সাধারণ জ্ঞান

বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা

বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতাঃ প্রত্যেক জাতিগোষ্ঠী তার জাতিসত্ত্বার পরিচয় বা ইতিহাস জেনে গর্ববোধ করে। আমরা মানুষ, বাঙালি এবং বাংলাদেশী। আমাদেরও রয়েছে একটি গৌবরময় ইতিহাস ও ঐতিহ্য। পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটি ইতিহাস ঘটনার অনুসন্ধানকৃত, গবেষণালব্ধ এবং প্রতিষ্ঠিত সত্যকে উপস্থাপন করে। আজ আমরা বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা সম্পর্কে জানবো।

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ব্যাখ্যা

’ইতিহাস‘ শব্দটির উৎপত্তি ‘ইতিহ’ শব্দ থেকে; যার অর্থ ’ঐতিহ্য’। ঐতিহ্য মূলত অতীতের অভ্যাস, শিক্ষা, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি যা ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষিত থাকে। আর এই ঐতিহ্যগুলো এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের কাছে পৌঁছে যাওয়া বা চলতে থাকার নাম ইতিহাস। এক কথায় বলতে গেলে ‘ঐতিহ্যের বস্তুনিষ্ঠ বিবরণকেই ইতিহাস বলে।

প্রত্যেকটি ঐতিহ্যই ইতিহাসের পূর্বক্ষণ। আমাদের পূর্ব পুরুষেরা জীবনে যা অর্জন করেছে, তা আমাদের জন্য ঐহিত্যস্বরূপ। এই ঐতিহ্যগুলোই পরবর্তী প্রজন্ম বা আমাদের সন্তানদের কাছে ইতিহাস।

পড়ার সাজেশনঃ
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব কে? যুক্তি-বিতর্ক এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত
কম্পিউটার কি? আধুনিক কম্পিউটারের জনক কে?

বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস এবং বিশ্বসভ্যতাকে জানতে হলে ইতিহাসের উপাদান সম্পর্কে ধারণা রাখা জরুরি।

ইতিহাসের উপাদান বলতেঃ যেসব তথ্য প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে ঐতিহাসিক সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা যায়, তাকেই ইতিহাসের উপাদান বলা হয়। ইতিহাসের উপাদানকে দুই ভাগে বিভিক্ত করা যায়।

() লিখিত উপাদান
(২) অলিখিত উপাদান।

ইতিহাসের এই দুটি উপাদানের মধ্যে লিখিত উপাদানটি অনেকটা নিরাপদ। এটা সত্যের ওপর যুগ যুগ ধরে প্রতিষ্ঠিত থাকে। অলিখিত উপাদানগুলো সহজেই বিকৃত হয়ে যায়। যার কারণে এই ধরণের ইতিহাসের সত্যতা প্রমাণে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। আমরা অবশ্যই ইতিহাসের লিখিত উপাদানের ওপর আলোচনা করবো। যাইহোক, আমাদের আজকের বিষয় হলো বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতাকে জানা।

বাংলাদেশের ইতিহাস

বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা
বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা

ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য ও প্রভাবঃ এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে আমাদের বাংলাদেশের অবস্থান। প্রাচীনকাল থেকে অনেকবার বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদল হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের সীমারেখাতেও অনেক পরিবর্তন হয়েছে।

বাংলাদেশে প্রায় দুইশত বছর ইংরেজ ঔপনিবেশিত শাসন চলেছে। ইংরেজরা ভারতবর্ষ থেকে চলে যাবার পর বিভিন্ন কারণে ৯৪৭ সালে বাংলা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। বাংলার পশ্চিমাংশ হয় ভারতের অন্তরভূক্ত আর পূর্বাংশ হয় পাকিস্তানের অন্তরভূক্ত।

পাকিস্তানের অন্তর্গত বাংলাদেশের প্রথম নাম হলো পূর্ব বাংলা, যা পরবর্তীতে পূর্ব পকিস্তান নামে নামান্তর করা হয়। বাংলাদেশ পাকিস্তানের অধীনে ছিল প্রায় ২৩ বছর।

