোডাক্ট রিভিউ, পার্সোনাল সার্ভিস ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা যাবে?

উত্তরঃ হ্যাঁ, অবশ্যই আপনি একটি চ্যানেলেই সবগুলো পদ্ধতি ফলো করে আয় করতে পারবেন।

আমি আশা করছি আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনি ইউটিউব থেকে আয় করার সকল বিষয়াদি সম্পর্কে অবগত হতে পেরেছেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে তবে এখনই কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ

ItNirman English

IT Nirman

যত জ্ঞান-ধন করেছি অর্জন জীবনের প্রয়োজনে,
তার সবটুকুই বিলাতে চাই সৃষ্টির কল্যাণে।

Add comment

Your Header Sidebar area is currently empty. Hurry up and add some widgets.