যারা নতুন গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখেছেন বা শিখতে চাচ্ছেন তাদের জন্য সেরা ১০ টি গ্রাফিক্স ডিজাইন টিপস শেয়ার করতে যাচ্ছি। আপনি যদি গ্রাফিক ডিজাইনে নতুন হয়ে থাকেন তবে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দৈনন্দিন জীবনে আমাদের প্রায় প্রত্যেকটি কাজের সাথে ওতপ্রোত ভাবে Graphics Design জড়িত। সোশ্যাল মিডিয়া ও প্রযুক্তির কল্যাণে গ্রাফিক্স ডিজাইন এখন ক্যারিয়ার গঠনে দারুণ সম্ভবনাও তৈরি করে দিয়েছে।
অনলাইন এবং অফলাইনে কম্পিউটার ভিত্তিক কাজ সমূহের মধ্যে সবচেয়ে চাহিদা সম্পূর্ণ কাজ হলো গ্রাফিক্স ডিজাইন।
আমি নাজিরুল ইসলাম নকীব, একজন প্রফেশনাল গ্রাফিক্স ডিজাইনার। ২০১৫ সাল থেকে আমি Graphics Design নিয়ে কাজ করি।
গ্রাফিক্স ডিজাইনের উপর আমি ফ্রিল্যান্সিংও করি।
আমার অভিজ্ঞতা থেকে যেটা বুঝতে পেরেছি, নতুন অবস্থায় Graphics Design করতে গিয়ে আমরা ডিজাইন সংকটে পড়ে যাই।
অর্থাৎ, কী ধরণের ডিজাইন করবো তা মাথায় আসে না। ডিজাইন কিভাবে করলে ভালো হবে তাও অনেক সময় বুঝতে পারি না।
এই সমস্ত বিষয়বস্তুকে সামনে রেখে নতুনদের জন্য এমন কিছু গ্রাফিক্স ডিজাইন আইডিয়ার কথা বলব, যা Graphics Design করার ক্ষেত্রে নতুনদেরকে ফলো করা উচিত।
সেরা ১০ গ্রাফিক্স ডিজাইন টিপস
সফটওয়্যার বা টুলসের ব্যবহার জানলেই গ্রাফিক্স ডিজাইন করা যায় না।
আমি ৩ মাসের কোর্স করে ফটোশপ এবং ইলাস্ট্রেটর সফটওয়্যারের মাধ্যমে গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখেছিলাম। এটা অনেক আগের কথা।
কোর্স শেষ হওয়ার পর আমি ফটোশপ এবং ইলাস্ট্রেটর এর প্রায় সকল টুলসের কাজ জানতাম।
কিন্তু ডিজাইন কিভাবে করবো, কালার কি দেব, ফন্ট কোনটা ব্যবহার করবো তা কোন ভাবেই সিলেক্ট করতে পারতাম না।
ইভেন আমিও কয়েকজনকে গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এর কাজ শিখিয়েছি। কাজ শেখার পর তাদেরও একই অবস্থা হয়েছিল।
তবে আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে তাদেরকে এমন কিছু গ্রাফিক্স ডিজাইন টিপস শিখিয়েছিলাম, যা তাদেরকে যে কোন ধরণের ডিজাইন করার ক্ষেত্রে এডভান্টেজ দিয়েছে।
আমিও সাধারণত এগুলো ফলো করে কাজ করি।
আমার অভিজ্ঞতা থেকে সেরা ১০ টি গ্রাফিক্স ডিজাইন আইডিয়া উল্লেখ করা হলো।
১. ডিজাইন নিয়ে ভাবুন
যে কোন ধরণের ডিজাইন করার ক্ষেত্রে শুরুতেই ডিজাইনটি কেমন হবে তার একটি ম্যাপ আপনার মনে অঙ্কন করুন।
কল্পনাশক্তি দিয়ে সেই ডিজাইনের রূপরেখা তৈরি করার পাশাপাশি ডিজাইনের অবকাঠামো কেমন হবে তা নিশ্চিত করুন।
এরপর ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর বা আপনার পছন্দের যে কোন সফটওয়্যারে ডিজাইন করার জন্য নতুন ডকুমেন্ট খুলুন।
এই বিষয়টা বিগেনার থেকে এডভান্স লেভেলের প্রত্যেক গ্রাফিক্স ডিজাইনারকে ফলো করা জরুরি।
২. ডিজাইন রিসার্চ করা