পাকিস্তানের অধীনে থাকাকালীন সময়েও বাংলাদেশ বিভিন্ন ভাবে নিপীড়িত ছিল। জুলুম ও শোষনের বুঝা ছাপিয়ে দেওয়া হয় তৎক্ষালীন পূর্ব পাকিস্তানের ওপর।

বাংলার দামাল ছেলেরা শত বাঁধা ও তাবেদারীর শিকল রুখে দিয়ে ১৯৭ সালে মহান মুক্তযুদ্ধের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে একটি স্বাধীন সর্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত করে। তারপর এই রাষ্ট্রের নাম রাখা হয় বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের মোট আয়তন ,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশের উত্তর অঞ্চলে রয়েছে বিশাল হিমালয় পর্বতমালা, দক্ষিণ অঞ্চলে বঙ্গোপসাগর, দক্ষিণ-পূর্বে মায়ানমার আর বাকি সীমারেখা ঘিরে রেখেছে ভারত।

গ্রাফিক্স ডিজাইন কি এবং গ্রাফিক্স ডিজাইন কত প্রকার?

বাংলাদেশের আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ। উর্বব ভূমির কারণে দেশটিতে কৃষিভিত্তিক সমাজ গড়ে উঠেছে। পাশাপাশি ভৌগোলিক পরিবেশ দেশবাসীকে কোমল ও শান্ত স্বভাবের করেছে।

বাংলাদেশের ইতিহাসের বিশদ বিবরণ অন্য একটি আর্টিকেলে করার চেষ্টা করবো। এই আর্টিকেলটি যেহেতু ”বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতার” ইতিহাস নিয়ে, সেহেতু সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েই ’বাংলাদেশের ইতিহাস’ শেষ করা হলো। 

বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাস

বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা
বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা

আদিম যুগের মানুষ কৃষিকাজ কি তা জানত না। বনে বনে ঘুরে ফলমূল সংগ্রহ করে তা ভক্ষণের মাধ্যমেই জীবন চালাত। খাদ্যের সন্ধান করাই ছিল তাদের একমাত্র লক্ষ্য।

এরপর মানুুষ পাথর ভেঙে ঘষে ঘষে ধারালো অস্ত্র তৈরি করতে শেখে। এটাই ছিল তাদের একমাত্র হাতিয়ার। মানুষ তখন দলবদ্ধভাবে পাথরের তৈরি এই হাতিয়ার দিয়ে পশু শিকার করতো। সেই যুগকে পাথরের যুগ বলা হয়।

পাথরের যুগের অবসান ঘটে কৃষিভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। মানুষ যখন কৃষি কাজের গুরুত্ব বুঝতে পারে তখন তারা কৃষির প্রয়োজনে নদীর তীরে বসবাস শুরু করে। এ যুগকে বলা হয় নবপলীয় যুগ।

এরপর মানুষ ঘর-বাড়ি নির্মাণ করতে শেখে। আগুনের ব্যবহার বুঝতে পারে। এভাবেই মানবসভ্যতার শুরু। মানবসভ্যতা অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিল মিশরীয় সভ্যতার মাধ্যমে।

মিশরীয় সভ্যতাঃ

আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর-পূর্ব অংশে ইজিপ্ট বা মিশর। খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ থেকে ৩২০০ অব্দ পর্যন্ত নীল নদের পাশে একটি সমৃদ্ধ জনপদের উদ্ভব হয়। মিশরীয় সভ্যতার মধ্য দিয়েই মানবসভ্যতা দ্রুততার সাথে উন্নতির দিকে এগিয়ে যায়।

যেমন: মিশরীয় সভ্যতায় ঐতিহাসিক যুগের সূচনা হয় ৩২০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে প্রথম রাজবংশের শাসন আমল সূচনার মধ্যদিয়ে। একই সময়ে নারমার একাধারে মিশরের প্রথম নরপতি এবং পুরোহিত। তিনিই প্রথম ফারাও -এর মর্যাদা লাভ করেন।

