অনলাইন ইনকামগ্রাফিক্স ডিজাইনসাধারণ জ্ঞান

ইসলামের দৃষ্টিতে গ্রাফিক্স ডিজাইন কি হারাম?

ইসলামের দৃষ্টিতে গ্রাফিক্স ডিজাইন কি হারাম নাকি হালাল এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া সহ বিভিন্ন জায়গায় কথা বলতে শোনা যায়। এই প্রশ্নটি অবশ্যই ইসলাম ধর্মের অনুসারীরাই করে থাকেন। তাদের জন্যই এই আর্টিকেলটি তৈরি করা হয়েছে।

প্রযুক্তির এই যুগে গ্রাফিক্স ডিজাইন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ওতপ্রোত ভাবে জরিয়ে আছে। স্বভাবতই এই সেক্টরটি অর্থ উপার্জনের এক বিশাল সম্ভাবনাময় পেশায় পরিণত হয়েছে তাতে কোন প্রকার সন্দেহ নেই।

বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়া সহ পৃথীবির বিভিন্ন দেশের মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ গ্রাফিক্স ডিজাইন পেশায় জীবিকা অর্জন করছে।

এরই মধ্যে মসুলিমদের বৃহত্তম একটি জনগোষ্ঠী গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে কাজ করে।

আমিও সাধারণত Graphic Design নিয়ে কাজ করি। কাজ করতে গিয়ে আমি নিজেও একসময় Graphic Design এর হালাল -হারামের বিষয়টা নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ ছিলাম।

তারাপর বিভিন্ন আলেমদের শরণাপন্ন হয়েছি এবং নিজেও কুরআন-হাদিস ঘাটাঘাটি করার মাধ্যমে ইসলামের দৃষ্টিতে গ্রাফিক্স ডিজাইন কি হারাম নাকি হালাল তা জানতে পেরেছি।

আমি নিজেও যেহেতু Graphic Design এর কাজ করি এবং পেশা হিসেবে গ্রাফিক্স ডিজাইন এর ভবিষ্যত যেহেতু সম্ভাবনাময়, সেহেতু আপনাকেও জেনে রাখা উচিত গ্রাফিক্স ডিজাইন কি জায়েজ নাকি নাজায়েজ।

চলুন বিস্তারিত বিষয়বস্তু জেনে নেওয়া যাক।

গ্রাফিক্স ডিজাইন কি হারাম?

ইসলামি শরীয়ত কোন কিছুকেই অকারণে হারাম বলে না। যে বিষয় গুলোকে হারাম বলা হয় তা নিশ্চিতই আমাদের অকল্যাণকর বলেই হারাম বলে সাব্যস্ত করা হয়।

গ্রাফিক্স ডিজাইন এমন একটি বিষয় যেখানে চিত্র অঙ্কন বা নকশা জাতীয় কোন কিছু করা হয়।

গ্রাফিক্স ডিজাইন হালাল না হারাম তার একচেটিয়া কোন উত্তর নেই। বিস্তারিত বিষয়বস্তু জানার মাধ্যমে আপনি উত্তর খুঁজে পাবেন।

একটি প্রশ্নের মাধ্যমে উত্তরটি দিতে চাই।

আচ্ছা বলুন তো, গ্রাফিক্স ডিজাইন যদি হারামও হয় তবে কেন হারাম আর হালাল হলে কেনইবা হালাল?

বিভিন্ন হাদিস থেকে একটি বিষয় প্রমাণিত তা হলোঃ প্রাণীর ছবি অঙ্কন, ভাস্কর্য বা মূর্তি অঙ্কন এবং এগুলোকে যত্ন করা হারাম।

এর কারণ হলো এগুলো স্রষ্টার সৃষ্টি এবং তাঁর নিজস্ব সত্তাকে অস্বীকার ও ব্যাঙ্গ করার শামিল।

আর গ্রাফিক্স ডিজাইন করতে গিয়ে বেশীর ভাগ ডিজাইনার অজ্ঞতাবশত এই কাজগুলো করে।

প্রাণীর ছবি অঙ্কন, ভাস্কর্য বা মূর্তি অঙ্কন ইত্যাদি জাতীয় কাজ গুলো ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম। আর এগুলো করে অর্থ উপার্জনও হারাম।

তবে এই বলে বিষয়টা এমন না যে, গোটা গ্রাফিক্স ডিজাইন পেশাটিই হারাম।

মনে রাখবেন, কাগজে সংরক্ষিত পবিত্র কুরআন ও হাদিসের প্রতিটি পৃষ্ঠাকে যে প্রক্রিয়ায় ছাপানো হয়েছে তার সবই গ্রাফিক্স ডিজাইন এর অন্তর্ভুক্ত।

বিষয়টিকে আরো সুস্পষ্ট করা যেতে পারে।

মনে করুন, আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইন এর উপর ফ্রিল্যান্সিং করেন বা কোন প্রেসে কাজ করেন।

কাজ করতে গিয়ে একসময় দেখলেন আপনাকে দুটি কাজ করার বলা হচ্ছে।

এর একটি হলো ‘মদ বিক্রির বিজ্ঞাপন’ অপরটি হলো ’ওয়াজ মাহফিলের পোস্টার’।

এই দুটি বিষয়ই যেহেতু ডিজাইনের কাজ, তাই আপনার কাছে কাজ গুলো করে দেওয়ার জন্য তাকিদ দেওয়া হচ্ছে।

এখন আপনিই বলুন তো, এই দুটি কাজই কি আপনার জন্য হালাল নাকি হারাম?

আপনি যদি হালাল-হারামের পার্থক্য বুঝেন তবে মুসলিম হিসেবে অবশ্যই বলবেন, ‘মদ বিক্রির বিজ্ঞাপন’ ডিজাইন করাটা আমার জন্য হারাম।

কারণ, মদ পান ইসলামে কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ এবং হারাম বলে সাব্যস্ত।

আর ’ওয়াজ মাহফিলের পোস্টার’ ডিজাইন করাটা আমার জন্য হালাল। কারণ এটি শরীয়তের নিষিদ্ধ কোন কাজ না, বরং ইসলাম প্রচারে এটি তৈরি করার গুরুত্বও রয়েছে।

সুতরাং, গ্রাফিক্স ডিজাইনকে একচেটিয়া ভাবে হারাম বলার কোন সুযোগ নেই। আবার একচেটিয়া ভাবে হালাল বলারও সুযোগ নেই।

আপনার কাজের উপর হালাল-হারাম নির্ণয় করবে। এতে কোন সন্দেহ নেই।

গ্রাফিক্স ডিজাইনে যে কাজগুলো হালাল

একজন ডিজাইনার হিসেবে কোন ছবি, টেক্সট, বিভিন্ন নকশা ইত্যাদির মাধ্যমে মনের ভাব বা কল্পনাকে বাস্তবিক চিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলাকে গ্রাফিক্স ডিজাইন বলা যায়।

গ্রাফিক্স ডিজাইনে যে কাজগুলো হালাল এবং যেই কাজগুলো করতে শরীয়ত অনুমতি দেয়।

  • জামা-কাপড় ডিজাইন,
  • শাড়ি ডিজাইন,
  • টি-শার্ট ডিজাইন,
  • বইয়ের প্রচ্ছদ ডিজাইন,
  • পণ্যের সাইনবোর্ড ডিজাইন,
  • ব্যানার ডিজাইন,
  • পোস্টার ডিজাইন,
  • লোগো ডিজাইন,
  • বিলবোর্ড ডিজাইন,
  • ভিজিটিং কার্ড ডিজাইন,
  • বিয়ের কার্ড ডিজাইন,
  • বিজনেস কার্ড ডিজাইন,
  • হালখাতার কার্ড ডিজাইন,
  • মেমো ডিজাইন,
  • ভাউচার ডিজাইন ইত্যাদি।