ডিজাইন রিসার্চ করা নতুনদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
আপনি কোন ধরণের ডিজাইন করতে আগ্রহী তা লিখে গুগলে সার্চ করুন। দেখবেন হাজার হাজার ডিজাইন রিলেটেড রেজাল্ট আপনার সামনে চলে আসবে।
মনে করুন আপনি T-Shirt Design করতে চাচ্ছেন।
কিন্তু নতুন হিসেবে বুঝতে পারছেন না যে ডিজাইনটি অবকাঠামো কেমন হবে।
এই সিচুয়েশনে আপনি যদি গুগল থেকে ডিজাইন রিসার্চ করেন, তবে অনেক ডিজাইন আইডিয়া পেয়ে যাবেন।
চেষ্টা করবেন অন্যান্য ডিজাইন গুলোকে হুবহু কপি করা করার জন্য।
তবে মনে রাখবেন অন্যের ডিজাইন কপি করার বিষয়টা কেবল প্রাক্টিসের ক্ষেত্রে ট্রাই করবেন।
আপনি যদি অন্যদের ডিজাইনকে হুবহু কপি করতে পারেন, তবে একটা বিষয় স্পষ্ট যে আপনি টুসলের ব্যবহারে পারদর্শী।
এভাবে ৩-৪ টা ডিজাইন নকল করার পর নিজ থেকে একটি ইউনিক ডিজাইন তৈরির করার ট্রাই করুন।
এভাবে অল্প কয়েকদিন কন্টিনিউ করতে পারলে আপনি লক্ষ্য করবেন যে আপনার মাঝে নতুনত্ব সৃষ্টি হচ্ছে।
ইভেন ক্রিয়েটিভ ডিজাইনের আইডিয়াও খুব সহজে আয়ত্ব করে ফেলতে পারবেন।
বিগেনারদের জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইন টিপস হিসেবে এটি ফলো করলে আপনি সহজেই গ্রাফিক্স ডিজাইন আইডিয়া আয়ত্ব করে নিতে পারবেন।
৩. সঠিক কালার ব্যবহার করা
যে কোন ধরণের Graphics Design তৈরির ক্ষেত্রে যথাযথ কালার ব্যবহার করা অত্যাবশ্যক।
যারা নতুন Graphics Design শিখেছেন তাদের কমন একটি প্রবলেম হলো ডিজাইনে সঠিক কালার এপ্লাই করতে না পারা।
এই সমস্যায় আমি নিজেও একসময় ভুক্তভূগী ছিলাম।
ডিজাইন করার ক্ষেত্রে আপনাকে এমন কালার প্রয়োগ করতে হবে, যেই কালারটি প্রয়োগ করলে ডিজাইনটি ফুটে উঠবে।
একটি ডিজাইনে একাধিক কালার ব্যবহার করতে হতে পারে।
ব্যাকগ্রাইন্ড তৈরির ক্ষেত্রে দুটি কালারের বেশী প্রয়োগ করা উচিত না। তবে প্রয়োজনের তাকিদে ব্যবহার করা দোষের নয়।
এক্ষেত্রে আপনাকে মনে রাখতে হবে, যে কোন ডিজাইনের ব্যাকগ্রাইন্ড কালার নরমাল দেবেন।
আর লেখা বা ফন্ট কালার চকচকে বা উজ্জ্বল রাখতে চেষ্টা করবেন।
এমন করা যাবে না যে, ব্যাকগ্রাইন্ড কালারের জন্য লেখাগুলো ভাসছে না।
৪. যথাযথ ফন্ট নির্বাচন করা
নতুন ডিজাইনাররা ডিজাইনে ফন্ট নির্বাচন করতে পারে না।
অনেকেই মনে করে বিভিন্ন স্টাইলিশ ফন্ট ব্যবহার করার মানেই হলো ডিজাইন সুন্দর হয়ে যাওয়া।
কিন্তু বিষয়টি এমন নয়।
আপনি যদি ডিজাইনে যথাযথ ফন্ট ব্যবহার করতে পারেন, তবে নরলাম ফন্ট দিয়েও ডিজাইন অনেক সুন্দর হবে।
বিশেষ করে পোস্টার ডিজাইন, ব্যানার ডিজাইন, বিজনেস কার্ড ডিজাইন ইত্যাদিতে নরমাল ফন্ট ব্যবহার করা উচিত।
৫. মেজারমেন্ট ঠিক রাখা
এটি যে কোন ধরণের গ্রাফিক্স ডিজাইন টিপসগুলোর মধ্যে অন্যতম।
ডিজাইনের তৈরি করার জন্য মেজারমেন্ট ঠিক রাখা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
মেজারমেন্ট বলতে ডিজাইনের সাইজ।