মিশরে ফারাওদের অধীনেই প্রাচীন বিশ্বসভ্যতার অগ্রগতিতে একের পর এক উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সক্ষম হয়। ইতিহাস থেকে জানা যায়, মিশরীয় সভ্যতা ২৫০০ বছরের চেয়েও বেশি সময় স্থায়ী হয়েছিল।

মিশরীয় সভ্যতার সমকালীন মেসোপটেমীয় সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। চলুন জেনে নিই মেসোপটেমীয় সভ্যতা সম্পর্কে।

মেসোপটেমীয় সভ্যতাঃ

মেসোপটেমীয় একটি গ্রিক শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে দুই নদীর মধ্যবর্তী দেশ। খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ৫০০০ অব্দে ট্রাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর মধ্যবর্তী স্থানে মেসোপটেমীয় সভ্যতা গড়ে উঠে।

প্রাচীন মেসোপটেমীয় সভ্যতা আধুনিক ইরাক রাষ্ট্রের সীমারেখায় গড়ে উঠেছিল। এই উর্বর ভূখন্ডের উত্তরে আর্মেনিয়ার পার্বত্যাঞ্চল, পশ্চিম ও দক্ষিণে আরবের মরুভূমি, দক্ষিণ-পূর্বে পারস্য উপসাগর, পূর্বে এলাম পার্বত্যাঞ্চল এবং পশ্চিম তীরে ভূমধ্যসাগরের অবস্থান।

মেসোপটেমীয় অঞ্চলে বেশকিছু সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল। তারমধ্যে রয়েছেঃ

  • সুমেরীয় সভ্যতা
  • ব্যাবিলনীয় সভ্যতা
  • এ্যাসিরীয় সভ্যতা
  • ক্যালডীয় সভ্যতা
  • আক্বাদীয় সভ্যতা

এই সভ্যতাগুলো মূলত মেসোপটেমীয় সভ্যতা নামেই পরিচিত। মানবসভ্যতার ইতিহাসে উল্লেযোগ্য আরো কয়েকটি সভ্যতার নাম নিম্নরূপঃ

  • সিন্ধু সভ্যতা
  • পারস্য সভ্যতা
  • হিব্রু সভ্যতা
  • গ্রিক সভ্যতা
  • রোমান সভ্যতা ইত্যাদি।

এগুলো ছাড়াও প্রাচীন সভ্যতার মধ্যে আরো বিভিন্ন সভ্যতার উদ্ভব হয়েছিল। এভাবেই শতাব্দির পর শতাব্দিকাল ধরে মানুষের চেষ্টা ও সাধণার মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে মানবসভ্যতার উন্নতি ঘটে।

শেষ কথাঃ

প্রিয় পাঠক, বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতার ইতিহাসের এই ছোট্ট বিবরণে আমরা বেশকিছু তথ্য তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি। বাংলাদেশী হিসেবে বাংলাদেশের ইতিহাস ও মানুষ হিসেবে মানবসভ্যতার ইতিহাস আমাদেরকে জানা জরুরি।

মানুষ হিসেবে প্রাচীন মানবসভ্যতা আমাদের ঐতিহ্য। বাংলাদেশী হিসেবেও স্বাধীনতা আমাদের ঐতিহ্য। ইতিহাস আমাদেরকে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখায়, সত্য-মিথ্যার পার্থক্য করতে শেখায়, স্বাধীনতাকামী হতে শেখায়।

আমরা আশা করছি, বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতার ইতিহাসের এই পর্বটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। এই বিষয়ে যদি আপনার আরো জানতে আগ্রহ থাকে তবে অবশ্যই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন।

IT Nirman

যত জ্ঞান-ধন করেছি অর্জন জীবনের প্রয়োজনে, তার সবটুকুই বিলাতে চাই সৃষ্টির কল্যাণে।

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button
× How can I help you?

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker!