স্বপ্নের গেমিং পিসি বিল্ড পূর্ণতা পেলো 2023

স্বপ্নের গেমিং পিসি বিল্ড পূর্ণতা পেলো

কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রায় সকলেরই গেমিং পিসি বিল্ড করার একটি স্বপ্ন থাকে। আমিও দীর্ঘদিন ধরে সেই স্বপ্নই লালন করে আসছিলাম। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতা ও বাজেট ঘাঠতির কারণে স্বপ্নের সেই গেমিং পিসি কনফিগারেশনটি আর সেটআপ করা সম্ভব হয়ে উঠেনি।




করোনা মহামারির কারণে কম্পিউটার মার্কেটও দীর্ঘদিন ধরে অগোচালো। প্রোডাক্টের আকাশচূম্বী দাম, প্রোডাক্ট সংকট ও টাকার মুদ্রাস্ফীতিতে ডলারের বেহাল দশায় কনজুমার হিসেবে আমিও বেশ দ্বিধা দ্বন্দে পড়ে যাই।

অন্যদিকে Intel এর 12 Gen এর চমক শেষ হতে না হতেই 13 Gen লঞ্চ হওয়ার তারিখ ঘোষণা আমাকে এলোমেলো করে দিয়েছিল। এরই মধ্যে AMD এর Ryzen সিরিজের বেশ কিছু প্রসেসরের হঠাৎ দাম কমে যাওয়ায় আমি অনেকটা হতাশাগ্রস্থ হয়ে যাই।

প্রসেসর যেহেতু কম্পিউটার প্রধান হার্ডওয়্যার। সেহেতু পিসি বিল্ডের শুরুটা প্রসেসর সিলেকশনের মাধ্যমেই করতে হয়। কিন্তু প্রসেসর সিলেকশনই আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার হয়ে যাচ্ছিল। কোনটা রেখে কোনটা সিলেক্ট করবো তা ভেবে পাচ্ছিলাম না।

আমি বারাবরই Intel প্রসেসরে আগ্রহী। তবে AMD এর প্রসেসরের দাম কমে যাওয়ায় ভ্যালু ফর মানির কথা ভেবে এক পর্যায়ে Intel বাদ দিয়ে AMD এর প্রসেসরের দিকেই ঝুঁকতে চেয়েছিলাম।

কিন্তু Intel এর 13 Gen এর পারফর্মেন্স দেখে কিছুতেই AMD এর দিকে যেতে চাচ্ছিলাম না। যদিও 13 Gen এর দাম অনেক বেশি। তবুও মন বলছিল স্বপ্নের গেমিং পিসি বিল্ডে Intel ছাড়া অন্য কোনো প্লাটফর্মেই যাওয়া উচিত হবে না।

তাছাড়া, নতুন জেনারেশনের প্রসেসরের পারফর্মেন্স স্কিপ করে আগের জেনারেশন সিলেক্ট করাটা বোকমিও বটে। তাই পুরোপুরি ভাবে 12 Gen স্কিপ করে 13 Gen এ চলে এলাম।

যাইহোক, আমার গেমিং কম্পিউটারটি তৈরি করতে যেই কম্পোনেন্ট গুলো ব্যবহার করেছি এবং কোন কম্পোনেন্টটি কি কারণে সিলেক্ট করেছি তা আপনাদের অবশ্যই বলব। এই বিল্ডের কম্পোনেন্ট সিলেকশনের উদ্দেশ্য বুঝার মাধ্যমে গেমিং পিসির দাম সম্পর্কে আপনারা অবগত হতে পারবেন।

প্রসেসর – Processor (CPU)

Processor হিসেবে আমি নিয়েছি Intel i5-13600K, এটি 13 জেনারেশনের একটি প্রসেসর। যার Base Frequency 3.50 GHz এবং Maximum Turbo Frequency 5.10 GHz. তাছাড়া প্রসেসরটির Cache 24 MB, 14 টি Cores এবং 20 টি Threads.