প্রত্যেকটা ডিজাইনেরই একটি নির্দষ্ট সাইজ রয়েছে।
আপনি যখন কোন সফটওয়্যার দিয়ে ডিজাইন করতে যাবেন, শুরুতেই ডকুমেন্ট সাইট সঠিক ভাবে প্রয়োগ করবেন।
মনে করুন আপনি কভার প্রচ্ছদ ডিজাইন করার জন্য কাঙ্খিত সফটওয়্যারে একটি নতুন ডকুমেন্ট তৈরি করলেন 500 inch * 700 inch এর সাইজ দিয়ে।
এটা কিন্তু কভার প্রচ্ছদের জন্য মানায় না।
আবার আপনি যদি এই সাইজের ডুকুমেন্ট দিয়ে ডিজাইন করতে যান, তবে আপনি কখনই প্রচ্ছদ কভারটি ছাপাতে পারবেন না।
ডিজাইনের মেজারমেন্ট ঠিক না করলে আপনি ডিজাইন নিয়ে বিভিন্ন সমসায় পড়তে পারেন।
তাই, যে কোন ডিজাইন করার ক্ষেত্রে মেজারমেন্ট ঠিক রাখা আবশ্যক।
৬. সিম্পল ডিজাইন করা
যে কোন মানুষের কাছে সিম্পল ডিজাইন অনেক বেশী পছন্দের।
আমি যখন ইন্টারন্যাশানাল ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস Freelancer.com এর মাধ্যমে গ্রাফিক্স ডিজাইনের উপর কন্টেস্ট দিতাম, শুরুর দিকে বেশ ঝাঁকজমকপূর্ণ ডিজাইন করতাম।
অথচ, আমার কম্পিটিটরেরা খুবই সিম্পল ডিজাইন দিয়ে কন্টেস্ট জিতে নিতো।
বিষয়টা আমি ফলো করেছি বেশ কয়েকদিন। তারপর আমিও সিম্পল ডিজাইন তৈরির প্রতি মনোযোগী হই এবং কন্টেস্ট জিততে শুরু করি।
তখন থেকেই আমি বুঝতে পারি যে, সিম্পল ডিজাইন অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
আপনি যদি গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ে নতুন হয়ে থাকেন, তবে আপনাকে শুরু থেকেই সিম্পল ডিজাইনের প্রতি আগ্রহ বাড়ানো এবং দৃষ্টি দেওয়া উচিত।
৭. প্রফেশনালদের ফলো করা
Graphics Design করতে গিয়ে যারা সফল গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের ডিজাইন গুলো ফলো করে, তারা খুব সহজেই ভালো একটি পর্যায়ে নিজের ডিজাইনকে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
মনে রাখবেন গ্রাফিক্স ডিজাইনার আর সফল গ্রাফিক্স ডিজাইনার এক কথা না।
বর্তমানে আমাদের আশেপাশের অনেক মানুষকে Graphics Design করতে দেখবেন।
তবে এটাও অবলোকন করবেন যে সবাই গ্রাফিক্স ডিজাইনের উপর সফল না।
এর কারণ হলো যারা বেশী পরিশ্রমী এবং যাদের ডিজাইন কোয়ালিটি ভালো তারাই কেবল সফল হয়।
আপনি তাদের ডিজাইন গুলোই ফলো করবেন।
এতে আপনার মাঝেও একটি ক্রিয়েটিভ চিন্তা উদ্ভব হবে। যেটা আপনার ডিজাইনকে ফুটিয়ে তুলতে এবং কোয়ালিটিপূর্ণ ডিজাইন করতে এডভান্টেজ তৈরি করবে।
এটাই মূলত একজন প্রফেশনাল ডিজাইনারের অস্তিস্ত ধরে রাখে।
৮. বেশী বেশী প্রাক্টিস করা
আপনার ডিজাইন গুলোর মধ্যে সহজেই ক্রিয়েটিভিটি আনতে গ্রাফিক্স ডিজাইন টিপস হিসেবে নিয়মিত প্রাক্টিসকে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিতে হবে।
মনে রাখবেন আপনি যত বেশী প্রাক্টিস করবেন আপনার মধ্যে সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পেতেই থাকবে।
তবে প্রাক্টিস করার ক্ষেত্রে এমন কিছু ডিজাইন সিলেক্ট করবেন যেগুলো অনেক কঠিন।
এই ধরণের ডিজাইন খুঁজে পেতে বিভিন্ন প্রেস বা ছাপা খানায় যেতে পারেন।
৯. ডিজাইন শেয়ার করা
আপনি যেই ডিজাইন গুলো করেছেন, তা আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন।
বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করতে পারেন।
ডিজাইন শেয়ার করার পর আপনার বন্ধুদের থেকে ফিডব্যাক নিন তাদের জিজ্ঞাসা করুন আপনার কাঙ্খিত ডিজাইনটি কেমন হয়েছে।
আপনার সোশ্যাল মিডিয়ার ফ্রেন্ডলিস্টে যদি কোন অভিজ্ঞ ডিজাইনার থাকে তবে দেখবেন আপনার ডিজাইনের ভুলগুলো ধরিয়ে দেবে।
এই ফিডব্যাকগুলো আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যারা ডিজাইনের সমালোচনা করবে তাদেরকে মন্দ ভাববেন না।
এই সমালোচনা থেকে আপনার ডিজাইনের ভুলগুলোকে নোট করুন এবং শোধরে নিন।
প্রয়োজনে আপনি নিজেও আপনার ডিজাইনের সমালোচনা করুন। ভুলগুলো খুঁজে বের করুন।
এটা আপনাকে সফল গ্রাফিক্স ডিজাইনার হতে সাহায্য করবে।
১০. ধৈর্য সহকারে ডিজাইন করা
গ্রাফিক্স ডিজাইন করতে গিয়ে অনেকের বিরক্তিবোধ হয়। এটা স্বাভাবিক।
শুরুর দিকে হয়ত এমনও হবে একটি বিজনেস কার্ড ডিজাইন করতে গিয়ে ২ ঘন্টা সময় লেগে যেতে পারে।
আবার একটি কভার প্রচ্ছদ বা ক্যালেন্ডার ডিজাইন তৈরি করতে ৩-৪ ঘন্টা সময় লাগতে পারে।
নতুন অবস্থায় এই সময়টাকে আপনার কাজে ইনভেস্ট হিসেবে নেবেন।
এভাবে পারদর্শী হওয়ার পর একটি সময় দেখবেন যে বিজনেস কার্ড ডিজাইন করতে ৫ –১০ মিনিটটের বেশী সময় লাগবে না।
আবার কভার প্রচ্ছদ বা ক্যালেন্ডার ডিজাইন তৈরি করতে ১৫-৩০ মিনিটের বেশী সময় লাগবে না।
তাই নতুন গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের উচিত সময় নিয়ে ধৈর্যের সাথে ডিজাইন করা।
আমাদের শেষ কথাঃ
প্রিয় পাঠক, আমি চেষ্টা করেছি আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে নতুনদের জন্য সেরা ১০ গ্রাফিক্স ডিজাইন টিপস দেওয়ার জন্য।
আশাকরি সকলেই উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ।
অনেকেই জানতে চান কিভাবে সফল গ্রাফিক্স ডিজাইনার হওয়া যায়?
তাদের উদ্দেশ্যে বলব আপনারা উপরোল্লিখিত বিষয়গুলো ফলো করে ডিজাইন করুন, তবে দেখবেন যে আপনি কিভাবে সফল হয়ে গেছেন নিজেও বুঝতে পারবেন না।
গ্রাফিক্স ডিজাইন এর ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল। আপনি চাইলে গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখে অনলাইন বা অফলাইনে কাজ করতে পারবেন।
যে কোন স্থানে গ্রাফিক্স ডিজাইনারের বেতন বেশ ভালোই। আমার এক বন্ধু গ্রাফিক্স ডিজাইনের উপর একটি প্রেসে কাজ করে। তার বেতন প্রায় ১৮-২০ হাজার টাকার উপরে। এটা আমাদের বাংলাদেশীদের জন্য ভালো একটা এমাউন্ট বলা যায়।
যাইহোক, গ্রাফিক্স ডিজাইন টিপস গুলোর উপর আপনার যদি আরো কোন বিষয় জানার আগ্রহ থাকে তবে কমেন্টে প্রশ্ন করুন।
Add comment