মাইক্রোসফট উইন্ডোজ হলো কম্পিউটারের সবচেয়ে জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম। প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ব্যবহারকারী রয়েছে এই অপারেটিং সিস্টেমের। নতুন ব্যবহারকারীদের অনেকেই জানে না কম্পিউটারে নতুন করে উইন্ডোজ দেওয়ার পরে করনীয় গুলো কি?
তাই অনেকেই নতুন উইন্ডোজ দেওয়ার পর বিভিন্ন বিভ্রান্তিতে পড়তে দেখা যায়। প্রথমে কোন অ্যাপ্লিকেশনটি কম্পিউটারে ইনিস্টল দিতে হবে, কোন প্রোগ্রামটি প্রথমে রান করতে হবে এমন বেসিক অনেক প্রশ্ন রয়েছে অনেকের।
কম্পিউটার এক্সপার্টদের জন্য বিষয়টা যদিও জটিল কিছু নয়, তবে নতুনদের জন্য বিষয়টা খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নেই। মাঝে মাঝে উইন্ডোজের বেসিক সমস্যাটা গুলোই বিভিন্ন জটিলতা তৈরি করে।
অনেক সময় এমন হয় যে, নতুন উইন্ডোজ দেওয়ার পর বিভিন্ন ড্রাইভার ইনিস্টল না থাকার কারণে বিভিন্ন ফিচার ঠিকমতো কাজ করে না। যেমন, সাউন্ড আসে না, ইউএসবি কাজ করে না, স্কিন রেজুলেশনে প্রবলেম দেখায় এবং ওয়াইফাই বা ইন্টারনেট কম্পিউটারে সংযোগ হয় না ইত্যাদি।
আপনি যদি কম্পিউটারের নতুন ব্যবহারকারী হন তবে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই আর্টিকেলে আমি আপনাকে বলব নতুন উইন্ডোজ দেওয়ার পর করণীয় এবং বর্জনীয় বিষয় সম্পর্কে।
Table of Contents
নতুন করে উইন্ডোজ দেওয়ার পরে করনীয়
নতুন উইন্ডোজ দেওয়ার পর পরই বেশকিছু ড্রাইভার কম্পিউটারে ইনিস্টল করতে হয়। পাশাপাশি এমন কিছু প্রয়োজনীয় কম্পিউটার সফটওয়্যার রয়েছে যেগুলো ইনিস্টল করতে হবে।
০১. কম্পিউটারে প্রয়োজনীয় ড্রাইভার ইনিস্টল করা
ড্রাইভার হলো ডিজিটাল ডিভাইসের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ড্রাইভার দ্বারা সফটওয়্যারের কনফিগারেশনকে অপারেটিং সিস্টেমের সাথে সঠিকভাবে সংযুক্ত করে।
ফলে যে কোন সফটওয়্যারের প্রোগামিং কোডগুলো কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেমের সাথে মেচিং করে সফটওয়্যারের ফিচার সমূহকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারে।
তখন কম্পিউটারের পারফর্মেন্স অনেকটা বেড়ে যায়। তাই নতুন উইন্ডোজ দেওয়ার পর সর্বপ্রথমেই প্রয়োজনীয় ড্রাইভারগুলো কম্পিউটারে ইনিস্টল করে নেওয়া উচিত।
২ . ব্রাউজার ইনিস্টল করা
কম্পিউটার / ল্যাপটপ ব্যবহারকারীদের প্রায় বেশীরভাগ মানুষই এখন ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত। ব্রাউজার ইনিস্টল করার বিষয়টা সবার জন্যই বাধ্যতামূলক নয়।
যারা কম্পিউটার / ল্যাপটপে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তারা অবশ্যই নতুন উইন্ডোজ সেটআপ দেওয়ার পর পরই কম্পিউটারে ব্রাউজার ইনিস্টল করে নেবেন।
ব্রাউজার পছন্দের উপর ভিত্তি করেই ইনিস্টল করবেন। যেমন : Google Chrome, Mozilla Firefox, Microsoft Edge, Opera Browser, safari Browser ইত্যাদি। তবে প্রয়োজনের বেশী ব্রাউজার কম্পিউটারে ইনিস্টল করবেন না।
৩. রাউটার, ল্যান কার্ড বা মডেম ইত্যাদি ইনিস্টল করা
নতুন উইন্ডোজ দেওয়ার পর অনেক সময় দেখা যায় যে, ওয়াইফাই রাউটার কম্পিউটারের সাথে যুক্ত হচ্ছে না। এটার প্রধান কারণ হলো ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড নতুন উইন্ডোজে সেট করা নেই।
আবার এটাও হতে পারে যে, রাউটারের কোন ড্রাইভার ইনিস্টল করতে হবে। তবে অবশ্যই সমস্যার উপর ভিত্তি করেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
অনেকেই ল্যান কার্ড ব্যবহার করে মোবাইল থেকে এমবি শেয়ার করার মাধ্যমে কম্পিউটার / ল্যাপটপে ইন্টারনেট চালায়। তারা অবশ্যই নতুন উইন্ডোজ দেওয়ার পর ল্যান কার্ড ড্রাইভারটি ইনিস্টল করে নেবেন।
আবার অনেকেই মডেম দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। তাদের ক্ষেত্রেও বিষয়টি ল্যান কার্ডের মতই। অর্থাৎ, মডেমের ড্রাইভারটি নতুন উইন্ডোজ সেটআপ দেওয়ার পর পরই ইনিস্টল করে নেওয়া উচিত।
৪. মিডিয়া প্লেয়ার ইনিস্টল করা
কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপ ব্যবহারকারী সকলেরই মিডিয়া প্লেয়ার ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। মিডিয়া প্লেয়ারের মাধ্যমে আমরা অডিও, ভিডিও বিষয়গুলো দেখে থাকি।
যদিও উইন্ডোজের ডিফল্ট একটি মিডিয়া প্লেয়ার রয়েছে। এটা উইন্ডোজের সাথেই ইনক্লুট করা থাকে। তবে এটা যথেষ্ট ইউজার ফেন্ডলি নয়।
তাই আলাদা কোন মিডিয়া প্লেয়ার নতুন উইন্ডোজ সেটআপের পর কম্পিউটারে ইনিস্টল করে নেওয়া যায়। এটা অবশ্যই আপনার রুচির উপর ভিত্তি করবে।
৫ . অফিস অ্যাপলিকেশন ইনিস্টল করা
অফিস অ্যাপলিকেশন মানে হচ্ছে মাইক্রোসফটের প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার গুলো। যেমন : মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, মাইক্রোসফট এক্সেল, মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্ট ইত্যাদি সফটওয়্যার গুলো নিয়ে গঠিত সফটওয়্যারকে অফিস অ্যাপলিকেশন বলা হয়।
অফিস অ্যাপলিকেশন সবার জন্যই বাধ্যতামূলক নয়। তবে যারা মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, মাইক্রোসফট এক্সেল, মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্ট ইত্যাদি নিয়ে কাজ করেন, তারা অবশ্যই উইন্ডোজ দেওয়ার পর অফিস অ্যাপলিকেশনটি কম্পিউটারে ইনিস্টল করে নেবেন।
৬ . বাংলা কিবোর্ড / আরবি কিবোর্ড / হিন্দি কিবোর্ড ইনস্টল করা
কম্পিউটারের ডিফল্ড ভাষা হচ্ছে ইংলিশ। কিবোর্ডের ডিফল্ড ভাষাও হয় ইংলিশ। তাই অন্যান্য ভাষার বর্ণ কম্পিউটারে টাইপ করার জন্য কাঙ্খিত ভাষার কিবোর্ড সফটওয়্যার কম্পিউটারে ইনিস্টল করতে হয়।
তারপর কোন নোটপ্যাডে লেখার আগে ভাষা নির্বাচন করে যে কোন ভাষার বর্ণ কম্পিউটারে লেখা যায়।
বুঝানোর সুবিধার্ধে আমরা এখানে তিনটি ভাষার কিবোর্ডের নাম বলেছি। বাংলা কিবোর্ড, আরবি কিবোর্ড, হিন্দি কিবোর্ড ইত্যাদি।
৭ . WinRar সফটওয়্যার ইনিস্টল করা
WinRar খুবই ছোট্ট একটি সফটওয়্যার। তবে এই সফটওয়্যারটি ব্যবহারের দিক দিয়ে খুবই জনপ্রিয়। WinRar সফটওয়্যারের দ্বারা বিভিন্ন ফাইলকে ZIP করা যায়, এবং বিভিন্ন ZIP ফাইলকে আনজিপ করা যায়।
কোন ফাইলকে ZIP করলে কাঙ্খিত ফাইলটি বিভিন্ন ভাইরাসের সরাসরি আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকে। তাই এই ছোট্ট সফটওয়্যারটি উইন্ডোজ সেটআপ দেওয়ার পর কম্পিউটারে ইনিস্টল করে নিতে পারেন।
৮ . এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ইনস্টল করা
এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ইনিস্টল করার মাধ্যমে কম্পিউটার সিকিউরিটি নিশ্চিত করা যায়। ভাইরাস এমন একটি বিষয়, যা দিয়ে ইন্টারনেটের অনেকটা অংশ হ্যাকাররা নিয়ন্ত্রণ করে।
ভাইরাস অনেক প্রকারের হয়। তবে সকল ধরণের ভাইরাসই আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা হুমকির মুখে ফেলে দেয়।
