ওয়েব ডিজাইন বর্তমান সময়ের একটি স্মার্ট পেশা। দেশে-বিদেশে এই পেশাটির যথেষ্ট চাহিদা থাকায় সম্ভাবনাময় চাকরি খ্যাত হিসেবে Web Design কে গুরুত্বের সাথে দেখা হয়। তাই বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ Web Design কে স্বপ্নের পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। কিন্তু এই স্বপ্নের ওয়েব ডিজাইন ক্যারিয়ারে কেমন অপর্চুনিটি পাবেন তা আপনাকে জানতে হবে।
পৃথিবীতে এমন কোনো কোম্পানি হয়ত পাওয়া যাবে না, যার একটি নিজস্ব ওয়েবসাইট নেই। দেশি – বিদেশী প্রায় সব কোম্পানিরই এক বা একাধিক ওয়েবসাইট রয়েছে।
শুধু তাই নয়, এখন প্রায় মানুষেরই ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট আছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযক্তির এই যুগে ওয়েবসাইট ব্যবহার আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে রূপ নিয়েছে।
তাই ওয়েবসাইট কেন্দ্রিক বিভিন্ন কর্মসংস্থানও তৈরি হয়েছে। এখন প্রায় সব ধরণের ওয়েবসাইট থেকেই অর্থ উপার্জন করা যায়। আবার প্রত্যেকটি ওয়েবসাইট থেকে একাধিক পদ্ধতিতে অর্থ উপার্জনের সুবিধা রয়েছে।
তারমধ্যে যেমনঃ সার্ভিস প্রোভাইড, ই-কর্মাস, ড্রপ শিপিং, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, গুগল এডসেন্স ইত্যাদি। আর এই সবকিছুর অগোচরে হলো ওয়েব ডিজাইন।
ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য Web Design এর বিকল্প নেই। তাই প্রতিনিয়তই এই সেক্টরটি সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
চাহিদা সম্পূর্ণ এই সেক্টরে ওয়েব ডিজাইনারের বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি ওয়েব ডিজাইন ক্যারিয়ার ক্রমান্বয়ে অনেক বেশী সম্ভাবনাময় হয়ে উঠছে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
নতুনদের অনেকেই ’ওয়েব ডিজাইনার এবং ওয়েব ডেভেলপার’ বিষয়টিকে আলাদাভাবে দেখে। তবে এই দুটি শব্দটি একই অর্থে ব্যবহার করা হয়।
ওয়েব ডিজাইনারের কাজ কী?
যিনি ওয়েবসাইটের স্টাকচার ডিজাইন করেন তাকেই ওয়েব ডিজাইনার বলা হয়। একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে বেশ কিছু জিনিসের প্রয়োজন হয়।
তারমধ্যে যেমনঃ গ্রাফিক্স, ওয়েব অ্যানিমেশন, ইমেজ, এইচটিএমএল, সিএসএস, জাভাস্ক্রিপ্ট, জেকুয়েরি, পিএইচপি ইত্যাদি।
প্রত্যেক ওয়েব ডেভেলপার উপরোল্লিখিত বিষয়গুলোতে বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়। তাই ওয়েব ডেভেলপার ছাড়া সাধারণত এই কাজ গুলো কেউ করতে পারে না।
তবে অনেক ওয়েব ডেভেলপার আছে যারা ওয়েব অ্যানিমেশন, এইচটিএমএল, সিএসএস, জাভাস্ক্রিপ্ট, জেকুয়েরি, পিএইচপি ইত্যাদির কাজ করে, তবে গ্রাফিক্স এবং ছবির কাজ বিভিন্ন গ্রাফিক্স ডিজাইনাদের মাধ্যমে করিয়ে নেয়।
তবে বেশীরভাগ ওয়েব ডেভেলপার নিজেরাই গ্রাফিক্স এবং ছবির কাজ করতে পারে।
প্রযুক্তির অগ্রগতিতে ওয়েব ডিজাইনরা বিশেষ ভাবে অবদান রেখেছে। সকলেই জানেন, ইন্টারনেট মানেই ওয়েবসাইট ভিত্তিক কর্মকাণ্ডকে ইঙ্গিত করে।
অনলাইনে মিলিয়ন মিলিয়ন ওয়েবসাইট রয়েছে। যার প্রত্যেকটা ওয়েবসাইটই কোনোনা কোন ওয়েব ডেভেলপারের সহযোগীতা নিয়েই তৈরি করা হয়েছে।
এজন্যই ওয়েব ডিজাইনের ভবিষ্যৎকে অনেক বেশী সম্ভাবনাময় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর তাই বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষ ওয়েব ডিজাইন ক্যারিয়ারকেই স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে গ্রহণ করে নিয়েছে।
ওয়েব ডিজাইনার হতে হলে কি কি শিখতে হবে?
একজন ওয়েব ডিজাইনার ওয়েবসাইট ডিজাইন করা ছাড়া আরো বিভিন্ন বিষয়ের জ্ঞান রাখেন।
ওয়েব ডিজাইন করার সময় বেশকিছু বিষয় সামনে চলে আসে। তারমধ্যে এসইও (SEO) হলো অন্যতম।
যে কোন ধরণের ওয়েবসাইট হোকনা কেন, কাঙ্খিত সেই সাইটটি ডিজাইন করার সময় এসইও -এর রিকমান্ডেশন ফলো করেই ডিজাইন করতে হবে।
এসইও -এর রিকমান্ডেশন ফলো করে ডিজাইন করার মানে হলো ইউজার ফ্রেন্ডলি ডিজাইন এবং সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজড।
আপনি যদি স্ট্যান্ডার্ড রুলস ফলো করে ওয়েব ডিজাইনার হতে চান তবে আপনাকে যা যা শিখতে হবে তা নিম্নরূপঃ
- এইচটিএমএল (HTML),
- সিএসএস (CSS),
- জাভাস্ক্রিপ্ট (JavaScript),
- জেকুয়েরি (Jquery),
- বুটস্ট্রাপ (Bootstrap),
- পিএইচপি (PHP),
- গ্রাফিক্স ডিজাইন (Graphics design),
- এসইও (SEO) ইত্যাদি।
উল্লেখ্য বিষয় হলো, আপনাকে ওয়েব ডিজাইনার হওয়ার জন্য এসইও এক্সপার্ট বা গ্রাফিক্স ডিজাইনার হওয়ার প্রয়োজন হবে না। তবে এই বিষয়গুলোর জ্ঞান রাখা একজন প্রফেশনাল ওয়েব ডিজাইনারের জন্য খুবই জরুরি।
ওয়েব ডিজাইন ক্যারিয়ার
Web Design কে ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়ার কথা আসলেই বেশীর ভাগ মানুষ জানতে চাইবেন যে, ওয়েব ডিজাইনারের বেতন কত?
এই প্রশ্নটির এক কথায় কোন উত্তর দেওয়া পসিবল না।
মনে করুন, আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন কত টাকা আয় করে? তবে আপনি কি এর নির্দিষ্ট কোন উত্তর দিতে পারবেন? অবশ্যই না।
এর কারণ হলো, ব্যবসায়ীদের ব্যবসার একটি স্তর রয়েছে। যে ব্যবসায়ী শহরে ব্যবসা করে তার তুলনায় গ্রামের ব্যবসায়ীর আয় কম। আবার এলাকা বা দেশভেদে ব্যবসার পণ্যসামগ্রীর বাজার মূল্যে কম-বেশী হয়।
এজন্য নির্দিষ্ট করে বলা পসিবল হয় না যে ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন কত টাকা আয় করে। ওয়েব ডিজাইনারের বেতনটাও ঠিক তেমন।
তবে ওয়েব ডিজাইনার হিসেবে কোন কোম্পানিতে পার্মানেন্ট জব করলে বেতনটা একটি নির্দিষ্ট সংখ্যায় চলে আসে।
যেমনঃ আপনি আমার কোম্পানির ওয়েবসাইটের দায়িত্বে থাকবেন এবং ওয়েবসাইটের উন্নয়ন ও সমস্যাগুলোর সমাধান করবেন। এজন্য আমার কোম্পানি থেকে প্রতি মাসে ৮০ হাজার টাকা সেলারি ধরা হবে। কোম্পানি অনুযায়ী সেলারি আরো বেশী হতে পারে।
কোম্পানির সেলারির বাইরে যদি ইনকাম করার সুযোগ না থাকে তবে বেশীরভাগ ওয়েব ডিজাইনার কোন কোম্পানিতে পার্মানেন্ট জব করে না।
