ওয়েব ডিজাইনডোমেইন-হোস্টিং

ওয়েবসাইট কি? ওয়েবসাইটের সুবিধা সমূহ

প্রিয় পাঠক, ওয়েব ডিজাইন নিয়ে বেশকিছু আর্টিকেল পাবলিশ করার পর একটা বিষয় বুঝতে পারলাম যে, নতুনদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা ‘ওয়েবসাইট কী’ এই বিষয়টাতেই এখনো সুস্পষ্ট নয়। অনেকেই এখনো জানেনা যে, ওয়েবসাইট কেন প্রয়োজন বা ওয়েবসাইট কি কাজে ব্যবহার করা হয়!

আপনি আপনার অজান্তেই হয়ত কোনোনা কোন ভাবে পরিচিতি-অপরিচিত ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেছেন। তবে এখনো ওয়েবসাইটের বেসিক কনসেপ্ট নিতে পারেননি বলে ওয়েবসাইট সম্পর্কে বুঝতে পারছেন না। 

আবার অনেকেই ওয়েবসাইট বিষয়ে জানেন এবং চাচ্ছেন যে আপনার জন্য একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে। চলুন জেনে নিই ওয়েবসাইটের আদ্যোপান্ত।

ওয়েবসাইট কি?

ওয়েবসাইট হলো ইন্টারনেটের সাথে যথাযথভাবে সংযুক্ত কোনো কম্পিউটারের বরাদ্দকৃত স্পেস বা লোকেশন যাতে এক বা একাধিক ওয়েব পেজ যুক্ত থাকে। যা ভিন্ন ডিভাইস থেকে ইন্টারনেট বা ল্যানের মাধ্যমে অ্যাক্সেস করা যায়।

আপনি এই মূহুর্তে যেই পেজ থেকে লেখাগুলো পড়ছেন, এটিও একটি ওয়েবসাইটের পেজ। আপনার কম্পিউটার বা মোবাইল স্কিনে যা দেখতে পাচ্ছেন তা আমরা পূর্ব থেকেই একটি সার্ভারের ডেটাবেজে যুক্ত করে রেখেছি বিধায় আপনি তা দেখতে পারছেন।

এই সমস্ত ডকুমেন্ট তৈরি করতে HTML, CSS, JavaScript, PHP ইত্যাদি ভাষা প্রয়োগ করা হয়েছে। পাশাপাশি মাইএসকিউএল ডেটাবেজ যুক্ত করা হয়েছে। আপনি মূলত আপনার কাঙ্খিত ডিভাইস থেকে ইন্টারনেটের সাহায্যে এইচটিটিপি প্রোটোকলের মাধ্যমে কন্টেন্ট গুলো ব্রাউজারে এক্সেস করতে পারছেন।

ওয়েবসাইট কিভাবে কাজ করে?

একটি ওয়েবসাইটে ভিন্ন ভিন্ন পেজ থাকতে পারে। ওয়েবসাইটের পেজগুলো মূলত এইচটিএমএল ডকুমেন্ট, যার সাথে আরো বিভিন্ন প্রোগ্রাম যুক্ত থাকে। উক্ত প্রোগ্রাম গুলোর সমন্বয়ে ওয়েবপেজে বিভিন্ন কন্টেন্ট যুক্ত করা হয়। যা এইচটিটিপি প্রোটোকলের মাধ্যমে ওয়েব সার্ভার থেকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ওয়েব ব্রাউজারে স্থানান্তরিত হয়।

ওয়েবসাইট তৈরি করতে কি কি লাগে?

একটি ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য বিভিন্ন জিনিসের প্রয়োজন হয়। নিচে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলোঃ

  • ডোমেইন নাম
  • ওয়েব হোস্টিং / ওয়েব সার্ভার
  • ওয়েবপেজ ডিজাইন

একটি ওয়েবসাইট কি কি বিষয়ের সমন্বয়ে গঠিত হয় তার বর্ণনা দেওয়া হলো।

ডোমেইন নাম কি?

ইন্টারনেটে নিদৃষ্ট কোনো রিসোর্স বা সংস্থান চিহ্নিত করার জন্য যে নাম ব্যবহৃত হয় তাকেই ডোমেইন নাম বলে। ডোমেইন নাম মূলত সংস্থার এবং ডোমেইন এক্সটেনশন এর সমন্বয়ে হয়।

উদাহরণস্বরূপঃ মনে করুন T-Shirt june আপনার সংস্থার নাম। ডোমেইন এক্সটেনশন বলতে .com / .net /.org /.info /. com.bd ইত্যাদি। আপনার সংস্থার নাম ও ডোমেইন এক্সটেনশন একত্রে মিলে যে নাম তৈরি হয় তাকে ডোমেইন নাম বলে। যেমনঃ T-Shirtjune.com

ওয়েব হোস্টিং কি?

”ওয়েবসাইট কি” এই বিষয়টি বুঝার জন্য আপনাকে ওয়েব হোস্টিং কি তা বুঝতে হবে। কেননা, ওয়েবসাইটের খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো হোস্টিং। 

একটি ওয়েবসাইটের সমস্ত কন্টেন্ট ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত যে কম্পিউটার স্পেসে সংরক্ষণ করা হয়, তাকেই ওয়েব হোস্টিং বলে। হোস্টিং মূলত কম্পিউটারের হার্ডডিক্স বা মেমোরি।

একটি ওয়েব হোস্টিংয়ে বিভিন্ন ধরণের কন্টেন্ট থাকতে পারে। যেমন: ফোল্ডার, ফাইল, ছবি, ইমেজ, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি।

ওয়েব সার্ভার কি?

ওয়েব হোস্টিংকেই সাধারণত ওয়েব সার্ভার বলা হয়। তবে ওয়েব সার্ভার মূলত এক ধরণের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারকে বুঝায়।

যার সাহায্যে ঐ সার্ভারে রাখা কোন তথ্য বা উপাত্ত, যা এইচটিটিপি প্রোটোকলের মাধ্যমে কাঙ্খিত ওয়েব সার্ভার থেকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ওয়েব ব্রাউজারে স্থানান্তরিত হয়।

আপনি যদি আর্টিকেল এর শুরু থেকে এই পর্যন্ত পড়ে থাকেন, তবে ওয়েবসাইট কি তার উত্তর পেয়ে গেছেন। ওয়েবসাইট সম্পর্কিত আরো কিছু বিষষের বর্ণনা দেওয়া হলো।

ওয়েব ডিজাইন কি?

এইচটিএমএল, সিএসএস, জাভাস্ক্রিপ্ট, পিএইচপি ভাষা ইত্যাদির সমন্বয়ে যেই ডিজাইন করা হয়, তাকেই ওয়েব ডিজাইন বলে।

ওয়েব ডিজাইন নিয়ে আমাদের একটি সিরিজ আর্টিকেল পর্ব রয়েছে। যেখানে ওয়েব ডিজাইনের সমস্ত বিষয়াদি তুলে ধরা হয়েছে। এখন থেকে দেখে নিনঃ ওয়েব ডিজাইন

ওয়েবসাইটের সুবিধা সমূহ

ওয়েবসাইট কি কাজে ব্যবহার করা হয় এবং একটি ওয়েবসাইট থেকে আপনি যা যা সুবিধা পেতে পারেন তা নিম্নরূপঃ

() ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অল্প খরচেই আপনার ব্র্যান্ড বা কোম্পানির সকল পণ্য অনলাইনে স্টোর করতে পারবেন। যা বিশ্বব্যাপী গ্রাহকদের কাছে খুব সহজেই তুলে ধরা এবং অনলাইন ভিত্তিক বাণিজ্য পরিচালনায় সবচেয়ে বড় সহায়তা করবে।

(২) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত যে কোন তথ্য এইচটিটিপি প্রোটোকলের মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোন স্থান থেকে দেখা যায়।

(৩) ওয়েবসাইটের মাধ্যমে একটি ছোট্ট ব্যবসা নিয়েও অনলাইন বাণিজ্যে অংশগ্রহণ করা যায়। যা অফলাইনে সম্ভব হয় না। তাছাড়া ওয়েবসাইট কিওয়ার্ড ভিত্তিক সার্চ ইঞ্জিনে রেংক করার কারণে টার্গেট অডিয়েন্স পাওয়া পায়। 

(৪) ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কাস্টমারদের তথ্য ডেটাবেজে খুব সহজেই গুছালো ভাবে সংরক্ষণ করা যায়।

(৫) আপনার নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইন থেকে বিভিন্ন উপায়ে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।

(৬) প্রিন্ট মিডিয়ার চেয়ে কার্যকরী এবং অল্প সময়ে যে কোন নিউজ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া যায়।

(৭) ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ডিজিটাল পণ্যের পাশাপাশি ফিজিক্যাল পণ্যও বিক্রি করা যায়।

(৮) স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সহ যে কোন শিক্ষক থেকে ঘরে বসেই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কাঙ্খিত বিষয়ের প্রশিক্ষণ নেয়া যায়।

(৯) ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যে কোন কন্টেন্ট পাবলিশ, এক্সেস করা যায়। তারমধ্যে যেমন: ফাইল, অডিও, ভিডিও, ইমেজ, ছবি, লেখা ইত্যাদি।

(০) ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিজ দেশের গন্ডি পেরিয়ে পৃথিবীর যে কোন স্থানকে টার্গেট করে বাণিজ্য পরিচালনা করা যায়।

(১১) একজন ওয়েব মাস্টার ওয়েবসাইট অপারেট করে এবং ওয়েব ডিজাইনার এই বিষয়ে সার্ভিস প্রোভাইট করে তার ওয়েব ডিজাইন ক্যারিয়ার বিল্ড করতে পারে।

এগুলো ছাড়াও আপনি একটি ওয়েবসাইট থেকে বিভিন্ন সুবিধা পেতে পারেন। ওয়েবসাইট কিভাবে কাজ করে, তার উপর আমাদের সাইটে ধারাবাহিক ভাবে আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ আরো কিছু কথাঃ

ওয়েবসাইট ভিত্তিক বিশাল এক বাণিজ্য তৈরি হয়েছে। যেই বাণিজ্যে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ কাজ করছে। প্রযুক্তির এই যুগে পার্সোনাল ব্র্যান্ড বা যে কোন কোম্পানির প্রচারণা এবং অনলাইন ভিত্তিক বাণিজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে নিজস্ব ওয়েবসাইট ছাড়া এসবের কথা চিন্তাও করা যায় না।

ওয়েবসাইট খুবই সম্ভাবনাময় একটি সেক্টর। সমাজ জীবনে ক্যারিয়ার উন্নয়ন এবং ব্যকারত্ব রোধে ওয়েবসাইট অপর্চুনিটি প্রবল। তাই ওয়েবমাস্টার এবং ওয়েব ডিজাইনারদের জন্য উপযুক্ত সময় এখনই।

উন্নত মানের ক্যারিয়ার গঠনে ওয়েবসাইট সেক্টরে ওয়েবমাস্টার বা ওয়েব ডিজাইনার হয়ে কাজ আপনিও শুরু করতে পারেন।

আমি আশা করছি, ”ওয়েবসাইট কি / ওয়েবসাইট তৈরি করতে কি কি লাগে / ওয়েবসাইটের সুবিধা” গুলো সম্পর্কে আপনি সুস্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন।

এই বিষয়ে যদি আপনার কোন প্রশ্ন থাকে তবে এখনই কমেন্ট করুন। আইটি নির্মাণ এর ইংরেজি ভার্সন পড়ুনঃ ItNirman English – সবাইকে ধন্যবাদ।

IT Nirman

যত জ্ঞান-ধন করেছি অর্জন জীবনের প্রয়োজনে, তার সবটুকুই বিলাতে চাই সৃষ্টির কল্যাণে।

Related Articles

6 Comments

  1. মনে
    করেন কোন কারণে ফেসবুক ডাউন হয়ে গেল বা কোন কারণে ফেসবুক কোঃ তাদের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দিল।
    কিন্তু ফেসবুকে আমার অনেক ফলোয়ার ছিল।
    কিন্তু ফেসবুক তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার পরও আমি কি আমার ফেসবুক ফলোয়ারদের সাথে ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে আগের মত যোগাযোগ করতে পারবো?
    প্লিজ উত্তরটা দিয়ে ধন্য করুন

    1. ফেসবুকের ফলোয়ার গুলো ফেসবুকেই থাকবে। এই ফলোয়ার কনভার্ট করে আপনার ওয়েবসাইটের ফলোয়ার হিসেবে নিতে পারবেন না। আপনি যদি নিজের ওয়েবসাইটের ফলোয়ার বাড়াতে চান, তবে আপনার ওয়েবসাইটে আপনাকে কাজ করতে হবে। আশাকরি উত্তর পেয়েছেন প্রিয়!

  2. আরেকটি বিষয় জানতে চাই একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর জন্য একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে সর্বনিম্ন কত টাকা খরচ লাগতে পারে ?

    1. প্রিয় পাঠক! শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য ওয়েবসাইট তৈরির খরচ মোটামুটি ৫ হাজার টাকার বেশী পড়বে। তবে ওয়েবসাইটের ফিচার অনুযায়ী খরচের বিষয়টা আরও বেশী হতে পারে। আপনার ওয়েবসাইট তৈরির প্রয়োজন হলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। ধন্যবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button
× How can I help you?

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker!