কম্পিউটারের জনক কে : প্রযুক্তির সবচেয়ে বিস্ময়কর আবিস্কারের নাম কম্পিউটার। এটা বিজ্ঞানের বড় একটি সফলতাও বটে। প্রযুক্তিগত কৌশলগুলো কম্পিউটারের উপর নির্ভরশীল। বর্তমান বিশ্বে কম্পিউটারকে কেন্দ্র করে নানাবিধ বাণিজ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, ইন্ডাস্ট্রি ইত্যাদি গড়ে উঠেছে।
তবে কম্পিউটার একদিনে এত ডেভেলপ হয়ে যায়নি। এর পেছনে রয়েছে বিভিন্ন মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত গবেষণা ও পরিশ্রমের পর আজকের এই আধুনিক কম্পিউটার রূপ পেয়েছে।
কম্পিউটারের ইতিহাস অনেক রহস্যময় ইতিহাস। আজ আমরা জানবো, কম্পিউটার কি? আধুনিক কম্পিউটারের জনক কে? তার পাশাপশি কম্পিউটিংয়ের ইতিহাস সম্পর্কে ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা করা হলো।
Table of Contents
কম্পিউটার কি?
কম্পিউটার এমন একটি যন্ত্র যা মানুষের দেওয়া সুনির্দিষ্ট নির্দেশ অনুসরণ করে যে কোন গাণিতিক গণনা সংক্রান্ত কাজ খুব দ্রুতই সম্পাদন করতে পারে। কম্পিউটার (Computer) শব্দটি গ্রিক শব্দ।
যা “কম্পিউট” (compute) শব্দ থেকে উৎপত্তি হয়েছে। গ্রিক ভাষায় Compute শব্দের অর্থ হিসাব বা গণনা করা। আর কম্পিউটার (Computer) শব্দের অর্থ হলো গণনাকারী যন্ত্র।
আরও পড়ুনঃ নতুনদের জন্য কম্পিউটার শিক্ষা গাইড ও নির্দেশনা।
প্রাথমিক ভাবে এটি শুধু গণনাকারী যন্ত্র হিসেবে পরিচিত পেলেও আজ তা শুধু গণনাকারী যন্ত্রেই সীমাবদ্ধ নেই। প্রযুক্তির উদ্ভাবের পর কম্পিউটার অনেক শক্তিশালী যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। এমনটি প্রযুক্তির সকল সেক্টরে প্রধান যন্ত্র হিসেবে কম্পিউটার স্থান করে নিয়েছে।
প্রিয় পাঠক, ’কম্পিউটারের জনক কে’ এই প্রশ্নটির উত্তর জানার আগে চলুন কম্পিউটার বিজ্ঞানের ইতিহাস সম্পর্কে জেনে নিই।
কম্পিউটার বিজ্ঞানের ইতিহাস
প্রাগৈতিহাসিক যুগে গণনার যন্ত্র হিসেবে উদ্ভাবিত বিভিন্ন প্রচেষ্টাকে কম্পিউটার শুরুর ইতিহাস বলে মনে করা হয়। আদিযুগে মানুষ সংখ্যা বুঝানোর জন্য ঝিনুক, নুড়ি, দড়ির গিট ইত্যাদি ব্যবহার করত। পরবর্তীকালে গণনার কাজে বিভিন্ন কৌশল ও যন্ত্র ব্যবহার করে গননার কাজ করা হতো। তৎক্ষালীন সময়ে গণনার জন্য বিশেষ যন্ত্র হিসেবে অ্যাবাকাস (Abacus) নামক একটি গণনাকারী যন্ত্র ব্যবহার করা হতো।
ইতিহাসবিদরা মনে করেন, অ্যাবাকাস (Abacus) নামক যন্ত্রটিই কম্পিউটারের ইতিহাসে প্রথম যন্ত্র। এটা থেকেই মূলত কম্পিউটার আবিস্কারের সূচনা। অ্যাবাকাস (Abacus) নামক যন্ত্রটি প্রথম আবিষ্কৃত হয় খ্রিষ্টপূর্ব ২৪০০ সালে ব্যাবিলনের সময়ে।
আরও পড়ুনঃ ইমেইল পাঠানোর নিয়ম (কম্পিউটার ও মোবাইল)
খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০/৫০০ অব্দে মিশরে বা চীনে গণনা যন্ত্র হিসেবে অ্যাবাকাস তৈরি হয়। কালের আবর্তনে নাম পরিবর্তন করে কম্পিউটার রাখা হয়। এভাবেই চলতে চলতে বর্তমান প্রযুক্তির যুগে এসেও এই নাম অপরিবর্তনশীল থেকে যায়। বাংলার বুকে প্রথম কম্পিউটার প্রবেশ করে ১৯৬৪ সালে। (বাংলা বলতে ইতিহাসের পাতায় পশ্চিমবঙ্গের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।)
কম্পিউটারের জনক কে?
