এসইও (SEO) এর পূর্ণরূপ হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন। যারা ওয়েবসাইটের সাথে কোনোনা কোনো ভাবে সম্পৃক্ত আছেন, তাদের সকলেই হয়ত SEO শব্দের সাথেও পরিচিত। যে কোন ধরণের কন্টেন্টকে এসইও করার জন্য অন পেজ এসইও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অন পেজ এসইও কি এবং এসইও ফ্রেন্ডলি পোস্ট লিখার নিয়ম কি?
ওয়েবসাইট যে কোনো বিষয়ের উপর হোকনা কেন, ওয়েবসাইটের পেজ গুলোকে সার্চ ইঞ্জিনের রেজাল্ট পেজে রেংক করিয়ে কাঙ্খিত ভিজিটর পাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই অন পেজ এসইও করতেই হবে। এটা এসইও এর প্রাথমিক একটি ধাপ।
অনপেজ এসইও ছাড়া কোন কন্টেন্টই সার্চ ইঞ্জিনের রেজাল্ট পেজে কাঙ্খিত পারফর্ম করে না। বুঝতেই পারছেন অনপেজ এসইওর গুরুত্ব কতটুকু।
Table of Contents
অন পেজ এসইও কি?
অন পেজ এসইও সাধারণত ওয়েবসাটের ভেতরের কাজকে বুঝানো হয়। অর্থাৎ, আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে লগইন করে যত কাজ করি তার সবই অন পেজ এসইওর সাথে সম্পৃক্ত।
অন পেজে এসইও কেবলই একজন ওয়েবমাস্টার করতে পারে। ভিজিটরেরা কখনই অন পেজ এসইওর কোনো কাজ সম্পাদন করতে পারে না।
অন পেজ এসইও করতে বিভিন্ন ধরণের কন্টেন্ট প্রয়োজন হতে পারে। যেমনঃ লেখা, ছবি, ইমেজ, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি। এই ধরণের কন্টেন্টকে অন পেজ এসইও কারার ক্ষেত্রে এইচটিএমএল ট্যাগ (HTML Tags) ব্যবহার করতে হয়।
যদিওবা বর্তমান সময়ে সব ধরণের ওয়েবসাইটের ভেতর ও বাহিরের ফিচারগুলো পুরোপৃুরি ডায়নামিক ভাবে তৈরি করা হয়। এর ফলে Text Editor এর পরিবর্তে Visual Editor দিয়ে কাজ করা হয়।
যে কারণে আলাদা ভাবে এইচটিএমএল ট্যাগ কন্টেন্টে প্রয়োগ করতে হয় না। তবে ইউজারদের অজান্তেই এইচটিএমএল ট্যাগগুলো প্রত্যেক কন্টেন্টে ডায়নামিক ভাবে যুক্ত হচ্ছে।
এসইও ফ্রেন্ডলি পোস্ট লিখার নিয়ম
এসইওর মূল বিষয়ই হলো আর্টিকেল। একটি আর্টিকেলকে সার্চ ইঞ্জিনের জন্য বিভিন্ন ভাবে অপটিমাইজ করতে হয়। এখন আমি আপনাকে এই বিষয়টাই দেখাবো যে, আপনি আপনার একটি আর্টিকেলের অন পেজ এসইও কিভাবে করবেন।
(১) টাইটেল অপটিমাইজ
একটি আর্টিকেল এর প্রধান এবং মূল আকর্ষণ হলো টাইটেল। আপনার আর্টিকেল এর টাইটেল যত সুন্দর ও আকর্ষণীয় হবে, সার্চ রেজাল্ট থেকে তত বেশি ক্লিক আসার চান্স রয়েছে।
এজন্য আর্টিকেলকে অপটিমাইজ করার জন্য প্রথমেই আপনাকে কিওয়ার্ডের ভিত্তিতে সুন্দর ও আকর্ষণীয় টাইটেল ব্যবহার করতে হবে। প্রধান টাইটেলটি অবশ্যই এইচটিএমএল-এর <H1> ট্যাগে রাখতে হবে।
(২) আর্টিকেল এর প্রথম প্যারাগ্রাফ অপটিমাইজ
প্রত্যেকটি আর্টিকেল এর জন্য একটি টার্গেটেড কিওয়ার্ড থাকে।
আর্টিকেলকে অপটিমাইজ করার জন্য প্যারাগ্রাফের প্রথম ১০০ ওয়ার্ডের ভেতরে টাইটেলে দেওয়া সেই নির্দিষ্ট টার্গেট কিওয়ার্ডটি ব্যবহার করতে হবে।
অর্থাৎ, আপনার আর্টিকেলটি যেই কিওয়ার্ডের ভিত্তিকে র্যাঙ্ক করাতে চাচ্ছেন, সেই কিওয়ার্ডটি টাইটেল এর পাশাপাশি আর্টিকেল এর প্রথম ১০০ শব্দের মাঝে দিয়ে দিতে হবে। এটা এসইওতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রোপারলি অন পেজ এসইও কিভাবে করতে হয়, তা না জানার কারণে অনেকেই কিওয়ার্ড স্টাফিং করে। মনে রাখবেন, অনপেজ এসইওতে কোন ভাবেই কিওয়ার্ড স্টাফিং করা যাবে না।