অনেক সময় বিভিন্ন ভাইরাসের দ্বারা সাইবার আক্রমণ করে কম্পিউটার থেকে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ডেটা চুরি হয়ে যায়। অবার অনেক সময় ভাইরাস দ্বারা আমাদের কম্পিউটারের গুরুত্বপূর্ণ ডেটাগুলো অকেজো করে দেওয়া হয়।
শুধু তাই নয়; ভাইরাসের কারণে আমাদের কম্পিউটারের যথেষ্ট পার্ফরমেন্স পাইনা। তাই নতুন উইন্ডোজ দেওয়ার পর পরই ভালো কোন এন্টিভাইরাস কম্পিউটারে ইনিস্টল করে নেওয়া জরুরি।
৯ . অপারেটিং সিস্টেম আপডেট করা
অপারেটিং সিস্টেম আপডেট করার বিষয়টি সবার জন্যই নয়। যারা মূলত অপারেটিং সিস্টেম লাইসেন্স সহ ব্যবহার করেন, তারা অবশ্যই নিয়মিতই অপারেটিং সিস্টেম আপডেট করবেন।
এতে করে আপনি বিভিন্ন রিস্কি ভাইরাস বা মালওয়্যার এ্যাটাক্ট থেকে বেঁচে যাবেন এবং কম্পিউটার সবসময় ফাস্ট কাজ করবে।
আর যারা ক্র্যাক উইন্ডোজ ব্যবহার করেন, অর্থাৎ License key ছাড়া ব্যবহার করেন তাদের অপারেটিং সিস্টেম আপডেট করার কোন প্রয়োজন বা যুক্তি নেই।
কেননা, অপারেটিং সিস্টেম ক্র্যাক হওয়ার কারণে এখানে অনেক কোড যুক্ত করা হয় বা কাটছাট করা হয়। তাই ক্র্যাক অপারেটিং সিস্টেম কখনই আপডেট করতে যাবেন না।
আপডেট করলে লাভের চেয়ে লসটাই বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এই বিষয়টি আপনাদের উপরই ছেড়ে দিলাম।
১০ . ফটোশপ / কোড এডিটর ইনিস্টল করা
এই বিষয়টা অপশনাল। তবে যারা গ্রাফিক্স ডিজাইন নিয়ে কাজ করেন বা ছবি এডিট করেন, তারা নতুন উইন্ডোজ দেওয়ার পর ফটোশপ বা ছবি এডিটের পছন্দের সফটওয়ারটি কম্পিউটারে ইনিস্টল করে নেবেন।
আর যারা প্রোগ্রামিং বা কোডিও রিলেটেড কোন বিষয় নিয়ে কাজ করেন তারা অবশ্যই নতুন উইন্ডোজ দেওয়ার পর পরই যে কোন কোড এডিটর কম্পিউটারে ইনিস্টল করে নিতে পারেন। কোড এডিটর যেটা ব্যবহার করেন অবশ্যই সেটাই ইনিস্টল করবেন।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথাঃ
প্রিয় পাঠক, সামর্থ থাকলে অবশ্যই উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের License key সহ ব্যবহার করুন। প্রয়োজনের বাহিরে কোন সফটওয়্যার বা ড্রাইভার কম্পিউটারে অযথায় ইনিস্টল করবেন না।
যে কোন ওয়েবসাইট থেকে সফটওয়ার ডাউনলোড করে কম্পিউটারে ইনিস্টল করবেন না। সফটওয়্যার ডাউনলোডের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করুন।
অবশ্যই সফটওয়্যার ট্রাস্টেড কোন সাইট থেকে ডাউনলোড করবেন। সামর্থ থাকলে ক্র্যাক সফটওয়্যার বর্জন করুন। আর ফ্রি সফটওয়্যারগুলো অবশ্যই কোম্পানির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকেই সংগ্রহ করুন।
তাহলে আপনার কম্পিউটার ব্যবহার অনেক সুখময় হবে। যাইহোক, নতুন করে উইন্ডোজ দেওয়ার পরে করনীয় গুলো কি কি আশাকরি তা বুঝতে পেরেছেন।
এই বিষয়ে আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানিয়ে দিন। আমরা আপনাকে সহযোগিতা করবো ইনশাআল্লাহ। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন। সবাইকে ধন্যবাদ।
খুবই চমৎকার একটি ইনফরমেটিভ লেখা। অনেক ভাল লেগেছে।
সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ প্রিয়!
এত বিস্তারিত ভাবে আর কেউ বুঝায় কি না জানি না। আপনাদের প্রত্যেকটা লেখাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
শোকরিয়া প্রিয়! আইটি নির্মাণ-এর পাশেই থাকুন।