13 জেনারেশনের একটি প্রসেসরটির TDP 125W, এই প্রসেসরে সর্বোচ্চ 128 GB র‌্যাম ব্যবহার করা যাবে, যা আমার কাছে এনাফ মনে হয়েছে। প্রসেসরটির বড় একটি সুবিধা হলো এটিতে DDR4 এবং DDR5 এর র‌্যাম ব্যবহার করা যাবে।

DDR4 এর ক্ষেত্রে Up to 3200 MT/s এবং DDR5 এর ক্ষেত্রে Up to 5600 MT/s এর র‌্যাম ব্যবহার করতে পারবেন অনায়াসেই। এই প্রসেসরে Graphics হিসেবে দেওয়া আছে UHD Graphics 770, যার Base Frequency 300 MHz এবং Max Dynamic Frequency 1.50 GHz.

প্রসেসরটির UHD 770 Graphics এর মাধ্যমে আপনি প্রায় সব ধরণের কাজ ভালো করেই করতে পারবেন। তবে গেমিং এর ক্ষেত্রে এন্টি লেভেলের গেমিং করতে পারবেন। আর একথা সকলেই জানেন যে, ভালো গেমিং করার ক্ষেত্রে ডেটিকেটেড Graphics Card আবশ্যক।

তবে আপনি যদি এন্টিলেভেলের গেমিং করতে চান, তবে যে কোনো ধরণের গেমিংয়ে ভালো fps পাবেন। আমি দীর্ঘদিন যাবত Intel i3 4th প্রসেসর ব্যবহার করেছি, যেটাতে Intel HD Graphics 4400 ছিল। সেটাতেই এন্টি লেভেলের গেম খেলা যেতো।

Intel HD Graphics 4400 এর তুলনায় UHD 770 Graphics কয়েকগুণ শক্তিশালী। তাই হলফ করে বলা যায় 13 জেনারেশনের Intel i5-13600K প্রসেসরটির UHD 770 Graphics দিয়েই গেমিং পারফর্মেন্স ভালোই পাবেন।

তবে আপনি যদি এই প্রসেসরের সাথে একটি ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করতে পারেন, তবে পৃথিবীর যে কোনো গেম 4k Hight Setting এ ভালো FPS এ খেলতে পারবেন। এক কথায় বলা যায়, Intel i5-13600K প্রসেসরটি যে কোনো কাজের জন্য সেরা একটি চয়েজ হতে পারে।

প্রসেসরটির বক্সের সাথে কোনো ফ্যান থাকেন না। প্রসেসরটিতে রয়েছে ৩ বছরের ওয়ারেন্টি। Intel i5-13600K প্রসেসরটি আমি নিয়েছিলাম ৩৯,৫০০/- টাকা দিয়ে। বর্তমান মার্কেটে প্রসেসরটির দাম কম-বেশি হতে পারে।

সিপিইউ কুলার – CPU cooler

বিল্ডের Intel i5-13600K প্রসেসরটিকে কুলিং করতে Cooler হিসেবে নিয়েছি DeepCool LE500 All In One 240mm LED Liquid CPU Cooler টি। কুলারটির বিল্ড কোয়ালিটি ভালোই। কুলারটিতে রয়েছে দুটি ফ্যান RGB সহ।

যদিও আমার প্রথম চয়েজ ছিল NZXT এর কুলার। তবে NZXT Cooler এর দাম বেশি হওয়ায় আর নিতে পারনি। কারণ, আমার বাজে ছিল নির্দিষ্ট। তবে DeepCool এর LE500 All In One 240mm কুলারটিকে খারাপ বললে চলবে না। পারফর্মেন্স চেক করে ভালোই মনে হয়েছে।

Intel i5-13600K প্রসেসরটিকে বেশ ভালো ভাবেই কুলিং করতে সক্ষম হয়েছে DeepCool LE500 All In One 240mm LED Liquid CPU Cooler টি। তাই এই কুলারটি নিয়েই আমি সেটিস্ফাইড।

DeepCool এর LE500 All In One 240mm কুলারটিতে রয়েছে ৩ বছরের ওয়ারেন্টি। আমি DeepCool এর এই LE500 All In One 240mm মডেলের LED Liquid কুলারটি কিনেছিলাম ৬,০০০/- টাকায়।

মাদারবোর্ড – Motherboard

এই বিল্ডে Motherboard হিসেবে নিয়েছি GIGABYTE B660 GAMING X AX DDR4 12th Gen ATX Motherboard টি। যদিও Intel i5-13600K প্রসেসরটির জন্য B660 মডেলের মাদারবোর্ড না নিয়ে Z790 মডেলের মদারবোর্ড গুলোই সবচেয়ে উপযুক্ত মনে হয়।

তবে বাজেটের কথা ভেবে B660 মডেলের মাদারবোর্ডই নিয়েছি। আমি মনে করি একটি B660 মাদারবোর্ডেই 13600K প্রসেসরটি খুব ভালোই চলবে। তবে B660 মডেলের মাদারবোর্ডে 13600K প্রসেসর ব্যবহার করতে Motherboard এর BIOS আপডেট করে নিতে হবে।

GIGABYTE এর B660 GAMING X AX DDR4 12th Gen মডেলের মাদারবোর্ডটি মূলত একটি ATX Motherboard, যেটাতে র‌্যাম স্লট ৪ টি এবং 128 GB পর্যন্ত র‌্যাম ব্যবহার করা যাবে। মাদারবোর্ডটিতে PCIe 4.0 ফিচার রয়েছে।

Motherboard এর heating গুলো বেশ ভালোই। মাদারবোর্ডটিতে 1 x HDMI port এবং 1 x DisplayPort রয়েছে। তাছাড়া, SSD ব্যবহারের ৩ টি স্লট এবং গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহারের ৩ টি স্লট রয়েছে।

আমি যেহেতু সাধারণত কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের কাজে কম্পিউটারটি ব্যবহার করবো, যেহেতু B660 মডেলের মাদারবোর্ডটিই আমার জন্য যথেষ্ট ভালো পারফর্মেন্স দেবে বলে মনে করি। ১০/১২ দিন ব্যবহার করে Motherboard এর পারফর্মেন্স ভালোই মনে হয়েছে।

GIGABYTE এর B660 GAMING X AX DDR4 12th Gen ATX Motherboard টিতে রয়েছে ৩ বছরের ওয়ারেন্টি। আমি এই মাদারবোর্ডটি কিনেছিলাম ১৯,০০০/- টাকায়।

র‌্যাম – RAM

RAM হিসেবে আমি Corsair Vengeance RGB Pro 8GB DDR4 3200MHz White Heatsink মডেলের ডুয়েল স্টিক RAM নিয়েছি। দুটো র‌্যামই RGB এবং ভালো মানের হিস্টিংয়ে বেস্টিত। দেখতেও বেশ সুন্দর।

র‌্যামগুলো 3200MHz এ চলবে। আমি এই বিল্ডে আপাতত 16GB র‌্যাম ব্যবহার করেছি। তবে অদূর ভবিষ্যতে 32GB র‌্যাম করার চিন্তা আছে। র‌্যামগুলোর পারফর্মেন্স খুবই ভালো।

Corsair ব্র্যান্ডের Vengeance RGB Pro 8GB DDR4 3200MHz White Heatsink মডেলের ডুয়েল স্টিক RAM গুলো আমি ৮,৬০০/- টাকায় নিয়েছিলাম। এই র‌্যামগুলোর ওয়ারেন্টি লাইফটাইম।

এসএসডি – SSD

এই বিল্ডে SSD হিসেবে নিয়েছি HP EX900 M.2 500GB PCIe NVMe Internal SSD টি। আমার প্রথম চয়েজ ছিল Samsung 990 Pro 1TB PCIe 4.0 M.2 NVMe SSD টি। তবে Samsung এর SSD টির দাম অনেক বেশি। তাই বাজেটের মধ্যে SSD নিতে গিয়ে আপাতত HP EX900 M.2 500GB PCIe NVMe SSD টি নেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে HP EX900 M.2 500GB এসএসডি দিয়েই পিসিটি রান করছি। পাশাপাশি আরো একটি 120GB SATA SSD ব্যবহার করছি। তবে অবশ্যই আমি অদূর ভবিষ্যতে Samsung 990 Pro 1TB PCIe 4.0 M.2 NVMe SSD টি এই বিল্ডে যোগ করবো ইনশাআল্লাহ।

HP EX900 M.2 এটি একটি 500GB এসএসডি। এটিতে PCIe 3.1 x4 সাপোর্ট করবে এবং এর Max Sequential Read: Up to 2,100 MBps এবং Max Sequential Write: Up to 1,300 MBps.

HP EX900 M.2 500GB PCIe NVMe Internal SSD টির দাম রাখা হয়েছে ৪,৩০০/- টাকা। এটি একটি অফার প্রাইজ। রেগুলার প্রাইজ ৫ হাজার টাকার উপরে। তবে ভবিষ্যতে এর দাম কম-বেশি হতে পারে।  HP ব্র্যান্ডের EX900 M.2 500GB PCIe NVMe SSD টির ওয়ারেন্টি ৩ বছর।

পাওয়ার সাপ্লাই – Power supply

এই বিল্ডে ভালো একটি গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করা হয়ে, তাই Power supply হিসেবে নিয়েছে Corsair ব্র্যান্ডের CX650F RGB 80 Plus Bronze 650 Watt Fully Modular Power Supply টি।

এই পাওয়ার সাপ্লাইটি দেখতে বেশ সুন্দর এবং বিল্ড কোয়ালিটি বেশ উন্নত মানের। মজার বিষয় হলো Power supply টির ফ্যানেও RGB লাইটিং দেওয়া রয়েছে। যদিও Power supply এর RGB FAN প্রয়োজন নেই। তবুও ফিচার বলে কথা। তাছাড়া গেমিং পিসি বিল্ডে RGB থাকবেনা এটি কি হয়!

Corsair ব্র্যান্ডের CX650F RGB 80 Plus Bronze 650 Watt Fully Modular Power Supply টি এক সময় ১০ হাজার টাকার আশে পাশে বিক্রি হতো। কিন্তু দাম অনেক বেশি হওয়ায় পাওয়ার সাপ্লাইটি সকল ক্রেতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছতো না। অর্থাৎ, খুব বেশি সেল হয়নি।

তাই বাধ্য হয়ে Corsair এই Power Supply টির দাম কমিয়ে দেয়। এই Power Supply টির বড় একটি সুবিধা হলো এটি 650 Watt 80 Plus Bronze Certified করা। আবার পাওয়ার সাপ্লাইটি Fully Modular হওয়ায় ক্যাবল ম্যাজেমেন্টে অনেক বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে।

আমার বিল্ডের গ্রাফিক্স কার্ড RTX 3060, যা এই Power Supply টি দিয়ে বেশ ভালো ভাবেই চলবে। আমি এই পাওয়ার সাপ্লাইটি নিতে পেরে বেশ সেটিস্ফাইড।

Corsair ব্র্যান্ডের এই CX650F RGB 80 Plus Bronze 650 Watt Fully Modular Power Supply টিতে ৫ বছরের ওয়ারেন্টি সুবিধা রয়েছে। আমি এই Power Supply টি কিনেছিলাম ৬,৪০০/- টাকা দিয়ে।

চেচিস – Caching

এই বিল্ডে Caching হিসেবে DeepCool CK560 WH E-ATX Mid-Tower Casing টি সিলেক্ট করেছি। এটি দেখতে বেশ বড়সড় এবং সুন্দও বটে। সাদা কালারের এই ক্যাচিংটিতে airflow সিস্টেম খুবই ভালো।