কারণ, পার্মানেন্ট জব করার থেকে ওয়েব ডিজাইনের উপর ফ্রিল্যান্সিং করলে আরো বেশী বেনিফিট পাওয়া যায়। এমনকি নির্দিষ্ট সেলারি থেকে বেরিয়ে অনেক বেশী আয় করার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
একজন ওয়েব ডেভেলপার ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে প্রতি মাসে $5,000 -$50,000 ইনকাম করতে পারে। এমনও নজির আছে ওয়েব ডেভেলপারদের মাসিক আয় লক্ষ ডলার ছাড়িয়ে যায়।
তবে আমাদের বাংলাদেশ থেকে এতটা এগিয়ে যাওয়া অনেকটা কঠিন বলা যায়। কিন্তু ওয়েব ডিজাইনের উপর ফ্রিল্যান্সিং করে $2,000 -$10,000 আয় করা ফ্রিল্যান্সার এদেশে অগণিত আছে।
তাছাড়া, আপনি যদি প্রোপারলি ওয়েব ডিজাইন শিখতে পারেন তবে দেশীও কোন কোম্পানিতে চাকরি করলেও ৫০ হাজার টাকার নিচে সেলারি হবে না এটা নিশ্চিত।
তাই ওয়েব ডিজাইনারের বেতন নিয়ে চিন্তা করার কোন প্রয়োজন হয় না। আর এই ধরণের বেতনে বাংলাদেশ থেকে ওয়েব ডিজাইন ক্যারিয়ার খুব ভালো করেই গুছানো সম্ভব।
আমি গ্রাফিক্স ডিজাইনের পাশাপাশি ওয়েব ডিজাইন নিয়েও কাজ করি। তবে আমি সাধারণত ওয়ার্ডপ্রেস এবং জুমলা সহ বিভিন্ন CMS এর উপর কাজ করি।
আমার পার্সোনাল অভিজ্ঞায় দেখেছি, একটি রেডিমেড থিম দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করে দিলেও কমপক্ষে $100 – 1,000 চার্জ করতে হয়। আর কাস্টোম থিম দিয়ে তৈরি করলে $1,500 – $5,000 চার্জ করা হয়।
এই টাকাটা আমাদের বাংলাদেশীর কাছে অস্বাভাবিক মনে হলেও বাহির বিশ্বের যে কোন ওয়েব সাইটে এই ধরণের বাজেট অত্যন্ত স্বাভাবিক।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথাঃ
আপনি যদি ওয়েব ডিজাইনকে প্রফেশন হিসেবে নিতে চান তবে ওয়েব ডিজাইন ক্যারিয়ার নিয়ে খুব বেশী চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। কারণ, ওয়েব ডিজাইনে যদি আপনার দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেন, তবে দেশে-বিদেশের যে কোন ক্লাইন্ট বা কোম্পানির প্রজেক্টে কাজ করার সুযোগ পাবেন।
আবার চাইলে পার্সোনাল এজেন্সির মাধ্যমে ওয়েব ডিজাইনের উপর সার্ভিস প্রোভাইড করে খুবই চমৎকার ভাবে নিজের জন্য ক্যারিয়ার বিল্ড করতে পারবেন।
বর্তমানে অনলাইন জগতে ওয়েব ডিজাইনের চাহিদা গগনচুম্বী বলা যায়। তাছাড়া বিশ্লেষকদের মতে ওয়েব ডিজাইনের ভবিষ্যৎও খুব ভালো। তাই আপনি যদি সম্ভাবনাময় কোন কাজ শিখতে চান তবে ওয়েব ডিজাইনকে নির্দ্বীধায় বেছে নিতে পারেন।