ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থায় আলিয়া মাদ্রাসার অবদান অনস্বীকার্য। যুগ যুগ ধরে এই মাদ্রাসাটি সুনামের সাথেই ইলমে ওহীর জ্ঞান শিক্ষার্থীদের মাঝে বিলিয়ে দিচ্ছে। লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীরা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে জ্ঞানার্জন করছে। আলিয়া মাদ্রাসার ক্লাসের নাম সমূহ কি এবং আলিয়া মাদ্রাসার সিলেবাস সম্পর্কে জানতে অনেকেরই কৌতুহল রয়েছে।
আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাটি অনেক প্রাচীন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা। যা অনেকটা কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রমের মতই প্রায়। যদিও আলিয়া মাদ্রাসা ও কওমি মাদ্রাসার পার্থক্য রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ কওমি মাদ্রাসার ক্লাসের নাম সমূহ
একটু ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখবেন যে, আলিয়া মাদ্রাসা প্রায় অনেকটা সাধারণ শিক্ষার সাথে মিলে যায়। বিশেষ করে আলিয়া মাদ্রাসার ক্লাসের নাম ও পরীক্ষার সমমানের কথা বিবেচনা করলে অনেকটা মিল পাওয়া যায়।
আলিয়া মাদ্রাসার ক্লাসের নাম সমূহ
আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা সিলেবাসে রয়েছে কুরআন, হাদিস, বিজ্ঞান, গণিত, ইংরেজিসহ সকল সাধারণ বিষয়। আলিয়া মাদ্রাসার স্নাতকোত্তর হলো কামিল। ইবতেদায়ী থেকে কামিল পর্যন্ত যেতে একজন শিক্ষার্থীকে মোট ১৭ বছর পড়তে হয়।
আলিয়া মাদ্রাসাতে ইবতেদায়ী থেকে কামিল পর্যন্ত ক্লাসের নাম সমূহ এবং ডিগ্রিকে যেভাবে বলা হয় তা নিচে উল্লেখ করা হলো। –
ইবতেদায়ী বা প্রাথমিক শিক্ষায় ৫ বছর-
- প্রথম শ্রেণি
- দ্বিতীয় শ্রেণি
- তৃতীয় শ্রেণি
- চতুর্থ শ্রেণি
- পঞ্চম শ্রেণি (ইবতেদায়ী)
ইবতেদায়ী হলো সাধারণ শিক্ষার ”পি এস সি” এর সমমান এবং কওমি মাদ্রাসারও ইবতেদায়ী এর সমমান ধরা হয়।
আরও পড়ুনঃ হলে সিটের জন্য আবেদন পত্র লেখার নিয়ম (কলেজ -বিশ্ববিদ্যালয়)
দাখিল বা মাধ্যমিক শিক্ষায় ৫ বছর –
- ষষ্ঠ শ্রেণি
- সপ্তম শ্রেণি
- অষ্টম শ্রেণি (জে ডি সি) সাধারণ শিক্ষায় ’জে এস সি’ এর সমমান।
- নবম শ্রেণি
- দশম শ্রেণি (দাখিল পরীক্ষা) সাধারণ শিক্ষায় ’এস এস সি’ এবং কওমি মাদ্রাসার ‘মুতাওয়াস ফিতাহ’ এর সমমান।
আলিম বা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষায় ২ বছর
- আলিম ১ম. বর্ষ
- আলিম ২য়. বর্ষ
আলিম হলো উচ্চ মাধ্যমিক স্তর যা সাধারণ শিক্ষায় ’এইচ এস সি’ এবং কওমি মাদ্রাসার ‘আল-মারহালা সানুবিয়াহ’ পরীক্ষার সমমান।
ফাজিল বা স্নাতক শিক্ষায় ৩ বছর
- ফাজিল ১ম. বর্ষ
- ফাজিল ২য়. বর্ষ
- ফাজিল ৩য়. বর্ষ
ফাজিল হলো স্নাতক ডিগ্রি (বিএসসি, বিএ, বিবিএ, এলএলবি, বিএসএস) যা সাধারণ শিক্ষায় অনার্স এবং কওমি মাদ্রাসায় ‘মারহালাতুল ফজীলত’ এর সমমান।
আরও পড়ুনঃ ইনকোর্স পরীক্ষা না দিতে পারায় আবেদন পত্র (নমুনা কপি)
স্নাতকোত্তর শিক্ষায় ২ বছর
- কামিল
স্নাতকোত্তরকে আলিয়া মাদ্রাসার ডিগ্রি অনুযায়ী ’কামিল’ বলা হয়। সাধারণ শিক্ষায় “এমএসসি, এমএ, এমবিএ, এলএলএম, এমএসএস” এবং কওমি মাদ্রাসার “মারহালাতুত তাকমীল” এর সমমান।
আলিয়া মাদ্রাসার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস এর মাধ্যমে ১৭৮০ সালে প্রথম কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়, আর এটাই ছিল আলিয়া মাদ্রাসা নামক শিক্ষা ব্যবস্থার শুরু। এর পর ধাপে ধাপে মাদ্রাসার পরিচালনা পর্ষদ এর মাধ্যমে মাদ্রাসাটির বিস্তার ঘটে।
কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত এই মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থা পূর্ব বাংলায় (বর্তমান বাংলাদেশে) ছড়িয়ে দিতে ১৮৭৩ সালে মহসিন ট্রাস্টের অর্থায়নে তিনটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়।
১. ঢাকা মাদ্রাসা – বর্তমান নাম ’কবি নজরুল সরকারি কলেজ, ঢাকা ও ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা)।’
২. চট্টগ্রাম মাদ্রাসা – বর্তমান নাম ’সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, চট্টগ্রাম ও হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।
৩. রাজশাহী মাদ্রাসা – বর্তমান নাম ’হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, রাজশাহী।
আরও পড়ুনঃ শিক্ষা সফরে যাওয়ার জন্য আবেদন পত্র (নমুনা কপি)
বাংলাদেশের আলিয়া মাদ্রাসার মধ্যে সরকারি মাদ্রাসা ও সাধারণ এমপিও ভুক্ত মাদ্রাসা রয়েছে।
উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী পরিসংখ্যানে দেখা যায় ২০২০ সালে ছোট-বড় আনুমানিক প্রায় ১৮,০০০ টি মাদ্রাসা রয়েছে।
শেষ কথাঃ
প্রিয় পাঠক, আলিয়া মাদ্রাসার ক্লাসের নাম সমূহ আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষা, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা ও আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষা ডিগ্রির সমমানের একটি গ্রাফ আপনাদের সামনে তুলে ধরার জন্যে।
আপনি আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী হোন অথবা যে কোনো শ্রেণিপেশার মানুষ হোননা কেন, আশাকরি এই ব্লগের মাধ্যমে আলিয়া মাদ্রাসার ক্লাসের নামের তালিকা সম্পর্কে জানতে পেরে উপকৃত হয়েছেন!
Add comment