বিশ্ব খ্যাত বিজ্ঞানীদের মাঝে স্যার আইজ্যাক নিউটন অন্যতম। নিউটনের সূত্র সমূহ বিভিন্ন ঘটনাবলীর ব্যাখ্যা করে বিজ্ঞান মহলে প্রচুর সাড়া ফেলেছে। স্যার আইজ্যাক নিউটনের তিনটি সূত্র গতিসূত্র নামেও পরিচিত।
নিউটনের গতিসূত্রগুলো প্রকৃতির তিনটি নিয়মকে ব্যাখ্যা করে, যা চিরায়ত বলবিদ্যার ভিত্তি স্বরূপ। এখানে নিউটনের ১ম ২য় ৩য় সূত্র গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো –
নিউটনের প্রথম সূত্র
নিউটনের ১ম সূত্র, যাকে জড়তার সূত্রও বলা হয়। তার সূত্র মতে – বাইরে থেকে কোন বল স্থির বস্তুর উপর প্রয়োগ না হলে স্থির বস্তুর অবস্থান কখনও পরিবর্তন হবে না এবং গতিশীল বস্তু চিরকাল সমবেগে সরলরেখায় গতিশীল থাকবে।
এই সূত্রটি বলে যে একটি বস্তুর গতি পরিবর্তনের জন্য একটি বাহ্যিক শক্তি প্রয়োজন। এই শক্তিটি বল হতে পারে, বা এটি ঘর্ষণ বা অন্য কোনও প্রতিরোধী শক্তি হতে পারে।
নিউটনের ১ম সূত্র উদাহরণ:
নিউটনের প্রথম সূত্রটি আমাদের চারপাশের বিশ্বের অনেক ঘটনা ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করে। যেমন, এই সূত্রের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায়, কেন একটি গাড়ি থামাতে গেলে তাতে ব্রেক লাগাতে হয়, এবং কেন একটি বল মাটিতে ফেলে দিলে তা থামে না।
নিউটনের সূত্র সমূহের মধ্যে প্রথম সূত্রটি পদার্থবিদ্যার অন্যতম মৌলিক সূত্র। এটি আমাদের চারপাশের বিশ্বকে সহজ ভাবে বোঝার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র
নিউটনের ২য় সূত্র হল নিউটনের তিনটি গতিসূত্রের মধ্যে দ্বিতীয়টি। এটি বল এবং ত্বরণের মধ্যে সম্পর্ক বর্ণনা করে।
সূত্রটি ইংরেজিতে এই ভাবে লেখা যায়:
F=ma
এখানে,
F হলো বল (Force)
m হলো বস্তুর (ভর) দ্রবণমান (Mass)
a হলো বস্তুর ত্বরণ (Acceleration)
এই সূত্রটি বলে যে, একটি বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল বস্তুর ভর এবং ত্বরণের গুণফলের সমান। অর্থাৎ, একটি বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল যত বেশি হবে, বস্তুর ত্বরণও তত বেশি হবে। এবং একটি বস্তুর ভর যত বেশি হবে, বস্তুর ত্বরণও তত কম হবে।
নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, এটি গাড়ির ত্বরণ, বাতাসের প্রতিরোধ, এবং মহাকর্ষের মতো ঘটনাগুলোকে ব্যাখ্যা করতে ব্যবহার করা হয়।
নিউটনের ২য় সূত্র উদাহরণ:
নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রটিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে। যেমন, যখন ড্রাইভার একটি গাড়ি চালায়, তখন সে গাড়ির উপর একটি বল প্রয়োগ করো। এই বলটি গাড়িকে ত্বরান্বিত করে। গাড়ির ভর যত বেশি হবে, তত বেশি বল প্রয়োগ করতে হবে।
নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রটিকে ব্রেক করার ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যেতে পারে। যখন ড্রাইভার একটি গাড়িকে ব্রেক করে, তখন সে গাড়ির উপর একটি বিপরীত বল প্রয়োগ করে। এই বলটি গাড়িকে ধীর করে দেয়। গাড়ির ভর যত বেশি হবে, তত বেশি বল প্রয়োগ করতে হবে।
নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রটি পদার্থবিদ্যার একটি মৌলিক সূত্র। এটি আমাদের চারপাশের জগতের বিভিন্ন ধরণের ঘটনাকে ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করে।
এই সূত্রটি প্রথমবার নিউটন দ্বারা উল্লেখ করা হয়েছে তার গ্রন্থ “প্রিন্সিপিয়া” এ (Philosophiæ Naturalis Principia Mathematica) যেখানে এই সূত্রটি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছিল।
নিউটনের তৃতীয় সূত্র
নিউটনের ৩য় সূত্রটি হল বলবিদ্যার একটি মৌলিক সূত্র। যা বলে যে, যেকোনো ক্রিয়ার একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে। অর্থাৎ, যখন আপনি কোনও বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করবেন, তখন সেই বস্তুও আপনার উপর সমান ও বিপরীতমুখী বল প্রয়োগ করে।
নিউটনের তৃতীয় সূত্রটিকে প্রায়শই “প্রতিক্রিয়া নেই, ক্রিয়াও নেই” বা “প্রতিক্রিয়া সমান ও বিপরীত” হিসাবে বলা হয়।
নিউটনের ৩য় সূত্র উদাহরণ:
নিউটনের তৃতীয় সূত্রটিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে। যেমন, যখন একজন খেলোয়াড় একটি বলকে লাথি দেয়, তখন বলটিও তার পায়ের উপর সমান ও বিপরীতমুখী বল প্রয়োগ করে। এই বলটিই খেলোয়াড়কে পিছনে ধাক্কা দেয়।
নিউটনের তৃতীয় সূত্র উদাহরণ হিসেবে আকাশযানের উড্ডয়নেও প্রয়োগ করা যেতে পারে। যখন একটি আকাশযানের ইঞ্জিন জ্বালানি পোড়িয়ে দেয়, তখন ইঞ্জিনটি গ্যাসকে পিছনের দিকে নিক্ষেপ করে। এই গ্যাসের পিছনের দিকের প্রতিক্রিয়াই আকাশযানটিকে সামনের দিকে চালিত করে।
নিউটনের তৃতীয় সূত্রটি হল বলবিদ্যার একটি মৌলিক সূত্র যা আমাদের চারপাশের বিশ্বকে বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই সূত্রটি আমাদেরকে বল কীভাবে কাজ করে এবং কীভাবে এটি বস্তুর গতিকে প্রভাবিত করে তা বুঝতে সাহায্য করে।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, স্যার আইজ্যাক নিউটনের গতিসূত্রসমূহ মোট তিনটি। আমরা এই ব্লগে নিউটনের ১ম ২য় ৩য় সূত্র সমূহের ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ বর্ণনা করেছি। আশাকরি আপনারা নিউটনীয় বলবিদ্যা সূত্র সমূহের জ্ঞান এই ব্লগ থেকে অর্জন করতে পেরেছেন।
Add comment