নতুন পুরাতন প্রায় সকল ইউটিউবারদের জন্য ’ইউটিউব কপিরাইট নিয়ম’ সম্পর্কে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি ইতোমধ্যেই জেনে থাকবেন ইউটিউব হলো বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত অনলাইন পেসিভ ইনকাম এর সম্ভাবনাময় চাকরিক্ষেত্র।
ইউটিউবে নিজের একটি অবস্থান তৈরি করার জন্য মানুষ কত কিছুইনা করে। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর শ্রম দিয়ে সাধনা করে সফলতা অর্জন করে নেয়। আর এই অর্জনের পিছনে ইউটিউবের কপিরাইট সিস্টেমটি কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদেরকে সহজে সফলতা এনে দেয়।
ইউটিউবে যারা ভিডিও তৈরি করে তাদেরকে Content Creator বলা হয়। আর প্রত্যেক কন্টেন্ট ক্রিয়েটর যে কত কষ্ট করে ভিডিও তৈরি করে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। আপনি যদি ইউটিউবে কাজ করতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তবে আপনাকে ইউটিউব কপিরাইট আইন সম্পর্কে জানতে হবে।
Table of Contents
ইউটিউব কপিরাইট কি?
কপিরাইট একটি সামাজিক আইন। এই আইনটি অনলাইন-অফলাইন উভয় জায়গায় বিদ্যমান। লেখকের লেখা, শিল্পীর সৃষ্টিকর্ম, বিজ্ঞানের আবিস্কার, ছবি, কম্পিউটার সফটওয়্যার ইত্যাদির প্রকাশক বা মূল মালিকের স্বত্ব ও অধিকার সংরক্ষণের আইনকে কপিরাইট আইন বলে।
মনে করুন আপনার সৃজনশীলতা দিয়ে ইউটিউবে প্রকাশের জন্য একটি ভিডিও তৈরি করেছেন। আপনার ক্রিয়েটিভিটি দিয়ে ভিডিওটি তৈরির জন্য এই ভিডিওর প্রকাশক বা মালিক একান্তই আপনি।
- পড়ুনঃ ইউটিউব থেকে আয় করার উপায়।
“কপিরাইট আইন” মূলত আপনার তৈরি জিনিসটিকে চুরি বা কপি হওয়া থেকে সুরক্ষিত রাখে। আপনার তৈরি ভিডিওটি যদি অন্য কেউ তার চ্যানেলে নিজের বলে আপলোড দেয় তবে এটি স্পষ্ট কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন।
আর এমন অবৈধ কাজ রোধে ইউটিউব কপিরাইট নিয়মটি বেশ কার্যকর। কপিরাইট আইন কেউ লঙ্ঘন করলে রাস্ট্রীয়ভাবে আইনের মাধ্যমে তার বিচারের আবেদন করতে পারবেন। যদিও এটি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।
ইউটিউবের কপিরাইট ব্যবস্থাপনা একটু অন্যরকম। অর্থাৎ, আপনার তৈরি কোন ভিডিও যদি অন্য কোন ইউটিউব চ্যানেল থেকে আপনার অনুমতি ছাড়া আপলোড দেয় তবে আপনি ইউটিউবের মাধ্যমে তৎক্ষণাৎ প্রদক্ষেপ নিতে পারবেন।
ইউটিউব সর্বদায় ভিডিও ক্রিয়েটরদের কপিরাইট নিশ্চিতকরণে বেশ মনোযোগী। ইউটিউব কপিরাইট কিভাবে কাজ করে তা পর্যায়ক্রমে নিচে বলা হয়েছে।
ইউটিউব কপিরাইট স্ট্রাইক
যারা ইউটিউব নিয়ে সামান্য হলেও নাড়াচাড়া করেছেন তারা অবশ্যই ইউটিউবের ’কপিরাইট স্ট্রাইক’ সম্পর্কে শুনে থাকবেন। এটি কারো জন্য খুব আনন্দের, আবার কারো জন্য কষ্টের।
আপনি যদি সত্যিকারের কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হয়ে থাকেন, তবে ইউটিউব কপিরাইট নিয়মটি আপনার জন্য আনন্দের হবে। কারণ, আপনি কখনই চাইবেন না যে, আপনার ভিডিও গুলো অন্য কেউ চুরি বা কপি করে তার চ্যানেলে আপলোড করুক।
ইউটিউব কপিরাইট স্ট্রাইক এর মানে হলো আপনার ভিডিও যদি কেউ চুরি করে তার চ্যানেলে আপলোড দেয়, তবে আপনি ইউটিউবের মাধ্যমে সেই ভিডিওতে কপিরাইট ক্লেইম করতে পারবেন।
কপিরাইট ক্লেইম করার বিষয়টি আপনাকে বুঝিয়ে বলছি।
