সৃষ্টিকূলের শ্রেষ্ঠ হিসেবে মানুষকে স্রষ্টা কর্তৃক মনোনীত করা হয়েছে। মানব জাতির শ্রেষ্ঠত্বের পেছনে বেশকিছু যুক্তি রয়েছে। তারমধ্যে প্রধানত একটি যুক্তি হলো মানুষ বিবেকবান প্রাণী। অর্থাৎ, মানুষ ভালো-মন্দের পার্থক্য করতে পারে। আবার এই গোটা মানব জাতির মধ্যে রয়েছে কিছু মহা-মানব রয়েছে। আপনি কি জানেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব কে?
প্রিয় পাঠক, “পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ কে” এ বিষয়েই আজ আমরা জানবো। বিশ্বব্যাপী যারা মানব সত্যতার কল্যাণের কথা বলে এবং গবেষণা করে, তাদের দেওয়া কিছু যুক্তি ও মনীষীদের দৃষ্টিভঙ্গির প্রেক্ষিতে আজ আমরা আলোচনা করবো। সেইসাথে “পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মানব কে” তাঁকে চিনতে চেষ্টা করবো। সুতরাং এই আর্টিকেলটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ হতে চলছে।
মহান ব্যক্তি কারা?
পৃথিবীর সকল মনীষী এবং সর্বজনীন স্বীকৃত সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে একটি বিষয় উঠে আসে যে, পৃথিবীর সবচেয়ে মহান ব্যক্তি কেবল তারাই, যারা নির্ভয়ে সত্যের পথে চলে এবং সৃষ্টির কল্যাণে নিয়োজিত থাকেন।
আমাদের সমাজে আমরা তাদেরকেই সবেচেয়ে ভালো মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করি যারা চারিত্রিক ব্যবহারে মুগ্ধতা ছড়ায়, মানবতার পক্ষে কথা বলে, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায় এবং সত্যের সাথে নির্ভয়ে পথ চলে।
আরও পড়ুনঃ অনলাইনে ই-পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম।
পৃথিবীতে এমনই কিছু মহা-মানবের জন্ম হয়েছিল, যাদের জন্মই যেন সৃষ্টির কল্যাণে। আমরা কি জানি, স্বয়ং স্রষ্টার পক্ষ হতে মানব জাতির মধ্য হতে কিছু মানুষকে মনোনীত করেছেন। যাদেরকে অতি উত্তম চরিত্রের অধিকারী হিসেবে স্রষ্টাই ভূষিত করেছেন। আমরা যাদেরকে নবী-রাসূল হিসেবে চিনি। নবীদের মধ্যে মর্যাদার দিক দিয়ে রাসূলগণ উত্তম।
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব কে?
স্রষ্টার স্বীকৃতিতেই আমরা প্রাণীকূলের শ্রেষ্ঠ। আমাদের শ্রেষ্ঠ জাতির মধ্যেও স্বয়ং স্রষ্টা তাঁর বিশেষ কিছু বান্দাকে অতি শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। যার মধ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে মহান ব্যক্তি হিসেবে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গোটা সৃষ্টির জন্য রহমত!
পৃথিবীর একমাত্র ব্যক্তি তিনি, যিনি জীবদ্দশায় একটা মিথ্যা কথা বলেননি! যার ব্যবহারে কোন সৃষ্টজীব কষ্ট পায়নি! তাঁর সারাটা জীবন কেটেছে মানব জাতির মুক্তির কথা ভেবে।
মনীষীদের চোখে হযরত মুহাম্মাদ (স.)
ধর্ম-জাত নির্বিশেষে পৃথিবীর সকল মানুষ একমতে উপনীত হলো, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম। তিনি যদিও (স্রষ্টার মনোনীত) ইসলাম ধর্মের অনুসারী। তবুও অন্যান্য ধর্মালম্বীদের কেহই “পৃথিবীর সবচেয়ে মহান ব্যক্তি হযরত মুহাম্মাদ স.” এই কথার দ্বীমত করেনি আজ পর্যন্ত।
পৃথিবীর সবচেয়ে মহান ব্যক্তি কে?
