জন্ম নিবন্ধন সনদ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ভাবে কাজে লাগে। একটি সময় ছিল যখন হাতে লিখে জন্ম নিবন্ধন দেওয়া হতো। কিন্তু সময়ের আবর্তনে হাতে লেখা জন্ম নিবন্ধন গুলো এখন আর কোনো প্রতিষ্ঠানই একসেপ্ট করতে চায় না। এজন্য সকল পুরাতন জন্ম সনদকে অনলাইন অথবা ডিজিটাল করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। তাই অনেকেই প্রশ্ন করেন হাতে লেখা জন্ম নিবন্ধন ডিজিটাল করার নিয়ম কি, অথবা পুরাতন জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করার নিয়ম কি?
হাতে লেখা জন্ম নিবন্ধনকে এনালগ জন্ম নিবন্ধন বলা হয়। আপনি যদি ইতোমধ্যেই এনালগ পদ্ধতিতে জন্ম নিবন্ধন করে থাকেন এবং সেই জন্ম নিবন্ধনে যদি কোনো প্রকার ভুল না থাকে তবে আপনার জন্ম নিবন্ধন ডিজিটাল করার আবেদন করা খুবই জরুরি।
আজ আমি এই আর্টিকেলে জন্ম নিবন্ধন ডিজিটাল করার পদ্ধতি বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরেছি। তাছাড়া, পুরাতন জন্ম নিবন্ধন ডিজিটাল করতে কি কি লাগে তাও আপনাকে পর্যায়ক্রমে বলে দেবো।
- আরও পড়ুনঃ অনলাইনে নতুন জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম।
অনলাইন থেকে যে কোনো সময় জন্ম নিবন্ধন সনদ ডাউনলোড করার জন্য আপনার জন্ম নিবন্ধনকে ডিজিটাল করা প্রয়োজন। কিভাবে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করা যায় চলুন এর আদ্যোপান্ত জেনে নেওয়া যাক।
জন্ম নিবন্ধন ডিজিটাল করার নিয়ম
আপনার এনালগ জন্ম নিবন্ধনকে ডিজিটাল করতে হলে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনের পুনর্মুদ্রণ করার উদ্দেশ্যে আবেদন করতে হবে। পুনর্মুদ্রণ বলতে আপনার হাতে লেখা জন্ম নিবন্ধনের তথ্য গুলোকে হুবহু অনলাইনে সাবমিট করতে হবে।
আমি পুরো বিষয়টিকে স্টেপ বাই স্টেপ টিউটোরিয়াল আকারে নিচে তুলেছি। যা আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন। আপনার জন্ম নিবন্ধন পুনঃমুদ্রন করার জন্য birth certificate এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট https://bdris.gov.bd/br/reprint/add এই লিংকে প্রবেশ করুন। অথবা Google -এ সার্চ করুন Bangladesh birth certificate লিখে।
ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর নিচের স্টেপ গুলো মনোযোগ সহকারে ফলো করুন।
স্টেপ -০১
পুরাতন জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করার নিয়ম
ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশ করার পর উপরের ছবির মতো একটি ওয়েবসাইট ওপেন হবে। ওয়েবসাইটটি জন্ম নিবন্ধন বিষয়ক হওয়ায় এখানে জন্ম নিবন্ধনের উপর বিভিন্ন সেবা দেখতে পাবেন।
আপনি ওয়েবসাইট হেডারের ‘জন্ম নিবন্ধন’ মেনু থেকে ”জন্ম নিবন্ধন সনদ পুনঃমুদ্রন” মেনুতে ক্লিক করুন।
প্রত্যেকটা ছবিতে তীর চিহ্ন দিয়ে স্টেপগুলো দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে। মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করুন।
স্টেপ -০২
হাতে লেখা জন্ম নিবন্ধন ডিজিটাল করার নিয়ম
দ্বিতীয় ধাপে এমন একটি পেজ ওপেন হবে, যেখানে লেখা থাকবে ’জন্ম নিবন্ধন এর প্রতিলিপির জন্য আবেদন।’ এর নিচে দুটি খালিঘর রয়েছে।
খালিঘর গুলোতে জন্ম নিবন্ধন নম্বর এবং জন্ম তারিখ দিতে হবে। এটি অবশ্যই আপনার হাতে লেখা জন্ম নিবন্ধন থেকে হুবহু কপি করে লিখবেন।
জন্ম নিবন্ধন নম্বর অবশ্যই ১৭ ডিজিটের হতে হবে। উদাহরণস্বরূপঃ জন্ম নিবন্ধন যাচাই 19860915428117351 নম্বর এমন। নম্বর লিখতে গিয়ে কোনো প্রকার ভুল করা যাবে না।
সঠিক তথ্য দিয়ে “অনুসন্ধান” বাটনে ক্লিক করলেই আপনার আইডি নম্বর, জন্ম তারিখ, নিজের নাম ও বাবা -মায়ের নাম দেখতে পাবেন।
উল্লেখ্য, অনেকের ক্ষেত্রে এমন হয় যে, জন্ম নিবন্ধন নম্বর এবং জন্ম তারিখ দেওয়ার পরও কোনো রেজাল্ট প্রদর্শন করে না। এটি মূলত ভূল তথ্য প্রদানের কারণে এমন হয়।
- আরও পড়ুনঃ অনলাইনে জমির মালিকানা বের করার উপায়।
আপনার জন্ম নিবন্ধনটি হাতে লেখার কারণে অনেক সময় লেখায় ভুল তথ্য উঠে যায়। যে কারণে ওয়েবসাইটের ডেটাবেজে থাকা তথ্যের সাথে হাতে লেখা জন্ম নিবন্ধনের তথ্য মিলে না।
এতে বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। ভুল তথ্যের কারণে আপনি হয়তো নিজে অনলাইনের মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন ডিজিটাল করতে পারবেন না। তবে আপনি যদি হাতে লেখা জন্ম নিবন্ধনটি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ অথবা সিটি কর্পোরেশনের কার্যালয়ে নিয়ে যান তবে তারাই আপনাকে সঠিক তথ্যের মাধ্যমে আপনার জন্ম নিবন্ধনকে ডিজিটাল করে দেবে।
আমারটা যেহেতু তথ্যের ভিত্তিতে রেজাল্ট প্রদর্শন করেছে, সেহেতু আমি “নির্বাচন করুন” বাটনে ক্লিক করে পরবর্তী স্টেপে চলে যাব। অবশ্যই স্টেপগুলো ফলো করুন।
স্টেপ -০৩
জন্ম নিবন্ধন এর প্রতিলিপির জন্য আবেদন
তৃতীয় ধাপে আপনাকে কিছু তথ্য দিতে হবে। যেমন আপনার দেশ, বিভাগ, জেলা, উপজেলা / সিটি কর্পোরেশন, ক্যান্টনমেন্ট, পৌরসভা / ইউনিয়ন, অফিস, নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর এবং ইমেইল ইত্যাদি।
এখানে একটি লক্ষ্যনীয়, আবেদনকারী যদি আপনি নিজে হন তবে “নিজ” সিলেক্ট করবেন। আর যদি আপনার জন্ম নিবন্ধনের আবেদরকারী অন্য কেউ হয়, তবে যথাপোযুক্ত ঘর সিলেক্ট করে তার জন্ম নিবন্ধন নম্বর এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিতে হবে।
তারপর আবেদনকারীর মোবাইল নম্বর দিতে হবে। আবেদনকারীর যদি ইমেইল / জিমেইল থাকে তবে খালিঘরে দিয়ে দেবেন, আর যদি ইমেইল / জিমেইল না থাকে তবে Email -এর ঘর ফাকা রাখবেন।
সঠিকভাবে তথ্য দেওয়ার পর “সাবমিট” বাটনে ক্লিক করুন।
স্টেপ -০৪
আপনার ডকুমেন্টটি সাবমিট হয়ে গেলে চতুর্থ ধাপে উপরের ছবির মতো একটি পেজ ওপেন হবে। এই পেজে কিছু তথ্য দেখাবে। যেমন, শুরুতেই দেখাচ্ছে ’আবেদনটি সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে দাখিল হয়েছে।’ তারপর আপনার আবেদন পত্রের নম্বর সহ আরো কিছু কথা বলা রয়েছে।
আবেদন পত্রের নম্বরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি পরবর্তী সময়ে কাজে লাগবে। তাই যত্ন করে খাতায় লিখে ফেলুন।
নিচে “আবেদন পত্র প্রিন্ট’ নামের একটি বাটন দেখতে পাচ্ছেন। এখানে ক্লিক করলে আপনার জন্ম নিবন্ধন অনলাইন কপি ডাউনলোড হয়ে যাবে pdf আকারে। এটিকে প্রিন্ট করে নেবেন।
আবেদনপত্রটি প্রিন্ট করে আপনার সংশ্লিষ্ট নিবন্ধকের কার্যালয় অর্থাৎ ইউনিয়ন পরিষদ অথবা সিটি কর্পোরেশন অফিসে জমা দিতে হবে। কোনো কারণে যদি আবেদনপত্রটি প্রিন্ট করতে না পারেন তবে আবেদন পত্রের নম্বরটি উক্ত অফিসে জমা দিতে হবে।
ইউনিয়ন পরিষদ অথবা সিটি কর্পোরেশন অফিসে আপনার আাবেদন পত্রটি জমা দেওয়ার পর তারা আপনার আবেদনপত্রে প্রয়োজনীয় স্বাক্ষর এবং সীল দিয়ে দেবে।
এজন্য আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দিতে হবে। আবেদনপত্র জমা ও ফি প্রদান করার মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ আপনার এনালগ জন্ম নিবন্ধনকে ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধনে কনভার্ট করে দেবে।
জন্ম নিবন্ধন ফি কত টাকা তা আপনি আপনার সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন অথবা ইউনিয়ন পরিষদের অফিস থেকে জেনে নিতে পারবেন।
যাইহোক, এটাই মূলত হাতে লেখা পুরাতন জন্ম নিবন্ধন ডিজিটাল করার নিয়ম।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথাঃ
আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদটি যদি ডিজিটাল থাকে, তবে আপনার জন্ম নিবন্ধন যে কোনো প্রতিষ্ঠান নির্দ্বীধায় একসেপ্ট করবে। তাছাড়া, যে কোনো সময় অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন তথ্য যাচাই করা থেকে শুরু করে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন কপি ডাউনলোডও করতে পারবেন।
একটি বিষয় মনে রাখবেন, জন্ম নিবন্ধন প্রতিলিপির জন্য আবেদন করার ১৫ দিনের ভেতরেই আপনার সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন অথবা ইউনিয়ন পরিষদের অফিসে আবেদনপত্রের প্রিন্ট কপিটি নিয়ে যোগাযোগ করবেন।
প্রিয় পাঠক, আমি আশা করছি আমাদের দেখানো জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করার নিয়মটি ফলো করে আপনি সফল হয়েছেন। এই বিষয়ে যদি আপনার আরো কোনো প্রশ্ন থাকে তবে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। আমি যথাসাধ্য আপনার সহযোগি হবো ইনশাআল্লাহ।
কিভাবে ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন চেক করতে হয় তার উপর চমৎকার আর্টিকেল লিখেছেন ভাই
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে