মোবাইল ব্যবহারকারীদের অনেকেই প্রশ্ন করেন মোবাইল স্লো হলে কি করব? এই আর্টিকেলটি তাদের জন্যই, যারা মোবাইল ফাস্ট করার উপায় খুঁজছেন।
বর্তমানের প্রায় প্রতিটি মানুষের হাতে হাতেই সাধারণ বাটন মোবাইলের পাশাপাশি স্মার্টফোন রয়েছে।
বাটন মোবাইল গুলো সাধারণত স্লো হতে দেখা যায় না। তবে স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই ধরণের সমস্যা দেখা যায়।
বাজারে বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেম এর স্মার্টফোন রয়েছে। প্রায় সব ধরণের স্মার্টফোন যে কোন সময় স্লো হতে পারে।
Smartphone বলতে আমি এখানে Android Phone, iPhone, Windows Phone এবং Amazon’s Fire Phone ইত্যাদি সবগুলোর কথাই বুঝাচ্ছি।
স্মার্টফোন ব্যবহার করতে গিয়ে আমরা বিভিন্ন সময় দেখি, আমাদের স্মার্টফোনটি কাঙ্খিত পারফর্মেন্স দিচ্ছে না বা স্লো কাজ করছে।
আবার অনেক সময় স্মার্টফোন গুলো কাজের প্রেসার যথাযথভাবে প্রসেস করতে না পেরে হ্যাং করতেও দেখা যায়।
Smartphone এর পারফর্মেন্স পেনাল্টি বা স্লো হওয়া অথবা হ্যাং হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে।
যারা জানেন না মোবাইল স্লো হলে কি করবেন তারা অবশ্যই কারণগুলো জেনে নিন।
মোবাইল স্লো হয় কেন?
বর্তমানে স্মার্টফোনের সবচেয়ে বড় একটি সমস্যা হলো স্লো হয়ে যাওয়া।
মোবাইল নতুন ক্রয় করার পর শুরুর দিকে সবচেয়ে বেটার পারফর্মেন্স দিলেও ব্যবহার করতে করতে একটি সময় মোবাইলটি আর আগের মতো পারফর্মেন্স করে না।
এর পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে।
আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে মোবাইল স্লো হওয়ার কারণ গুলো বর্ণনার পাশাপাশি মোবাইল ফাস্ট করার উপায় গুলোও নিচে তুলে ধরছি।
মোবাইল স্লো হলে করণীয়
আমি এখন আপনাদের সাথে যেই বিষয়গুলো শেয়ার করবো, আপনারা যদি সেগুলো ঠিকঠাক মতো করতে পারেন, তবে মোবাইল স্লো সমস্যার সমাধান পেতে পারেন।
পড়ার সাজেশনঃ
► মোবাইল ইন্টারনেট স্লো? দুইগুণ ফাস্ট করুন
► ঘরে বসে মোবাইলে আয় করার সেরা উপায়
মোবাইল স্লো হলে কি করবেন তা নিচে বর্ণনা করা হলো।
১. অপারেটিং সিস্টেম আপডেট
মোবাইল ফোন স্লো হওয়ার অন্যতম কারণ হলো অপারেটিং সিস্টেমকে আপডেট না রাখা।
যে কোন Mobile এর OS সবসময় আপডেট রাখা অত্যন্ত জরুরি বিষয়।
মোবাইল Operating System কে কিছুদিন পর পর কোম্পানি কর্তৃক আপডেট দেওয়া হয়।
এর কারণ হলো উক্ত অপারেটিং সিস্টেম এর যত বাগ এবং ল্যাগ আছে তা সমাধান (Fix) করে হালনাগাদ করা হয়।
এজন্য মোবাইল ফোন স্লো হলে করণীয় হলো মোবাইল এর Operating System হালনাগাদ সংস্করণ গুলো ব্যবহার করা।
আপনার ফোনটি যদি Operating System এর কোন বাগ বা ল্যাগ এর স্লো হয়ে থাকে, তবে আপডেট দেওয়ার ফলে তা সমাধান হয়ে যাবে।
২. অপ্রয়োজনীয় অ্যাপস Uninstall করা
মোবাইল যতই দামী হোকনা কেন, তার শক্তিক্ষমতা সীমিত করা হয়েছে।
আমাদের হাতের স্মার্টফোন গুলো স্লো হওয়ার পেছনে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপস অনেক বেশী দায়ী।
অনেক মোবাইল ব্যবহারকারী আছে এমন, তার মোবাইলের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশী অ্যাপস একসাথে সেই মোবাইলে ইনিস্টল করে।
অপ্রয়োজনীয় অ্যাপস প্রায় সব ধরণের মোবাইলকে স্লো করে দেয়।
অ্যাপল, উইন্ডোজ এবং এন্ড্রয়েড ফোন স্লো হওয়ার পেছনেও মাত্রাতিরিক্ত অ্যাপসকে দায়ী বলব।
সুতরাং, যারা প্রশ্ন করেন মোবাইল স্লো হলে কি করব?
তাদেরকে বলবো, আপনার ফোনে যত অপ্রয়োজনীয় অ্যাপস রয়েছে তা এখনই আনইনস্টল (Uninstall) করুন।
৩. মেমোরি বা স্টোরেজ ফুল
আমাদের প্রায় মানুষের মোবাইলের মেমোরি বা স্টোরেজকে বিভিন্ন কন্টেন্ট দিয়ে সবসময় ফুল করে রাখি।
স্টোরেজ ফুল রাখাও মোবাইল স্লো হওয়ার বিশেষ একটি কারণ।
পড়ার সাজেশনঃ
► স্টুডেন্ট অনলাইন ইনকাম করার সেরা ৫ উপায়
► Student Apps | ছাত্র-ছাত্রীদের প্রয়োজনীয় ৪ টি মোবাইল অ্যাপস
Operating System এর পাশাপাশি মোবাইলে থাকা অ্যাপস গুলো ঠিকঠাক মতো কাজ করতে স্টোরেজ এর প্রয়োজন হয়।
আপনার মোবাইলে এর স্টোরেজ যখন বিভিন্ন কন্টেন্ট দিয়ে পূর্ণ হয়ে যায়, তখন মোবাইলটি স্লো হওয়ার পাশাপাশি গরম হতেও দেখবেন।
অনেক সময় স্টোরেজ পূর্ণ হওয়ায় Operating System ঠিক মতো কাজ করতে পারেনা।
তাই মোবাইল কিছুক্ষণের জন্য অকার্যকর অবস্থায় থাকে বা হ্যাং হয়।
স্টোরেজ এর জন্য মোবাইল স্লো হলে কি করবেন?
উত্তর হলো আপনার স্মার্টফোনের স্টোরেজ কখনই কন্টেন্ট দিয়ে পূর্ণ করে রাখবেন না।
কন্টেন্ট বলতে, ছবি, অডিও, ভিডিও, পিডিএফ সহ মোবাইলে রাখা যায় এমন সব কিছুই।
স্টোরেজ এর জন্য মোবাইল ফোন স্লো হলে করণীয় হলো আপনাকে মোবাইলের স্টোরেজ খালি করতে হবে।
তাহলেই মোবাইল স্লো সমস্যার সমাধান পাবেন।
৪.মোবাইল ভাইরাস রোধ
মোবাইল স্লো হয়ে যাওয়ার আরেকটি বড় কারণ হলো ভাইরাস।
মোবাইলে বিভিন্ন ভাবে ভাইরাসের আক্রমণ হয়।
তারমধ্যে দুটি প্রক্রিয়ায় সহজেই আপনার মোবাইলে ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে।
তারমধ্যে যেমনঃ
ভাইরাসে আক্রান্ত কোন ডিভাইস থেকে ফাইল আনা-নেওয়া করা। হতে পারে সেটা এক মোবাইল থেকে আরেক মোবাইলে, অথবা কোন কম্পিউটার / ল্যাপটপ থেকে।
অনেকে সময় ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন ফাইল ডাউনলোড করার সময়ও ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে।
একটি ভাইরাস যে কোন স্মার্টফোনকে কয়েকগুণ স্লো করে দিতে পারে।
পড়ার সাজেশনঃ
► অনলাইনে ইনকাম বাংলাদেশী সাইট
► মোবাইল গরম হয় কেন? মোবাইল গরম হলে কি করনীয়?
তাই ভাইরাসে আক্রান্ত স্লো ফোন ফাস্ট করার উপায় হলো মোবাইলে এন্টিভাইরাস ব্যবহার করা বা অন্য কোন প্রক্রিয়ায় মোবাইল থেকে ভাইরাস ডিলেট করা।
যেই বন্ধুরা ডিজ্ঞাসা করেন মোবাইল স্লো হলে কি করবেন, তাদের এন্ড্রয়েড ফোন স্লো হলেই ভাইরাসের বিষয়টি প্রথমেই চেক করা উচিত।
৫. গেজেট রিমুভ
মোবাইল স্লো হওয়ার কারণ গুলোর মধ্যে বড় একটি কারণ হলো, আমরা আমাদের মোবাইলটিকে সাজাতে গিয়ে বিভিন্ন ধরণের গেজেট ব্যবহার করি।
গেজেট বলতে, টেম্পারেচার মিটার, ইন্টারনেট স্পিড মিটার, ডাবল ক্লক, ওয়েদার বক্স, লাইভ ওয়ালপেপার, এবং গেম বক্স ইত্যাদি জাতীয় বিভিন্ন অ্যাপ।
এই ধরণের অ্যাপগুলো অতিমাত্রায় মোবাইল ফোন স্লো করে দেয়।
এজন্য মোবাইল স্লো হলে করণীয় হলো আপনার মোবাইল থেকে এই সমস্ত গেজেট Uninstall করে ফেলা।
৬. পাওয়ার হাংগার অ্যাপ ডিজেবল
স্মার্টফোনে বিভিন্ন ধরণের অ্যাপস থাকে। এর মধ্যে অনেক অ্যাপস রয়েছে, যেগুলো তুলনামূলক ভাবে ব্যাটারি পাওয়ার অনেক বেশী ব্যবহার করে।
এটিকেও মোবাইল স্লো হওয়ার কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে।
এই ধরণের পাওয়ার হাংগার অ্যাপস প্রায় প্রতিটি মোবাইলেই রয়েছে।
আপনার মোবাইলের সেটিং অপশনে থেকে ব্যাটারি অপশনে যান এবং অপ্রয়োজনীয় পাওয়ার হাংগার অ্যাপস গুলোকে আনইনস্টল অথবা ডিজেবল করুন।
৭. এক্সটারনাল মেমোরি ব্যবহার
অনেক সময় আমরা আমাদের মোবাইলের স্টোরেজ বৃদ্ধিতে এক্সটারনাল মোমোরি বা আলাদা মেমোরি ব্যবহার করি।
তবে প্রায় সময় এমন হয় যে, এক্সটারনাল মোমোরি গুলো ব্যবহার করার কারণে মোবাইল অনেক স্লো হয়ে যায়।
মোবাইল ব্যবহার করার অভিজ্ঞতায় এই সমস্যায় আমি বেশ কয়েকবার পড়েছি।
আপনি যদি এক্সটারনাল মোমোরি ব্যবহার করেন এবং আপনার মোবাইল ফোন স্লো হলে করণীয় হলো প্রথমেই এক্সটারনাল মোমোরিটি মোবাইল থেকে খুলে ফেলা।
পড়ার সাজেশনঃ
► লেখালেখি করে আয় করার নিয়ম
► যে কোন এন্ড্রয়েড মোবাইল সম্পর্কে তথ্য জানার উপায়
এক্সটারনাল মোমোরিটি খোলার পর যদি মোবাইল স্লো সমস্যার সমাধান হয়ে যায়, তবে তো আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
আর যদি এক্সটারনাল মোমোরি খুলে ফেলার পরও মোবাইল স্লো মনে হয়, তবে হয়ত অন্য কারণ গুলোর যে কোন একটি হবে।
৮. একাউন্ট Sync বন্ধ করা
মোবাইল স্লো হওয়ার কারণ গুলোর মধ্যে একাউন্ট Sync আরেকটি বড় কারণ।
আমরা একটি মোবাইল দিয়ে বিভিন্ন ডিজিটাল সেবা গ্রহণ করার জন্য বিভিন্ন একাউন্টে প্রবেশ করি।
যেমন: জিমেইল, ফেসবুক, গুগল, মেসেঞ্জার ইত্যাদি সহ আরো বিভিন্ন ধরণের একাউন্ট হতে পারে।
এই একাউন্ট গুলো আমাদের মোবাইলে Sync হিসেবে স্থাপন করি।
আমাদের মোবাইল ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন টাইপের একাউন্ট মোবাইলে এত বেশী Sync করি, যা মোবাইলকে স্লো করে দিতে সক্ষম।
আপনার মোবাইলে কত ধরণের একাউন্ট সিঙ্ক করা হয়েছে তা জানার জন্য Setting অপশনে যান।
তারপর Account & Sync তে যান, তবেই সমস্ত Sync করা একাউন্ট গুলো একসাথে দেখতে পাবেন।
সেখান থেকে আপনি Sync করা একাউন্ট গুলো মুছে ফেলতে পারবেন।
৯. ফ্যাক্টরি রিসেট
মোবাইল স্লো হলে কি করবো বা করণীয় কি এই বিষয়টা অনেকেই বুঝিনা।
মনে মনে তখন ভাবতে থাকি, মোবাইলটা হয়ত নষ্ট হয়ে গেছে। তারা এই বিষয়টি ফলো করুন।
উপরোল্লিখিত কাজ গুলো করার পরও যদি আপনার মোবাইল অতিমাত্রায় স্লো মনে হয়, তবে মোবাইলটির ফ্যাক্টরি রিসেট দেওয়া খুবই জরুরি।
ফ্যাক্টরি রিসেট দেওয়ার আগে অবশ্যই আপনার ফোনের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ডাটাকে ব্যাপআপ করতে ভুলবেন না।
ফ্যাক্টরি রিসেট এমন একটি ব্যাপার, যা মোবাইলের সমস্ত ডাটা ডিলেট করে দেয়।
তারপর আপনার স্মার্টফোনটিকে আবার নতুন করে সেটিং করতে হবে।
যে কোন মোবাইলে ফ্যাক্টরি ডাটা রিসেট করার পর মোবাইলটি নতুন অবস্থায় যেমন ছিল, ঠিক তেমনি হয়ে যায়।
১০. ব্যাটারি পরিবর্তন
স্মার্টফোনের ব্যাটারির লো বোল্টেজ এর জন্যও মোবাইল ফোন স্লো হয়ে থাকে।
অনেক সময় এমন হয় যে, ব্যাটারি ব্যাপআপ কম দেয় এবং মোবাইলও স্লো কাজ করে।
পড়ার সাজেশনঃ
► ফেসবুকে কিভাবে টাকা আয় করা যায়?
► কিভাবে ব্লগিং শুরু করবো?
আবার অনেক ক্ষেত্রে ব্যাটারি ব্যাকআপ ঠিক থাকার পরও ব্যাটারির বোল্টেজ কমে যায়।
তাই স্মার্টফোনটিকে ব্যাটারি থেকে যথাযথ বোল্টেজ প্রদান না করায় মোবাইল স্লো কাজ করতে পারে।
এক্ষেত্রে মোবাইল স্লো হলে করণীয় হলো আপনার মোবাইলের ব্যাটারিটি পরিবর্তন করে নেওয়া।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথাঃ
একটি স্মার্টফোন ক্রয় করার পর শুরুতে যেই পারফর্মেন্স দেয়, সময়ের সাথে সাথে সেই পারফর্মমেন্স হ্রাস পেতে থাকে।
এটা প্রায় প্রত্যেকটি জিনিসের ক্ষেত্রেই প্রয়োজ্য। আমাদের কর্ম ক্ষমতাও চিরকাল এক থাকবে না।
অনেক বন্ধুরা জানতে চান মোবাইল স্লো হলে কি করবেন? আমি চেষ্টা করেছি সেই বন্ধুদের প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেওয়ার জন্যে।
মোবাইল স্লো হয় কেন এই বিষয়টি তুলে ধরার পাশাপাশি মোবাইল ফাস্ট করার উপায় সম্পর্কেও বলেছি।
এমনকি মোবাইল স্লো সমস্যার সমাধান কিভাবে করতে হয় তাও বলেছি।
আশাকরি মোবাইল স্লো হলে করণীয় বিষয়গুলো ফলো করার মাধ্যমে সকলেই উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ।
তবে হ্যাঁ, আপনার মোবাইল যদি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে স্লো হয়ে থাকে, তবে অবশ্যই যান্ত্রিক ত্রুটি সমাধান করা জরুরি।
এই বিষয়ে যদি আপনার আরো কোন প্রশ্ন থেকে থাকে, তবে অবশ্যই কমেন্ট করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ
Add comment