ধরুন আপনি একটি ভিডিও তৈরি করে আপনার ইউটিউব চ্যানেল থেকে আপলোড করলেন। তারপর আপনার ভিডিওটি কেউ ডাউনলোড করে তার নিজস্ব চ্যানেলে আপলোড করে দিল। আর এই কাজটি ইউটিউব খুব সহজেই বুঝতে পারে।
আপনার চ্যানেলের ভিডিওটি যখন অন্য কোন চ্যানেল থেকে দ্বিতীয়বার ইউটিউবে আপলোড দেয়, তখন ইউটিউবের পক্ষথেকে আপনাকে এই বিষয়টি একটি মেসেজের মাধ্যমে জানানো হবে।
তখন আপনি চাইলে সেই ভিডিওতে কপিরাইট ক্লেইম করতে পারবেন। কপিরাইট ক্লেইম করলে তার চ্যানেলে একটি কপিরাইট স্ট্রাইক চলে আসবে। আর ইউটিউবের কমিউনিটি গাইডলাইন অনুযায়ী একটি চ্যানেলে একসাথে ৩ টি কপিরাইট স্ট্রাইক থাকলে সেই চ্যানেল সাসপেন্ড হয়ে যাবে।
তবে অনেক সময় প্রকৃত কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের চ্যানেলেও অনাকাঙ্খিত ভাবে স্ট্রাইক আসে। এটাও মূলত কপিরাইট বা ইউটিউব কমিউনিটি গাইডলাইনের লঙ্ঘনের জন্যই হয়।
আর ইউটিউব কপিরাইট নিয়মাবলী তাদের কমিউনিটি গাইডলাইনের মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ইউটিউব কপিরাইট আইন ও স্ট্রাইক পলিসি
চ্যানেলকে কপিরাইট স্ট্রাইক থেকে বাঁচাতে এবং ইউটিউবে দীর্ঘমেয়াদী কাজ করতে হলে YouTube policy মেনেই কাজ করতে হবে। একটি চ্যানেলে স্ট্রাইক তখনই আসে যখন কেউ ইউটিউবের পলিসি না মেনে কাজ করে।
YouTube policy তে দুই রকমের স্ট্রাইক রয়েছে।
■ Community Guideline Strikes: এটা বিভিন্ন কারণে আসতে পারে। যেমন, আপনার ভিডিওর টাইটেল, ডেস্ক্রিপশন বা থাম্বনেইলে অশ্লীল বাক্য অথবা বিভ্রান্তিকর কোন কিছু থাকলে।
■ Copyright Strike: অন্যের কন্টেন্ট অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে এই স্ট্রাইকটি আসে। কন্টেন্ট বলতে ছবি, ইমেজ, অডিও, ভিডিও, লেখা ইত্যাদি।
মনে রাখতে হবে, আপনার চ্যানেলে যদি লাগাতার ৩ টি স্ট্রাইক একসাথে আসে, তবে চিরদিনের জন্য আপনার চ্যানেল সাসপেন্ড হয়ে যাবে। যেই ইমেইলটি দিয়ে চ্যালেটি খোলা হয়েছিল সেই ইমেইল দিয়ে আর কখনই ইউটিউব চ্যানেল খুলতে পারবেন না।
তাছাড়া, আপনার চ্যানেলে যদি গুগল এডসেন্স যুক্ত থাকে তবে এডসেন্স ডিজেবল হয়ে যাবে। সুতরাং, ইউটিউবে কাজ করতে হলে কমিউনিটি গাইডলাইন এবং ইউটিউব কপিরাইট নিয়মবলী সম্পর্কে আপনাকে সুস্পষ্টভাবে জানতে হবে।
ইউটিউব কপিরাইট থেকে বাচার উপায়
YouTube -এর Community Guideline Strikes থেকে বাঁচতে অবৈধ কোন কাজ করা যাবে না। অর্থাৎ, ইউটিউবে যেই ধরণের কাজ করা নিষিদ্ধ তা করা যাবে না।
আর ইউটিউব চ্যানেলকে কপিরাইট স্ট্রাইক থেকে বাঁচাতে আপনাকে বিভিন্ন বিষয় ফলো করে কাজ করতে হবে।
সবচেয়ে কমন কিছু বিষয় নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
(১) ভিডিও কপি করা যাবে না
আপনি যদি ইউটিউবে কপিরাইট স্ট্রাইক থেকে নিরাপদ থাকতে চান, তবে প্রাথমিক কাজ হলো কারো ভিডিওর কোন অংশ আপনার ভিডিওতে প্রয়োগ করবেন না।
তবে Fair use নামের YouTube -এর একটি আলাদা পলিসি আছে, আপনি যদি ইউটিউব ফেয়ার ইউজ সম্পর্কে জানেন তবে আপনার ভিডিওতে অন্য যে কোন ভিডিওর কয়েক সেকেন্ডের ক্লিপ ব্যবহার করতে পারবেন।
Fair use on YouTube পলিসিতে এটা বৈধ।
(২) ভিডিওতে ছবি বা ইমেজ ব্যবহারে সতর্কতা
গুগলে সাধারণত যেই ছবি বা ইমেজ পাওয়া যায় তার বেশীর ভাগ ছবি বা ইমেজ কপিরাইটের আওতাধীন। আপনি যদি এই ধরণের কোন ছবি আপনার ভিডিওতে ব্যবহার করেন তবে চ্যানেলে কপিরাইট স্ট্রাইক আসতে পারে।
তাই ছবি বা ইমেজ ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। ইন্টারনেটে অনেক স্টক ফটোর ওয়েবসাইট আছে, আপনার ভিডিওতে যদি ইমেজ ব্যবহারের প্রয়োজন হয় তবে সেই সমস্ত ওয়েবসাইট থেকে ছবি সংগ্রহ কররে ব্যবহার করতে পারেন।
স্টক ফটোর ওয়েবসাইট গুলোর বিশেষ একটি সুবিধা হলো তাদের সাইটে High resolution এর quality image পাওয়া যায় এবং এগুলো সম্পূর্ণ কপিরাইট ফ্রি।
- ডাউনলোড করুনঃ কপিরাইট ফ্রি ছবি
(৩) ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ব্যবহারে সতর্কতা
ইউটিউবের জন্য ভিডিও তৈরি করতে আমরা বেশীর ভাগ কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ভিডিওতে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ব্যবহার করি।
কিন্তু ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের একটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে, যেই মিউজিকটি ব্যবহার করা হচ্ছে সেটি কপিরাইট ফ্রি কিনা।
ভিডিওতে ব্যবহৃত ব্যাকগ্রাইন্ড মিউজিকটি যদি কপিরাইটের আওতাধীন হয় তবে আপনার চ্যানেলে কপিরাইট স্ট্রাইক চলে আসার সম্ভাবনা আছে।
মিউজিক যে কোন ধরণের হতে পারে। অনেকেই ইসলামিক ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক খুঁজেন আবার অনেকেই ইমোশনাল ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক অথবা কবিতার ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক খুঁজেন।
তবে যে যাই নিয়ে কাজ করেন না কেন, অবশ্যই আপনাকে কপিরাইট ফ্রি ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক খুঁজে বের করতে হবে।
ইউটিউবের নিজস্ব মিউজিক লাইব্রেরী আছে, যেখানে লক্ষ লক্ষ কপিরাইট ফ্রি ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক পাবেন। এই মিউজিক লাইব্রেরীর এক্সেস আপনার YouTube channel dashboard থেকেই করতে পারবেন।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথাঃ
সকলেই জানি, ইউটিউব হলো Google এর একটি সেবা। আর ইউটিউব কপিরাইট নিয়মটি ইতোমধ্যই Google সুস্পষ্ট করে দিয়েছে। তবে আমাদের অনেকেই ইউটিউব স্ট্রাইক পলিসি সম্পর্কে এখনো তেমন জানে না।
এজন্য নতুনদের অনেকেই বিভিন্ন সময় ভুল করে অন্যের কন্টেন্ট নিজের ভিডিওতে ব্যবহার করে ভিডিওটি চ্যানেলে আপলোড দিয়ে দেয়। এটা আসলে কখনই করা উচিত না।
একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর অনেক কষ্ট করে একটি কন্টেন্ট তৈরি করে। তাই সেসব কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের শ্রমকে সম্মান ও ভালোবাসার সাথে গ্রহণ করা উচিত।
তাছাড়া নিজের চ্যানেলকে কপিরাইট স্ট্রাইক হতে বাঁচাতে অন্যের কন্টেন্ট অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। নাহয় নিজেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে।
আপনার যদি ভিডিও তৈরি গিয়ে অন্য কারোর ভিডিওর কোন অংশ ব্যবহার করতেই হয়, তবে ইউটিউব ফেয়ার ইউজ পলিসি সম্পর্কে জেনে নেবেন অবশ্যই।
প্রিয় পাঠক, আমি চেষ্টা করেছি ইউটিউব কপিরাইট নিয়মবলী আপনাদের সামনে তুলে ধরার জন্য। আশা করি আপনারা উপকৃত হয়েছেন ইনশাআল্লাহ।
Add comment