বিশ্ব বিখ্যাত লেখক ও গবেষক মাইকেল এইচ হার্ট ১৯৭৮ সালে The 100: A Ranking Of The Most Influential Persons In History নামে একটি বই লিখেছেন। বইটি পাঠক মহলে অনেক সাড়া পেয়েছে। বইটির প্রধান ভাষা হলো ইংরেজি। বাংলা সংস্করেণে বইটির নাম রাখা হয়েছে শ্রেষ্ঠ ১০০ মনীষীর জীবনী। (-মাইকেল এইচ হার্ট)।
বইটিতে পৃথিবীর প্রভাবশালী একশ শ্রেষ্ঠ মানবের সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরেছেন তিনি। তারমধ্যে বইটির শুরুতে প্রথম যার জীবনী তুলে ধরা হয়েছে, তাঁর নাম হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম।
আরও পড়ুনঃ নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম।
মাইকেল এইচ হার্ট থেকে শুরু করে জর্জ বার্নার্ড শ’ পর্যন্ত প্রায় সবাই একবাক্যে স্বীকার করেরে নিয়েছে যে, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব হলো হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম।
মাইকেল এইচ হার্ট যদিও খৃস্টান ধর্মের অনুসারী। চাইলেই তিনি তার ধর্মালম্বীদের কোন মনীষীকে সবার উপরে স্থান দিতে পারতেন। কিন্তু কেন তিনি “পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব কে, পৃথিবীর সবচেয়ে মহান ব্যক্তি কে, বিশ্বের সবচেয়ে ভালো মানুষ কে” এই খ্যাতিটা তার ধর্মালম্বীদের কোন মনীষীকে দেননি? চলুন জেনে নিই তার আদ্যোপান্ত।
পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ কে?
মাইকেল এইচ হার্ট তার গবেষণার মাধ্যমে ’পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব কে?’ এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বিভিন্ন মনীষীদের জীবনী সম্পর্কে জানেন। তারপর সকল মনীষীদের জীবনীর বিচার-বিশ্লেষন করার পর তিনি একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, পৃথিবীর সবচেয়ে আদর্শ ব্যক্তি হলো হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম।
এর কারণ হলো রাসূলুল্লাহ সা. -এর অসামান্য অবদান ছিল সমাজের প্রায় প্রতিটি সেক্টরেই। মাইকেল এইচ হার্ট এর শ্রেষ্ঠ ১০০ মনীষীর জীবনী বইটিতে যেই মনীষীদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে নিজস্ব যোগ্যতার বলে রাসূলুল্লাহ সা. প্রথম স্থান অর্জন করে নিয়েছেন।
যিশু-কে কেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব বলেননি?
খৃস্টানদের ধর্মীও বিশ্বাসে যিশু হলো তাদের প্রধান। মাইকেল এইচ হার্ট যিশু সহ প্রত্যেক মনীষীদের জীবন যাত্রার মান ও অবদানের প্রতি বিশেষ ভাবে লক্ষ্য রেখেছেন।
মাইকেল এইচ হার্ট বলেছিলেন, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব হিসেবে আমি যিশুকে প্রথম স্থানে রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু যিশুর মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ গুণের ঘাটতি অবলোকন করতে পারি, যে গুণগুলো রাসূলুল্লাহ সা. এর মাঝে বিদ্যমান ছিল।
আরও পড়ুনঃ ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড বের করার নিয়ম।
তারমধ্যে রাসূলুল্লাহ সা. তিনি একজন সফল রাস্ট্র নায়ক, শাসক এবং যোদ্ধা ছিলেন। এই গুণগুলো যিশুর মধ্যে ছিল না। এজন্য রাসূলুল্লাহ সা. এর নাম টপকিয়ে যিশুর নাম প্রথম স্থানে রাখা যথাযথ্য মনে করেননি।
তাই মাইকেল এইচ হার্ট ‘পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব কে’ এই প্রশ্নের গবেষনার প্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লামকে প্রথম স্থানে জয়যুক্ত করলেন।
মহানবী সাঃ এর জীবনী
নবুওয়তের ধারাবাহিকতা হযরত আদম আ. থেকে শুরু হয়েছে, আর তা শেষ হয়েছে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর মাধ্যমে। তিনিই সর্বশেষ নবী ও রাসূল। তাঁর পর এই পৃথিবীতে আর কোন নবী-রাসূল আসবেন না।
রাসূল স. এর জন্মঃ আজ থেকে সাড়ে চৌদ্দশত বছর আগে জাজিরাতুল আরবে (বর্তমান সৌদি আরব) তৎক্ষালীন কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল্লাহ এবং মাতার নাম আমেনা। বংশ পরিচয়ে তিনি জাতির পিতা হযরত ইব্বাহীম আ. এর বংশধর।
নবী ও রাসূল হিসেবে হযরত মুহাম্মদ স.