কিওয়ার্ড স্টাফিং বলতে ১০০ শব্দের প্যারাগ্রাফে ২ /৩ বার টার্গেটেড কিওয়ার্ডটি দেওয়া যাবে না।
(৩) প্যারাগ্রাফে হেডিং ট্যাগ এর ব্যবহার
আর্টিকেল এর মাঝখানে হেডিং H2 এবং অন্যান্য হেডিং ট্যাগগুলো পর্যায়ক্রমে ব্যবহার করতে হবে। আপনার আর্টিকেল এর জন্য টার্গেটেড যেই কিওয়ার্ডটি রয়েছে, তা আর্টিকেল এর মাঝখানে H1 হেডিং ব্যতীত অন্যান্য হেডিংয়ে ব্যবহার করুন।
(৪) ছবি বা ইমেজ
আর্টিকেল এর মূল বিষয়ের উপর ভিত্তি করে দৃষ্টিনান্দন একটি ফিচার্ড ইমেজ/ছবি ব্যবহার করতে হবে। ফিচার্ড ইমেজ ছাড়াও কন্টেন্টের মাঝখানে প্রয়োজন অনুসারে ইমেজ ব্যবহার করতে হবে।
অবশ্যই মনে রাখতে হবে, আর্টিকেলে ব্যবহৃত ইমেজ বা ছবিগুলো কপিরাইট মুক্ত হতে হবে। কপিরাইট যুক্ত ছবি অন পেজ এসইও কি কিভাবে প্রভাবিত করে তার উপর আর্টিকেল দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ। কপিরাইট মুক্ত ছবি পাবার উপায় জানুন।
আর্টিকেলে ব্যবহৃত প্রত্যেকটা ইমেজ এর Alt Text এর মাধ্যমে অবশ্যই টার্গেটেড কিওয়ার্ডটি দিতে হবে।
সার্চ ইঞ্জিনগুলোর একটি চমৎকার ফিচার হলো “ইমেজ সার্চ”। আপনি যখন আপনার আর্টিকেল এর প্রত্যেকটা ইমেজ বা ছবিতে Alt Text ব্যবহার করবেন, তখন সেই আর্টিকেলটিতে ব্যবহৃত ইমেজগুলো “ইমেজ সার্চ” এর মাধ্যমে সহজেই রেংক করে।
সার্চ ইঞ্জিনের “ইমেজ সার্চ” ফিচারটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রত্যেকটা ইমেজে Alt Text ব্যবহার করবেন।
(৫) ইন্টারনাল লিংক
এসইওতে ভালো করতে হলে আপনার সাইটের ফাউন্ডেশনকে ইন্টারনাল লিংকিং এর মাধ্যমে মজবুত করতে হবে। যারা অন পেজ এসইও কি জানেন না, তারা হয়ত ইন্টারনাল লিংকিং বিষয়টি বুঝেননি।
ইন্টারনাল লিংকিং বলতে ওয়েবসাইটের ভেতরের লিংকগুলোকে বুঝানো হয়। অর্থাৎ, ওয়েবসাইটের ভেতরের এক পেজের সাথে অপর পেজের লিংকিং করাতে হবে।
এই বিষয়টাকে এসইওর ভাষায় ইন্টারনাল লিংক (Internal Link ) বা ইনবাউন্ড লিংক ( Inbound Link) বলা হয়। এটা অবশ্যই ডু-ফলো লিংক (Dofollow Link) হবে।
(৬) এক্সটারনাল লিংক
আর্টিকেল এর মাঝখান থেকে নিশ রিলেটেড অন্য কোনো বাহিরের ওয়েবসাইটকে লিংক দিতে হবে। যেটাকে এসইওর ভাষায় এক্সটারনাল লিংক (External Link) বা আউটবাউন্ড লিংক ( Outbound Link) বলা হয়।
এক্সটারনাল লিংক গুলো ডু-ফলো অথবা নো-ফলো যে কোনোটাই দেওয়া যেতে পারে।
এক্সটারনাল লিংক যদি একাধিক হয় তবে চেষ্টা করবেন , ডু-ফলো এবং নো-ফলো উভয় ধরণের লিংক আর্টিকেলে রাখার জন্য।
(৭) মেটা ডেস্কিপশন
যারা অন পেজ এসইও কি পুরোপুরি বুঝেনা, তারা আর্টিকেলে মেটা ডেস্কিপশন ব্যবহার করে না। আবার অনেকেই জানার পরও অলসতার কারণে মেটা ডেস্কিপশন ব্যবহার করে না। এটা আসলে ভুল।
ওয়েব পেজকে র্যাঙ্ক করাতে হলে মেটা ডেস্কিপশন এর প্রতি ভালো ভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, যেই আর্টিকেল এর মেটা ডেস্কিপশন ভালো হয়, সার্চ পেজে সেই আর্টিকেল অনেক ভালো পারফর্ম করে।
মেটা ডেস্কিপশনে অবশ্যই আর্টিকেল এর কাঙ্খিত টার্গেট কিওয়ার্ডটি ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি কন্টেন্টের মূল মেসেজটি ছোট আকারে মেটা ডেস্কিপশনে লিখে দিতে হবে।
(৮) URL অপটিমাইজ
কন্টেন্টের ইউআরএল (URL) এ কাঙ্খিত কিওয়ার্ডটি ব্যবহার করতে হবে। যেই কিওয়ার্ডটি দ্বারা মূলত কন্টেন্টকে এসইওর জন্য অপটিমাইজ করা হচ্ছে।
এক্ষেত্রে দেখা যায়, যারা বাংলা কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করে, তাদের ইউআরএল গুলো বাংলায় হওয়ার কারণে অনেক বড় হয়ে যায়। যদিও এটা কোন সমস্যা না।
আপনার লক্ষ থাকতে হবে টার্গেটেড কিওয়ার্ডটি দিয়ে URL অপটিমাইজ করা। আর্টিকেলকে পুরোপুরি অপটিমাইজ করার জন্য URL অপটিমাইজ করা জরুরি।
মনে রাখবেন, গুগল বট প্রথমেই আপনার URL এর মাধ্যমে আর্টিকেলে প্রবেশ করে। এক্ষেত্রে URL যদি অপটিমাইজ থাকে তবে সহজেই গুগল বট বুঝতে পারে আপনার টার্গেটেড কিওয়ার্ড কোনটি।
(৯) শর্ট প্যারাগ্রাফ
যে কোন আর্টিকেলে ছোট ছোট প্যারাগ্রাফ লিখতে হবে। প্যারাগ্রাফের গুরুত্বপূর্ণ অংশকে বোল্ড (Bold) করা। প্রয়োজনে প্যারাগ্রাফের নির্দিষ্ট কোনো অংশকে ইটালিক (Italic) করা যেতে পারে।
ছোট ছোট প্যারাগ্রাফ গুলো সত্যি খুবই কার্যকরী। যা ভিজিটরকে আর্টিকেলটি পড়তে সহজ করে দেয় এবং এতে করে ভিজিটরগণও পুরোটা আর্টিকেল পড়তে আগ্রহী হয়। এতে আপনার ওয়েবসাইটের বাউন্স রেট কমে যায়। ফলে সহজেই আর্টিকেলটি র্যাঙ্ক করে।
আর্টিকেল এর বাউন্সরেট কমাতে অন পেজ এসইও কিভাবে কাজ করে জেনে নিনঃ বাউন্স রেট কমানোর উপায়।
(১০) ক্যাটাগরি লিস্টেড
আর্টিকেলকে উপযুক্ত ক্যাটাগরিতে লিস্টেড করতে হবে।
এতে করে আপনার ওয়েবসাইটের কন্টেন্টগুলো গুছালো ভাবে থাকবে এবং ভিজিটরেরা আপনার ওয়েবসাইটটি সম্পর্কে সহজেই বুঝতে পারবে। তাই প্রতিটি কন্টেন্টকে উপযুক্ত ক্যাটাগরিতে লিস্টেড করাটা বুদ্ধিমানের কাজ।
অন পেজ এসইওর আরেকটি বিষয় হলো আর্টিকেল ট্যাগ। যদিও এটি নিয়ে এসইও এক্সপার্টদের বিভিন্ন মতামত রয়েছে।
অনেকেই আর্টিকেল ট্যাগ ইনডেক্স করাই না। ট্যাগ ইনডেক্স করাতে সার্চ কনসোলে বিভিন্ন ইরর তৈরি হয়। যে কারণে এটা অধিকাংশ মানুষ এড়িয়ে চলে।
তবে যারা ট্যাগ ইনডেক্স করেন, তারা অবশ্যই আর্টিকেল এর টার্গেট কিওয়ার্ড সহ রিলেটেড কিওয়ার্ড গুলোকে ট্যাগ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথাঃ
যে কোনো ওয়েবপেজকে অন পেজ এসইও (On Page SEO) করার জন্য ওয়েবসাইটে লগইন করতে হয় এবং ওয়েবমাস্টার দ্বারা কন্টেন্টকে অপটিমাইজ করতে হয়। উপরোল্লেখিত বিষয়গুলো দ্বারাই সাধারণত অন পেজ এসইওর কাজ সম্পাদন করা হয়।
অনপেজ এসইওর যেই বিষয়বস্তু না করলেই নয়, তার সবকিছুই এই তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি।
আমি আশা করছি অন পেজ এসইও কি এবং তা কিভাবে করতে হয়, তার উপর সকলেই সুস্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন। এই বিষয়ে যদি আপনার আরো কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকে তবে অবশ্যই কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ
বাংলায় এই প্রথম seo বিষয়ক সুন্দর একটি লেখা পড়লাম
সুন্দর একটি মন্তব্য প্রদানে আপনাকে ধন্যবাদ ভাই
আর্টিকেলটি খুবই ভালো লাগলো
খুবই চমৎকার রিসোর্স দিলেন ভাই। এসইও বিষয়ে কমপ্লিট কোর্স চাই!
ঠিক আছে ইনশাআল্লাহ