হাওয়ার্ড অ্যাইকন-কে কম্পিউটারের জনক বলা হয়। তবে হাওয়ার্ড অ্যাইকন সম্পর্কে বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়া বা গুগল থেকে তেমন কোন সুনির্দৃষ্ট তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি কোন বই- পুস্তকেও কম্পিউটারের প্রথম আবিস্কারক বা হাওয়ার্ড অ্যাইকন সম্পর্কে তেমন কোন গ্রহণযোগ্য তথ্য মিলেনি।
তাছাড়া কম্পিউটারের শুরুটা আসলে কিভাবে হয়েছিল, এই বিষয়েও সঠিক তথ্য পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকৃতপক্ষে হাওয়ার্ড অ্যাইকন-কে কেন কম্পিউটারের জনক বলা হয় এই প্রশ্নটি মানুষের কাছে আলোচনা-সমালোচনার পাত্র হিসেবে রহস্যময় রয়ে গেছে।
আধুনিক কম্পিউটারের জনক কে?
বিজ্ঞানী চার্লজ ব্যাবেজ-কে আধুনিক কম্পিউটারের জনক বলা হয়। তিনি ১৮১০ সালে সর্বপ্রথম যান্ত্রিক উপায় ব্যবহার করে সংখ্যা ও সারণী গণনা করার জন্য একটি যন্ত্র আবিষ্কারের কথা ভাবেন।
পরবর্তীতে তিনি তার ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে ১৮৩০ সালে তার কাঙ্খিত যন্ত্রটি আবিষ্কার করে ফেলেন। তবে তার সেই যন্ত্রটি কোন প্রকার বুদ্ধিমত্তা ছাড়া শুধু গণনার কাজই করতে পারত।
আরও পড়ুনঃ UpWork এ কি কি কাজ পাওয়া যায়?
বিজ্ঞানী চার্লজ ব্যাবেজ ডিফারেন্স ইঞ্জিন ও অ্যানালাইটিক্যাল ইঞ্জিন নামে দুইটি যান্ত্রিক কম্পিউটার তৈরি করেছিলেন। তার তৈরি অ্যানালাইটিকাল ইঞ্জিন যান্ত্রিকভাবে শুধু গাণিতিক কাজ সম্পাদন করতে পারত। মূলত এই যন্ত্রটিকেই আধুনিক কম্পিউটরের প্রথম সংস্করণ হিসেবে ধরে নেয়া হয় এবং সেটি অ্যানালিটিকাল কম্পিউটার হিসাবে পরিচিতি লাভ করে।
কিন্তু অর্থের অভাবে বিজ্ঞানী চার্লজ ব্যাবেজ অ্যানালাইটিকাল ইঞ্জিন তথা “অ্যানালাইটিকাল কম্পিউটার” তৈরিতে খুব বেশী এগোতে পারেননি। তবে তার তৈরিকৃত যন্ত্রটি খুব সহজে দ্রুততার সাথে বিভিন্ন গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে পারতো। সেই যন্ত্রটি অনেকটা আধুনিক কম্পিউটার এর সাথে মিলে যায়। এজন্যই বিজ্ঞানী চার্লজ ব্যাবেজ-কে আধুনিক কম্পিউটারের জনক বলা হয়।
গবেষকদের মতে ”আধুনিক কম্পিউটারের জনক কে” এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর হলো বিজ্ঞানী চার্লজ ব্যাবেজ। এই ব্যাপারে কারো দ্বীমত নেই।
বিজ্ঞানী চার্লজ ব্যাবেজ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
আধুনিক কম্পিউটারের জনক বিজ্ঞানী চার্লজ ব্যাবেজ এর জন্ম স্থান নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়া -এর তথ্য মতে তার জন্ম: ২৬ ডিসেম্বর ১৭৯১ লন্ডন শহরে এবং মৃত্যু ১৮ অক্টোবর ১৮৭১ (বয়স ৭৯) মারলেবন, লন্ডন, ইংল্যান্ড। তবে তার জন্মের বিষয়টা নিয়ে শতভাগ নিশ্চিত নই।
অক্সফোর্ড ডিকশনারি অফ বাওগ্রাফি অনুযায়ী তিনি সম্ভবত ৪৪ ক্রসবি রো, ওয়ালওয়ার্থ রোড, লন্ডন ইংলেন্ডে জন্ম গ্রহণ করেন। চার্লজ ব্যাবেজ এর ভাইপো জানান যে, বিজ্ঞানী চার্লজ ব্যাবেজ এর জন্ম গ্রহণ করেছিলেন ১৭৯১ সালে। বিজ্ঞানী চার্লজ ব্যাবেজ এর জন্মের বিষয়ে কোন সুনির্দৃষ্ট তথ্য এখনো মিলেনি।
আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ কি এবং এর জনক কে?
বিজ্ঞানী চার্লজ ব্যাবেজ ছিলেন একাধারে একজন ইংরেজ যন্ত্র প্রকৌশলী, গণিতবিদ, আবিষ্কারক ও দার্শনিক। ১৮২৮ সালে তিনি লুকাসিয়ান প্রফেসর হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ১৮৩৯ সাল পর্যন্ত এ পদে আসীন ছিলেন। ১৮ অক্টোবর ১৮৭১ সালে,৭৯ বছর বয়সে এখানেই চার্লস শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাকে লন্ডনের কেন্সাল গ্রিন কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। এই ছিল চার্লজ ব্যাবেজ এর সংক্ষিপ্ত আত্মজীবনী।
ডিজিটাল কম্পিউটারের জনক কে?
জন ভন নিউম্যান-কে ডিজিটাল কম্পিউটারের জনক বলা হয়ে থাকে। তিনি ছিলেন একজন হাঙ্গেরিয়ান-আমেরিকান গণিতবিদ, পদার্থবিদ, কম্পিউটার বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী এবং পলিম্যাথিক। তৎক্ষালীন সময়ে ভন নিউমানকে সবাই শীর্ষস্থানীয় গণিতবিদ হিসাবে মনে করতেন।
জন ভন নিউম্যান -এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
ভন নিউমানের জন্ম ২৮ ডিসেম্বর ১৯০৩ সালে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে, যা তখন অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। জাতীয়তায় তিনি হাঙ্গেরীয় এবং মার্কিন নাগরিক। বাসস্থান ছিল মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে।
জীবদ্দশায় তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরুস্কার অর্জন করেছিলেন। ২২৮২৪ গ্রহাণুটি ভন নিউমান তার সম্মানে নামকরণ করা হয়েছিল। ৮ ফেব্রুয়ারি , ১৯৫৭ (বয়স ৫৩) ওয়াল্টা রিড আর্মি মেডিকেল সেন্টার ওয়াশিংটন, ডি.সি. তে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
কম্পিউটারের প্রকারভেদ
- এনালগ কম্পিউটার
- ডিজিটাল কম্পিউটার
- হাইব্রিড কম্পিউটার
- সুপার কম্পিউটার
- মেইনফ্রেম কম্পিউটার
- মিনি কম্পিউটার
- মাইক্রো কম্পিউটার
- ডেস্কটপ কম্পিউটার
- ল্যাপটপ কম্পিউটার
উপরোল্লেখিত কম্পিউটারের প্রকারভেদ সম্পর্কে পরবর্তীতে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথাঃ
কম্পিউটারের জনক কে? এই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর হিসেবে আমাদের জানামতে কোন গ্রহণযোগ্য সোর্স নেই। তবে সুপার কম্পিউটার, ডিজিটাল কম্পিউটার বা আধুনিক কম্পিউটারের জনক কে, এই বিষয়ে সুষ্পষ্ট এবং যথাযথ সোর্স রয়েছে।
কম্পিউটার আবিস্কারের প্রাথমিক পর্যায়ে কম্পিউটারের নাম ও ব্যবহারের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। তবে কালক্রমে সবই পবিবর্তন হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে কম্পিউটারের র্যাম ১৬ থেকে ৬৪ কেবি, রোম- ৩২ থেকে ৬৪ কেবি এই ধরণের ছিল। যদিও বিষয়টা আমাদের কাছে হাস্যকর মনে হচ্ছে। কাজের ধরণ অনুযায়ী তৎক্ষালীন সময়ে এটাই ছিল তাদের জন্য সুপারফাস্ট কম্পিউটার।
আমার একটি অভিজ্ঞতা হলো, ২০১২ সালে আমি যখন প্রথম নিজস্ব ল্যাপটপ ব্যবহার করি, তখন সেটার কনফিগারেশন ছিল ডুয়ের কোর প্রসেসর। র্যাম ছিল ১ জিবি এবং রোম ছিল ১২৮ জিবি। তবে পরবর্তীতে এটা আপডেট করে ৩৫০ জিবি করা হয়েছিল। যাইহোক, এটা শেয়ার করার অর্থ হলো তখন আমি ডুয়েল কোর প্রসেসরে ১ জিবি র্যাম ব্যবহার করতাম।
আরও পড়ুনঃ ইমেইল ও জিমেইল এর পার্থক্য কী?
মজার বিষয় হলো তখন ল্যাপটিতে দুইভাই মিলে গেম খেলতাম। আমার কাছে মনে হতো ল্যাপটপটি খুবই ফাস্ট। এটা তৎকালীন সময়ের কথা বলছি। অথচ, আজ কোর আই থ্রি ৮/১২ জিবি র্যাম, রোম ১ হাজার জিবি + এবং এসএসডি, গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করেও তেমন স্পিড মনে হয় না। আসলে এটাই টেকনলজির একটি বিশেষত্ব। দিন দিন আপডেট ও উন্নতির দিকে যাচ্ছে।
টেকনোলজির অগ্রগতির দিকে তাকালে মনে হয় খুব শিঘ্রই এমন একটি সময় আসতে যাচ্ছে, যখন কম্পিউটারের প্রসেসর স্পিড, র্যাম, রোম ও গ্রাফিক্স কার্ডের স্পিড সবই আনলিমিটেড হয়ে যাবে। তখনকার প্রজন্ম আমাদের এই কথাগুলো শুনলে আমাদেরকেও আদিযুগের মানুষ বলে হাসাহাসি করবে! এটাই বাস্তবতা। তবে ভবিষ্যতের জ্ঞান পরাক্রমশালী আল্লাহই ভালো জানেন।
প্রিয় পাঠক, আমি আশা করি আধুনিক কম্পিউটারের জনক কে এবং কম্পিউটার সংক্রান্ত বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে আপনি জানতে পেরেছেন। এই বিষয়ে আপনার কোন মন্তব্য থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করুন।
লেখাটি অনেক বড়। পড়তে অনেক সময় লেগেছে। তবুও পুরোটা লেখা পড়েছি। মজাও পেয়েছি, ভালোও লেগেছে। জানার মতো অনেক কিছুই আছে লেখাটিতে। এগিয়ে যান ভাই
সুন্দর একটি মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ প্রিয়!
মাশাআল্লাহ নকীব ভাই। আপনার মাধ্যমে অনেক কিছুই জানা হলো।
পাশে থাকার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
নকীব ভাইয়ের লেখাগুলো বরাবরের মতই চমৎকার।
ধন্যবাদ ভাই।