রাসূল পরিচিতিঃ আল্লাহ তা’আলা তাঁর একনিষ্ঠ সৎ বান্দারদের মধ্য হতে কাউকে নবী হিসেবে মনোনীত করার পর যাকে আসমানি কিতাব দিয়ে অনুগ্রহ করেন, তাকেই রাসূল বলা হয়।
নবী পরিচিতিঃ নবী বলা হয় তাকে, যাকে পূর্বের কিতাব অনুসারে আল্লাহ প্রদত্ত দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। অর্থাৎ, নবীদেরকে পূর্ববর্তী রাসূলের অনুসারী হয়ে কাজ করতে হয়।
উপরোক্ত সংজ্ঞা অনুযায়ী বুঝা যায়, প্রত্যেক রাসূলই নবী। কিন্তু প্রত্যেক নবী রাসূল নন। আলোচ্য বিষয় হলো আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম নবী ও রাসূল উভয় গুণে আল্লাহর পক্ষ হতে মনোনীত এবং সম্মানিত।
রাস্ট্র পরিচালনায় হযরত মুহাম্মদ স.
হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম তার জীবদ্দশায় বিভিন্ন কষ্টের সম্মুখীন হয়েছেন। খাবারের অভাবে তিনি অনেক সময় ক্ষুধার্থ রয়েছেন। রাস্ট্রীয় দায়িত্ব পাবার পরও তাঁর জীবন-যাপনে কোন রকম পরিবর্তন হয়নি। ভোগ বিলাসিতাকে তিনি তাঁর কাছে আশ্রয় দিতেন না।
আরও পড়ুনঃ দীর্ঘদিন মোবাইলের ব্যাটারি ভালো রাখার উপায়।
এজন্য রাস্টীয় দায়িত্ব নেবার আগে যেমন ছিলেন, রাস্টীয় দায়িত্ব পাবার পর ঠিক আগের মতই রয়ে যান। অর্থাৎ, আগে যেমন খাবার খেতেন, যেমন পোশাক পড়তেন ক্ষমতা লাভের পরও ঠিক আগের মতই সাধারণ জীবন -যাপন তিনি চালিয়ে যান।
শাসক হিসেবে হযরত মুহাম্মদ স.
হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম তিনি এমনই একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান শাসক ছিলেন, যিনি কখনই ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করেননি। তাঁর শাসন ব্যবস্থা পুরোটাই ছিল আল্লাহ প্রদত্ত এবং কুরআন ছিল রাস্টীয় সংবিধানের মূল মন্ত্র।
হযরত মুহাম্মাদ স. যতদিন শাসক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন, তাঁর শাসন ব্যবস্থার মধ্যে কোন প্রকার ক্রটি ছিল না। অসহায়, মজলুম, কন্যা শিশু এবং হক বঞ্চিত মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ছিল অনড়।
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী কে?
পৃথিবীর বয়সে রাস্ট্র পরিচালনার জন্য অগণিত মানুষ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু আদর্শ ও ন্যায় নীতির বাস্তবতায় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ’রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম’ প্রথম স্থানে। তাঁর ধারে-কাছেও পৃথিবীর কোন প্রধানমন্ত্রীর স্থান নেই।
শেষ কথাঃ
ভূপৃষ্টের কোন পণ্ডিত বা কোন মনীষীর যুক্তি, তর্ক -বিতর্কের মাধ্যমেও ”পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব কে, পৃথিবীর সবচেয়ে মহান ব্যক্তি কে” এই প্রশ্নগুলোর উত্তর রাসূল স. কে বাদ দিয়ে কেউ দিতে পারবেন না! এটাই বাস্তবতা।
কোন ইতিহাসবিদ বা বিবেকবান জ্ঞানী লোককে যদি আপনি প্রশ্ন করেন, Who is the best man in the world / পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ কে? নিশ্চয় সেই ব্যক্তি উত্তর দেবে ’রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’।
সকলেই জানি, প্রত্যেক নবী-রাসূল নিষ্পাপ। তাদের কোন প্রকার গুনাহ নেই। মুহাম্মাদ স. সকল নবী-রাসূলের উর্ধ্বে। পৃথিবীর শুরু থেকে কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর আদর্শের মত অতি উত্তম আদর্শের মানুষ এই পৃথিবীতে জন্ম হয়নি এবং হবেও না।
স্বয়ং পরাক্রমাশালী আল্লাহ নিজেই তাঁর গুণের প্রশংসা করেছেন। সুতরাং, ”পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব কে, পৃথিবীর সবচেয়ে মহান ব্যক্তি কে, পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ কে” এই প্রশ্নগুলোর উত্তর একই ব্যক্তির উপর যায়। সেই ব্যক্তিই হলো ’রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’।
Add comment