ওয়ার্ডপ্রেস কি? ওয়ার্ডপ্রেসের সুবিধা সমূহ

ওয়ার্ডপ্রেস কি?

ইন্টারনেট ব্যবহারে আমরা প্রতিনিয়ত যে ওয়েবসাইট গুলো ব্রাউজ করি সবই মূলত সফটওয়্যার। ওয়ার্ডপ্রেসও এমন একটি সফটওয়্যারের অন্তর্ভূক্ত। আমরা যারা ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আছি, আমাদের প্রায় সবাই কোনোনা কোন ভাবে ওয়ার্ডপ্রেস এর নাম শুনেছি। এমনকি নিজের জানা অথবা অজানাতেই ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেছি। ওয়ার্ডপ্রেস কি এবং ওয়ার্ডপ্রেস কেন এত জনপ্রিয় এই বিষয়বস্তু নিয়েই আজকের আলোচনা। চলুন জেনে নিই ওয়ার্ডপ্রেস এর আদ্যোপান্ত।

ওয়ার্ডপ্রেস কি?

WordPress মূলত একটি সিএমএস (CMS) সফটওয়্যার। যেটা ওয়েবসাইট তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। সিএমএস (CMS) এর পূর্ণরূপ হচ্ছে কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (Content management system)। অর্থাৎ, এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে আপনার যে কোন কন্টেন্টকে ইন্টারনেটে সবার সামনে গুছালো ভাবে প্রদর্শন করতে পারবেন।

২০২ সালের মে মাসের তথ্য অনুযায়ী ইন্টারনেটে ছড়িয়ে থাকা শীর্ষ ০ মিলিয়ন ওয়েবসাইটের মধ্যে ৪.৪% ওয়েবসাইট ’ওয়ার্ডপ্রেস’ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে!

সারা বিশ্বেজুড়ে ওয়ার্ডপ্রেসের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। অটোমেটিক (Automatic) নামে আমেরিকান একটি প্রযুক্তি কোম্পানি ওয়ার্ডপ্রেস সফটয়্যারটি তৈরি করেছে। ওয়ার্ডপ্রেস প্রথম রিলিজ হয় ২৭ মে ২০০৩ সালে। যা আজ থেকে প্রায় ৯ বছর আগে।

পড়ার সাজেশনঃ
কিভাবে ব্লগিং শুরু করবো?
গ্রাফিক্স ডিজাইন কি এবং গ্রাফিক্স ডিজাইন কত প্রকার?

ওয়ার্ডপ্রেস কিভাবে কাজ করে?

ওয়ার্ডপ্রেস তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে পিএইচপি (PHP) ল্যাঙ্গুয়েজ। যা মাইএসকিউএল (MySQL) বা মারিয়াডিবি (MariaDB) ডেটাবেজ কর্তৃক পরিচালিত ওপেন সোর্স ব্লগিং সফটওয়্যার।

ওয়ার্ডপ্রেস সফটওয়্যার এর বর্তমান ভার্সন ৬ এবং GNU GPLv2+ লাইসেন্সে তা বিশ্বব্যাপী সরবারহ করা হচ্ছে। ওয়ার্ডপ্রেস মূলত ওয়েবসাইট তৈরির সফটওয়্যার। এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে যে কোন ধরণের ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন।

WordPress Release হওয়ার পর থেকে এর ব্যবহার চতুর্দিকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। খুব সহজেই জয় করে নেয় ওয়েবসাইট প্রেমী কোটি কোটি মানুষের হৃদয়।

ওয়ার্ডপ্রেস ’প্লাগইন’ ফিচারে সমৃদ্ধ হওয়ায় নিজের মতো করে প্রয়োজন অনুযায়ী এতে অগনিত ফাংশন তৈরি করা যায়। অর্থাৎ একটি ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনি যে কোন ধরণের ডিজাইন কোডিং না জানা সত্ত্বেও করতে পারবেন।

ওয়ার্ডপ্রেস প্লাগইন কি?

ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকার প্রধান একটি কারণ হলো এর প্লাগইন সুবিধা। প্লাগইন মূলত ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটে আলাদা করে ফাংশন যুক্ত করার একটি সিস্টেম।

প্লাগইন ব্যবহার করে আপনার ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটে যে কোন ধরণের ফিচার/অপশন যুক্ত করতে পারবেন।

ওয়ার্ডপ্রেসের সুবিধা সমূহ

ওয়ার্ডপ্রেস কিভাবে এত দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠলো, তার বেশ কিছু কারণ বর্ণনা করা যাক। তাছাড়া, ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহারকারী হিসেবে আপনি কেমন সুবিধা পাবেন তা জেনে নেওয়া যাক।

() ’ওয়ার্ডপ্রেস’ অফিসিয়াল ভাবে একটি ওপেন সোর্স সফটওয়্যার, যেটা ব্যবহার করার জন্য আপনাকে কোন প্রকার অর্থ খরচ করতে হবে না।

(২) ওয়ার্ডপ্রেসে রয়েছে খুবই সুন্দর এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেস, যা খুব সহজেই ব্যবহারযোগ্য। আপনি যদি একবারে নতুনও হন তবুও আপনি ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করতে পারবেন।

(৩) ওয়ার্ডপ্রেসে রয়েছে লক্ষ লক্ষ থিম এবং প্লাগইন ডাইরেক্টরি। যা আপনি ফ্রিতেই ব্যবহার করতে পারবেন এবং আপনার কাঙ্খিত ওয়েবসাইটকে নিজের মতো সাজাতে পারবেন।

(৪) ওয়ার্ডপ্রেস সফটওয়্যার ব্যবহার করে আপনি যে কোন ধরণের ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন। এখানে কোন প্রকার বাঁধা নেই।

(৫) ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করার জন্য আপনাকে কোন প্রকার কোডিং জানার প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ, এইচটিএমএল, সিএসএস, জাভাস্ক্রিপ্ট ইত্যাদি কোনকিছু না জেনেই থিম এবং প্লাগইনের সাহায্যে আপনার কাঙ্খিত কাজ সম্পাদন করতে পারবেন।

(৫) ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটে কন্টেন্ট লেখার জন্য রয়েছে খুবই ইউজার ফ্রেন্ডলি এডিটর। যা ব্যবহার করে আপনার কন্টেন্ট খুব চমৎকার ভাবে সাজাতে পারবেন।

(৬) কন্টেন্টের মাঝে ছবি বা যে কোন ধরণের ফাইল যুক্ত করার জন্য রয়েছে মিডিয়া লাইব্রেরী। এটা আপনার কন্টেন্টকে দর্শকদের কাছে গুছালো ভাবে তুলে ধরার জন্য যথেষ্ট।

পড়ার সাজেশনঃ
সেরা ০ টাকা ইনকাম করার ওয়েবসাইট
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি?

এক কথায় বলতে গেলে এভাবে বলা যায় “ওয়ার্ডপ্রেসে কি নাই”! আপনার প্রয়োজন হবে এমন সকল ধরণের ফিচার দিয়ে সমৃদ্ধ করা হয়েছে ওয়ার্ডপ্রেসকে। সুতরাং, ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীদের মাঝে এজন্যই ওয়ার্ডপ্রেস অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

ওয়ার্ডপ্রেস সিকিউরিটি

অনেক মানুষ আছে যারা ওয়ার্ডপ্রেস সিকিউরিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলে। বিশেষ করে নতুনদের মাঝে অনেকেই বলে ওয়ার্ডপ্রেস নাকি সিকিউরিটির দিক দিয়ে খুবই দুর্বল। এটা চরম একটি বানোয়াট মিথ্যা কথা! ওয়ার্ডপ্রেস যদি তেমন সিকিউরিটি প্রদান নাই করতো, তবে বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ০ মিলিয়ন ওয়েবসাইটের মধ্যে ৪.৪% ওয়েবসাইট ব্যবহারকারী ’ওয়ার্ডপ্রেস’ ব্যবহার করতো না।

বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার প্রকৌশলী ওয়ার্ডপ্রেস সফটওয়্যারকে পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। ফলে এটার ব্যবহার যথেষ্ট নিরাপদ। পৃথিবীর অনেক বড় বড় কোম্পানী-প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ডপ্রেস CMS সফটওয়্যার ব্যবহার করছেন। তারমধ্যে রয়েছেঃ Walt Disnep, BBC Amerika, Bloomberg Professional, Microsoft & Facebook News center, The Wall Street Journal, Harvard University, Vogue (INDIA) সহ আরো বিভিন্ন জনপ্রিয় কোম্পানি-প্রতিষ্ঠান।

ওয়ার্ডপ্রেস একটি সফটওয়্যার। তার নিজস্ব সিকিউরিটি খুবই শক্তিশালী। আপনি যখন ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করে আপনার জন্য একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেন, তখন সিকিউরিটির দায়িত্বটা আপনার উপরই থাকে। তবুও ওয়ার্ডপ্রেস আপনাকে অনেক ভালো সিকিউরিটি প্রদান করে। আপনি যদি ওয়ার্ডপ্রেস এর নিয়ম ভঙ্গ না করেন, তবে আপনার সাইট কখনই সিকিউরিটি ইস্যুতে সমস্যা হবে না।

আপনার সাইটে কখনই ক্র্যাক থিম বা প্লাগইন ব্যবহার করবেন না। ভাইরাসযুক্ত কন্টেন্ট সাইটে প্রয়োগ করবেন না। লিগ্যাল ভাবে সাইট যদি চালাতে পারেন এবং যদি নিয়মিত সাইটকে আপডেট রাখেন, তবে নিশ্চিতভাবে ওয়ার্ডপ্রেস নিয়ে কাজ করতে পারেন। আমি এবং আমাদের মতো কোটি কোটি মানুষ ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করছে এবং এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলছে।

ওয়ার্ডপ্রেস কি? ওয়ার্ডপ্রেসের সুবিধা সমূহ
ওয়ার্ডপ্রেস কি? ওয়ার্ডপ্রেসের সুবিধা সমূহ

ওয়ার্ডপ্রেস কেন এত জনপ্রিয়?

প্রত্যেকটা জনপ্রিয় বিষয়ের পেছেনে কিছু রহস্য থাকে। ওয়ার্ডপ্রেস জনপ্রিয় হওয়ার কারণ হলো এতে রয়েছে খুবই সুন্দর এবং স্মার্ট একটি ইন্টারফেস, যা অনবিজ্ঞ মানুষও তা ব্যবহার করে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তাছাড়া ওয়ার্ডপ্রেস এর রয়েছে নিজস্ব বিশাল ফ্রি থিম এবং প্লাগইন ভান্ডার, যেখান থেকে লক্ষ লক্ষ থিম এবং প্লগাইন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ব্যবহার করতে দেয়।

আপনি ইচ্ছে করলেই ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটকে নিজের মতো করে কাস্টোমাইজ করতে পারবেন। তাছাড়া, ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটে ব্যবহার করার জন্য রয়েছে বিভিন্ন প্রিমিয়াম থিম এবং প্লাগইন সুবিধা। এই সব কিছু মিলিয়েই ওয়ার্ডপ্রেস এত জনপ্রিয়।

ওয়ার্ডপ্রেস সফটয়্যার ব্যবহারে করে ওয়েবসাইট তৈরিতে বিশেষ কিছু সুবিধা রয়েছে। কাস্টম সাইটের মতো এখানে কোন ঝামেলা নেই। তেমন খরচও নেই। ডোমেইন হোস্টিং ক্রয় করে ওয়ার্ডপ্রেসের সাহায্যে যে কোনো ধরণের ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়।

পড়ার সাজেশনঃ
অনলাইনে ইনকাম বাংলাদেশী সাইট
ফ্রিল্যান্সিং কি হালাল নাকি হারাম?

একজন ওয়েবমাস্টার চাইলে নিজের মতো করে ডিজাইন করতে পারে। প্রয়োজনীয় যাবতীয় ফিচার ওয়ার্ডপ্রেসে এভেলেবেল। অর্থাৎ, একজন ওয়েবমাস্টারের জন্য একটি ওয়েবসাইটে যত রকমের ফিচার প্রয়োজন হয়, বিভিন্ন প্লাগইন ও টুলসের ব্যবহারে তা এখানে করা যায়।

সবচেয়ে বড় কথা হলো ওয়ার্ডপ্রেস থেকে তৈরি করা ওয়েবসাইটের সমস্ত কন্ট্রোল একজন ওয়েবমাস্টারের হাতেই থাকে। ওয়েবমাস্টার চাইলে যে কোনো সময় ওয়েবসাইটকে বন্ধ করতে পারে, আবার চালু করতেও পারে। এখানে ওয়ার্ডপ্রেস কর্তৃপক্ষের কোনো বাঁধা নেই।

যে কেউ চাইলে ওয়ার্ডপ্রেস থেকে নিজের জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারে। এর জন্য ওয়ার্ডপ্রেস কর্তৃপক্ষকে কোনো প্রকার পেমেন্ট দিতে হয় না। এজন্যই মূলত ওয়ার্ডপ্রেস সবার কাছে প্রিয়। আরো অনেক ফেসিলিটি আছে।

প্রিয় পাঠক, আশা করছি ‘ওয়ার্ডপ্রেস কি এবং ওয়ার্ডপ্রেসের সুবিধা সমূহ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এই বিষয়ে আরো কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

IT Nirman

যত জ্ঞান-ধন করেছি অর্জন জীবনের প্রয়োজনে,
তার সবটুকুই বিলাতে চাই সৃষ্টির কল্যাণে।

Add comment

Your Header Sidebar area is currently empty. Hurry up and add some widgets.