ক্যাচিংটির সামনে ৩ টি RGB ফ্যান রয়েছে। ফ্যানগুলোও কোয়ালিটিও বেশ ভালো। ক্যাচিংটির পেছনে একটি নন আরজিবি ফ্যান রয়েছে। ক্যাবল ম্যানেজমেন্টর জন্য ক্যাচিংটি বেশ চমৎকার।

ক্যাচিং এর সামনে এবং উপরে Dust filter রয়েছে। তাই ক্যাচিং এর ভেতরে বালু প্রবেশের তেমন সুযোগ নেই। আবার পওয়ার সাপ্লাইয়ের ফ্যানের জন্যও এই ক্যাচিংয়ে Dust filter ফিচার বিদ্যমান।

যারা কম্পিউটারে আলাদা SATA SSD বা HDD ব্যবহার করবেন, তাদের জন্যও ক্যাচিং চমৎকার ফিচার অফার করে। আমি এই ক্যাচিংটি নিয়ে পুরোপুরি সেটস্ফাইড আছি। ক্যাচিংটি আমি কিনেছি ৮,২০০/- টাকা দিয়ে। ক্যাচিং এর সাথে কোনো ওয়ারেন্টি নেই।

গ্রাফিক্স কার্ড – Graphics Card

একটি গেমিং পিসি বিল্ডের মেইন স্টার হলো Graphics Card, এজন্য গ্রাফিক্স কার্ড হিসেবে আমি নিয়েছি GIGABYTE GeForce RTX 3060 GAMING OC 12GB Graphics Card টি। এটি একটি 3 Fan ওয়ালা গ্রাফিক্স কার্ড। কার্ডটি দেখতে বেশ বড়সড় এবং সুন্দর।

আমি এই কম্পিউটার বিল্ডটি করতে যেয়ে সবচেয়ে বেশি প্যারা খেয়েছি Graphics Card নিয়ে। অবশেষে আমার আশার চেয়েও ভালো কিছু পেয়েছি। বাজেটের কারণে আমি প্রথমত ২ ফ্যান ওয়ালা PNY GeForce RTX 3060 12GB VERTO Dual Fan GDDR6 Graphics Card টি পছন্দ করে ছিলাম।

কিন্তু PNY ব্র্যান্ডের গ্রাফিক্স কার্ড এর বিল্ড কোয়ালিটি তেমন ভালো মনে হয়নি। আবার এটি ২ ফ্যান ওয়ালা কার্ড। কিন্তু বাজেটের কথা চিন্তা করে একটু নিচে গিয়ে সিলেক্ট করেছিলাম RTX 3050 8GB VERTO Dual Fan GDDR6 Graphics Card টি।

এটির বিল্ড কোয়ালিটি ভালো। তবে পারফর্মেন্সে অনেক বেশিই ছাড় দিতে হবে। কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। এভাবেই বাংলাাদেশের সবচেয়ে বড় কম্পিউটার মার্কেট IDB তে যাই। চিন্তা ছিল খালি হাতে ফিরে আসবো না। যেটাই পাই কিনে নিয়ে আসবো।

মহান আল্লাহ আমাকে এমন এক চমক দেখিয়েছিলেন, যা আজীবন মনে রাখার মতো। কম্পিউটার বিল্ড করতে IDB তে বেশ কিছু শপ ঘুরেছি। তারমধ্যে পূর্বেই সিলেক্টেড ছিল startech এবং Ryans.

শপে গিয়ে দেখতে পাই Graphics Card এর সংকট চলছে। আমার মনটাই ভেঙে যায়। তবুও যে কম্পিউটারটি বিল্ড করতেই হবে, সেই কথা চিন্তা করে প্রোডাক্ট সিলেকশন করতে থাকি। startech এ অনেক প্রোডাক্টের স্টক নাই।

পরে Ryans এর শপে যাই। সেখানেও প্রোডাক্টের স্টক সীমিত। তাড়াতাড়ি প্রোডাক্ট নির্বাচন করতেই হবে, নাহয় খালি হাতে ফিরে আসা ছাড়া কোনো গতি নেই। প্রোডাক্ট সিলেকশনে নেমে গেলাম।

হঠাৎ দেখি GIGABYTE GeForce RTX 3060 GAMING OC 12GB Graphics Card টির স্টক এভেইলএবল। তাড়াতাড়ি সিলেক্ট করে শপের এক ভাইকে জিজ্ঞেস করি কার্ডটি স্টকে আছে কিনা। তিনি বললেন দেখতে হবে। আমি বললাম দেখুন, তিনি কিছুক্ষণ খোঁজাখুজির পর এসে বলব মাত্র ১ টি কার্ড আছে!

আমার পাশাপাশি আরো একজন RTX 3060 কার্ডটি সিলেক্ট করতে ছিল তারজন্যে। আমি ওটা দেখে দোকানের লোককে বললাম আমার গ্রাফিক্স কার্ড সবার আগে কনফার্ম করুন। পাশের লোকটিও দোকানদারকে তাই বলছিল। কিন্তু আমি আগে কনফার্ম করায় পাশের লোকটি গ্রাফিক্স কার্ড পাইনি।

যাইহোক, GIGABYTE GeForce RTX 3060 GAMING OC 12GB Graphics Card টি পূর্ব থেকে নেওয়ার কোনো প্রিপারেশনই ছিল না। আগে একবার ওয়েবসাইটে এই কার্ডটির দাম ৫৭,০০০/- টাকা দেখেছিলাম। যা আমার বাজেটের সাথে যায় না।

কিন্তু চমক হলো কার্ডটি যখন সিলেক্ট করি তখন এর দাম ৫১,০০০/- দেখতে পাই। অবশেষে এটি ৪৯,০০০/- টাকায় কিনি। এটিও নাকি অফার প্রাইজ। রেগুলার প্রাইজ ৫৫,০০০/- +।

তাই কোনো চিন্তা না করেই GIGABYTE GeForce RTX 3060 GAMING OC 12GB Graphics Card টি কিনে নিয়েছি। এই কার্ডটিতে ২ বছরের ওয়ারেন্টি রয়েছে।

মনিটর – Monitor

কন্টেন্ট তৈরির জন্য প্রায় সকলেই একটি নরমাল 60Hz এর মনিটরই ব্যবহার করে। তবে আমি চাচ্ছিলাম আরো ভালো মানের একটি মনিটর নিতে। কারণ, আমি ওয়েব ডিজাইনের পাশাপাশি গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজও করি। গ্রাফিক্স ডিজাইন এর কাজ করতে গিয়ে ভিডিও অ্যানিমেশনের কাজও টুকটাক করা হয়।

তাই একটি ভালো মনিটর নেওয়া খুবই জরুরি ছিল। তাছাড়া মাঝে মাঝে গেমও খেলি। এজন্য Monitor  হিসেবে নিয়েছি GIGABYTE G24F 170Hz Full HD Gaming Monitor টি।

এটি একটি 24 ইঞ্চি IPS বর্ডারলেস মনিটর। মনিটরের কালার কালো। দেখতে বেশ চমৎকার। আমি যেহেতু কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের কাজ করি, সেহেতু আমার জন্য ডুয়েল মনিটর খুবই জরুরি। তাছাড়া, আাগের কম্পিউটারে ডুয়েল মনিটর ব্যবহারে অভ্যস্ত ছিলাম।

আপাতত 1920x1080px রেজুলেশনের মনিটর নিয়েছি। ভবিষ্যতে যদি আরো একটি মনিটর নেই তবে 2k অথবা 4k জেুলেশনের মনিটর নেওয়ার চিন্তা আছে। এখনই নিতাম যদি বাজেট থাকতো।

যাইহোক, GIGABYTE এর G24F 170Hz Full HD Gaming Monitor টি ২৩,৮০০/- টাকায় নিয়েছিলাম। এটিও নাকি একটি অফার প্রাইজে। রেগুলার প্রাইজ ২৫,৫০০/- টাকা। এই মনিটরের ওয়ারেন্টি ৩ বছর।

অন্যান্য কম্পোনেন্ট – Other components

কম্পিউটারের লুকটাকে সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলতে ক্যাবল ম্যানেজমেন্ট এবং অন্যান্য পেরিফেরালের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া, কিবোর্ড, মাউস এবং সাউন্ড বক্স ইত্যাদি গুলো আবশ্যক।

এগুলো কিনতে ৮,০০০ – ১০,০০০ টাকা খরচ হয়েছে। যদিও এখনো সবগুলো জিনিস কেনা হয়নি। তবে আস্তে আস্তে করে সবগুলোই কেনার ট্রাই করছি।

শেষ কথাঃ

প্রিয় পাঠক, একটি গেমিং পিসি বিল্ড অনেকেরই স্বপ্ন থাকে। যদিও আমার পিসিটির মেইন উদ্দেশ্য গেমিং নয়। তবুও এই ধরণের পিসি গেমিং বলেই সবার কাছে পরিচিত। আমার এই পিসিটি বিল্ড করতে ১,৭০,০০০/- টাকা লেগেছে।

আপনাদের বাজেট যদি ১,৭০,০০০/- টাকার আশেপাশে হয় তবে হুবহু এই বিল্ডটি হতে পারে আপনার জন্য সেরা চয়েজ। অথবা কিছু কম্পোনেন্টের ব্র্যান্ড, মডেল বাদ দিয়েও আপনি নিজের মতো করে একটি পিসি সাজাতে পারেন।

আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। ১,৭০,০০০/- টাকার পিসি বিল্ড আমার জন্য অনেক। কিন্তু আমি এই পিসিটি শখের বশে তৈরি করিনি, মেইনলি আমার কাজের জন্য তৈরি করেছি। পিসিটি বিল্ড করার অনেকটা বাজেট আমার কাজ থেকেই এসেছে।

তাই কাজের জন্য একটি ভালো মানের পিসি খুবই প্রয়োজন ছিল। যারা এই ধরণের পিসি বিল্ডের স্বপ্ন রাখেন তারা ধৈর্য্যের সাথে কাজ চালিয়ে যান, মহান আল্লাহ আপনার স্বপ্ন একটু দেড়িতে হলেও পূরণ করে দেবেন।

আর এটা সত্য যে, মধ্যবিত্তদের স্বপ্নগুলো পূরণ হতে একটু সময় বেশি লাগে। এটাই বাস্তবতা আর এই স্বাভাবিক বিষয়। আমার এই স্বপ্নও পূরণ হতে অনেক সময় লেগেছে।

যাইহোক, পরিশেষে সবাইকে বলব, আপনারা যদি কম্পিউটার নির্ভর কোনো কাজ করেন বা ফ্রিল্যান্সিং করেন যে কোনো ক্যাটাগরিতে, তবে আপনার উচিত আপনার কাছে যা আছে তাই দিয়ে কাজ করতে থাকুন। একসময় এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাজ গুলোই আপনার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সাহায্য করবে। যেমনটা আমার বেলায় ঘটেছে।

আমার এই গেমিং পিসি বিল্ডটি নিয়ে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে তবে অনায়াসেই কমেন্ট করুন। পিসি সংক্রান্ত কোনো পরামর্শ লাগলেও কমেন্ট করুন। যথাসাধ্য আপনাকে সহযোগিতা করবো ইনশাআল্লাহ। সবাইকে ধন্যবাদ

IT Nirman

যত জ্ঞান-ধন করেছি অর্জন জীবনের প্রয়োজনে,
তার সবটুকুই বিলাতে চাই সৃষ্টির কল্যাণে।

Add comment

Your Header Sidebar area is currently empty. Hurry up and add some widgets.