এগুলো ছাড়াও আরো অনেক বিষয় আছে যেগুলো করতে শরীয়ত অুনমতি দেয়।

তবে মনে রাখবেন, এই ধরণের হালাল ডিজাইনের কাজগুলো করতে গিয়ে হারাম কোন কন্টেন্ট ব্যবহার করা যাবে না।

গ্রাফিক্স ডিজাইনে যে কাজগুলো হারাম

হালাল ডিজাইনের কাজও অনেক সময় হারাম কন্টেন্টের কারণে হারাম হয়ে যায়। আবার এমনও হয় যে, হালাল ডিজাইন হারাম কাজে ব্যবহার করলেও হালালটা হারাম হয়ে যায়।

গ্রাফিক্স ডিজাইনে যে কাজগুলো হারাম এবং যেই কাজগুলো করতে শরীয়ত অনুমতি দেয় না।

  • মানুষ, পশু-পাখি ও জীব-জন্তুর ছবি অঙ্কন করা।
  • মদ, জুয়া ও মাদক দ্রব্রাদির কোন ডিজাইন করা।
  • মূর্তি বা ভাস্কর্য অঙ্কন করা।
  • বেপর্দা নারীর ছবি, অশ্লীল দৃশ্য ডিজাইন করা ইত্যাদি।

এগুলো ছাড়াও আরো অনেক ডিজাইন আছে যেগুলো হারাম।

মনে রাখতে হবে ইসলাম যেই বিষয়গুলোকে করতে নিষেধ করেছে, সেই বিষয়গুলোকে হালাল মনে করে গ্রাফিক্স ডিজাইনের মাধ্যমে প্রমোট করাও হারাম।

আপনি যদি বিবেক দিয়ে চিন্তা করতে পারেন তবে নিজেই বুঝতে পারবেন কোন ডিজাইনটা হারাম।

গ্রাফিক্স ডিজাইন আয় কি জায়েজ?

যদিও ইতোমধ্যে গ্রাফিক্স ডিজাইন কি হারাম নাকি হালাল এ নিয়ে কথা বলেছি।

কিন্তু অনেকে এমনও প্রশ্ন করেন গ্রাফিক্স ডিজাইন আয় কি জায়েজ? এই প্রশ্নটির উত্তর সহজ।

যেই ধরণের ডিজাইনের কাজ করা হারাম, সে কাজের পারিশ্রমিক নেওয়াও জায়েজ হবে না।

আমি গ্রাফিক্স ডিজাইনের উপর ইন্টারন্যাশানাল ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলোতেও কাজ করেছি।

কাজ করতে গিয়ে অনেক হারাম কাজেরও অফার পেয়েছি। কিন্তু এই কাজ গুলো করতে আমার বিবেক আমাকে বাঁধা দিয়েছে।

আপনি যদি ক্যারিয়ারের জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখেন তবে একটি বিষয় লক্ষ্য করবেন যে, সাধারণত হারাম ডিজাইন করার জন্য বেশী টাকা অফার করা হয়।

তবে আপনাকে মুসলিম হিসেবে হালাল ডিজাইন গুলোই করতে হবে এবং হারাম থেকে বেঁচে থাকাই উত্তম।

শেষ কথাঃ

প্রিয় পাঠক, আমি চেষ্টা করেছি ”ইসলামের দৃষ্টিতে গ্রাফিক্স ডিজাইন কি হারাম নাকি হালাল” এই বিষয়টির সুস্পষ্ট বিশ্লেষণ করার জন্য।

আমি আশাবাদী আপনারা যারা গ্রাফিক্স ডিজাইনকে পেশা হিসেবে নিতে চান তারা এই আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়েছেন।

এই বিষয়ে যদি আপনার আরো কোন প্রশ্ন থাকে তবে কমেন্ট করতে ভুলবে না।

IT Nirman

যত জ্ঞান-ধন করেছি অর্জন জীবনের প্রয়োজনে, তার সবটুকুই বিলাতে চাই সৃষ্টির কল্যাণে।

Related Articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button
× How can I help you?

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker!