বাংলা ভাষায় আরবি মাস বা ইসলামিক মাস বলা হলেও আরবিতে মূলত ’হিজরী সন’ বলা হয়। প্রতিটি মুসলমানের কাছে আরবি মাসের নাম বা হিজরি মাসের নাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হিজরি সনের ইতিহাস আমরা কম-বেশি সকলেই শুনেছি এবং জেনেছি। হিজরি সনের সাথে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ও প্রিয় সাহাবী হযরত আবু রকর (রা.) সহ বিভিন্ন সাহাবী গণের জন্মস্থান ত্যাগের করুণ স্মৃতি জড়িয়ে আছে।
হিজরি সালকে ইংরেজিতে হিজরি ক্যালেন্ডার (Hijri calendar / Islamic Calendar) বলা হয়। আপনি যদি একজন মুসলিম হয়ে থাকেন, তবে আপনার উচিত আরবি ১২ মাসের নাম বাংলায় জেনে নেওয়া। কারণ আরবী ১২ মাসের নামের সাথে ইসলাম ধর্মের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পৃক্ত।
আরও পড়ুনঃ আল্লাহর ৯৯ নামের ছবি বাংলা অর্থসহ
আজ আমরা সহজ ভাষায় আরবি বারো মাসের নাম (Arbi Maser Nam) আরবি, বাংলা ও ইংরেজিতে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করবো। আশাকরি এই ব্লগের মাধ্যমে আপনারা আরবি মাসের নাম বাংলায় অর্থসহ জানতে পারবেন।
হিজরি সনের প্রবর্তক কে?
হিজরি ১২ মাসের নাম বা হিজরি ক্যালেন্ডারের সাথে ইসলামের এক করুণ ইতিহাসের সম্পৃক্ততা রয়েছে। আরবিতে (سَنة هِجْريّة) হল ইসলামী চন্দ্র পঞ্জিকায় ব্যবহৃত পঞ্জিকা সাল যা শুরু হয় ৬২২ খ্রিস্টাব্দ থেকে।
মক্কার কাফেরদের ষড়যন্ত্রের কারণে হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর সাহাবীগণ (রা.) মক্কা থেকে ইয়াসরিবে (বর্তমানে মদিনায়) দেশান্তরিত হন। এই ঘটনাটি ইসলামি পরিভাষায় হিজরত নামে পরিচিত এবং হিজরি সনের শুরুটা এখান থেকেই।
হিজরি সনের প্রথম মাসকে মহররম বলা হয়। হিজরি বছর ৩৫৪ থেকে ৩৫৫ দিন ধরা হয়। ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ২২ শে জুন থেকে ১ লা জুলাই পর্যন্ত হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর অনুগামীদের মক্কা থেকে মদিনা যাওয়ার দিনকে কেন্দ্র করে ৬৩৯ খ্রিস্টাব্দে হিজরি সন চালু করা হয়।
আরও পড়ুনঃ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অর্থ ও ফজিলত
হিজরি সনের প্রবর্তক হলেন, হযরত উমর, হযরত আলি, হযরত উসমান ও হযরত আবু মুসা (রা.)। এই চারজন মিলে হিজরি সন চালু করলেও, হযরত উমর (রা.) কেই মূলত হিজরী সনের প্রবর্তক হিসেবে ধরা হয়।
আরবি বারো মাসের নাম
আরবি মাসের নাম | আরবি ১২ মাসের নাম বাংলায় | আরবি 12 মাসের নাম ইংরেজিতে |
ٱلْمُحَرَّم | মহররম | Muharram |
صَفَر | সফর | Safar |
رَبِيع ٱلْأَوَّل | বরিউল আউয়াল | Rabi al-Awwal |
رَبِيع ٱلْآخِر | রবিউস সানি | Rabi al-Thani |
جُمَادَىٰ ٱلْأُولَىٰ | জমাদিউল আউয়াল | Jumada al-Awwal |
جُمَادَىٰ ٱلْآخِرَة | জমাদিউস সানি | Jumada al-Thani |
رَجَب | রজব | Rajab |
شَعْبَان | শাবান | Shaban |
رَمَضَان | রমজান | Ramadan |
شَوَّال | শাওয়াল | Shawwal |
ذُو ٱلْقَعْدَة | জিলক্বদ | Dhu al-Qadah |
ذُو ٱلْحِجَّة | জিলহজ্জ | Dhu al-Hijjah |
আরও পড়ুনঃ আরবি সাত দিনের নাম বাংলায় উচ্চারণ সহ
আরবি ১২ মাসের নাম বাংলায়
- মহররম
- সফর
- বরিউল আউয়াল
- রবিউস সানি
- জমাদিউল আউয়াল
- জমাদিউস সানি
- রজব
- শাবান
- রমজান
- শাওয়াল
- জিলক্বদ
- জিলহজ্জ
আরবি মাসের নাম ও সাধারণ নোট
১. মহররম – মহররম হলো আরবি মাসের প্রথম মাস, যা অনেক পবিত্র। মুহররমের মধ্যে রয়েছে ‘আশুরার’ মতো গুরুত্বপূর্ণ দিন।
২. সফর – প্রাক-ইসলামী আরব বাড়িগুলো সফর মাসে অনেকটা খালি থাকতো, যখন তাদের বাসিন্দারা খাবার সংগ্রহ করত বা ব্যবসার জন্য সফরে বের হতো।
আরও পড়ুনঃ ১০ টি হালাল ব্যবসার আইডিয়া
৩. বরিউল আউয়াল – এই মাসে নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
৪. রবিউস সানি – আরবি ক্যালেন্ডারের চতুর্থ ইসলামি মাস এবং এর অর্থ হল ‘দ্বিতীয় বসন্ত’।
৫. জমাদিউল আউয়াল – হলো আরবি বছরের পঞ্চম মাস এবং ঐতিহাসিকভাবে জমাদিউল আউয়াল ছিল প্রাক-ইসলামের গ্রীষ্মের প্রথম মাস।
৬. জমাদিউস সানি – ইসলামিক ক্যালেন্ডারের ষষ্ঠ মাস হলো জমাদিউস সানি। নবী মুহাম্মদ (সা.) এর খাদিজার কনিষ্ঠ কন্যা এই মাসে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং এই মাসে মারা যান। খলিফা আবু বকর (রা.) এই মাসে মারা যান।
৭. রজব – হলো ইসলামিক ক্যালেন্ডারের সপ্তম মাস এবং এর অনুবাদ ‘সম্মান’।
৮. সাবান – ইসলামী বছরের অষ্টম মাসকে শাবান বলা হয় এবং এটিকে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর মাস বলে মনে করা হয়।
৯. রমজান – ইসলামিক ক্যালেন্ডারের নবম মাসটি সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। রমজান মাস জুড়ে মুসলমানেরা সারাদিন রোজা রাখে এবং রাতে তারাবিহের নামাজ পড়ে।
- পড়ুনঃ ইংরেজিতে সাত দিনের নাম (বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ)
১০. শাওয়াল – রমজানের পর আসে আরবি ১০ তম মাস শাওয়াল, যার অর্থ ‘উত্থিত’।শাওয়াল একটি উদযাপনের মাস, যেখানে ঈদুল ফিতর প্রথম থেকে তৃতীয় দিন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। মুসলিম সমাজে শাওয়াল মাসে প্রচুর খাবার, উপহার এবং প্রার্থনা বিনিময় করা হয়।
১১. জিলক্বদ – ইসলামি ক্যালেন্ডারের ১১ তম মাস হলো জিলক্বদ, যার অর্থ ‘যুদ্ধবিরতির মাস’। এটি তৃতীয় পবিত্র মাস যেখানে আল্লাহ সহিংসতা নিষিদ্ধ করেন যাতে মুসলমানরা নিরাপদে তাদের হজ শুরু করতে মক্কায় যেতে পারে।
১২. জিলহজ্জ – ইসলামি বছরের শেষ মাসটি অনেক পবিত্র এবং তাৎপর্যপূর্ণ। যুল হিজ্জাহ মানে ‘তীর্থযাত্রা’ এবং এই মাসে মুসলমানরা তাদের ধর্মীয় হজ্জ পালন করে। এই মাসে আরাফাহ দিবস, ঈদুল আযহা, কুরবানি ইত্যাদি সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক উৎসব রয়েছে।
আরবি মাসের নাম ও শেষ কথাঃ
প্রিয় পাঠক, আরবি ১২ মাসের নাম গুলো বাংলায় মূলত এভাবে বলা হয় – মহররম, সফর, বরিউল আউয়াল, রবিউস সানি, জমাদিউল আউয়াল, জমাদিউস সানি, রজব, শাবান, রমজান, শাওয়াল, জিলক্বদ ও জিলহজ্জ।
প্রতিটি মুসলমানদের উচিত আরবি বারো মাসের নাম গুলোকে মুখস্থ করা এবং আরবি মাসের হিসেব অনুযায়ী ধর্মীও কাজগুলোকে পালন করা।
যাইহোক, আমরা চেষ্টা করেছি হিজরি মাসের নাম (Hijri calendar / Islamic Calendar) গুলোকে আপনাদের সামনে সহজ ভাবে উপস্থাপন করার জন্যে। আশাকরি আপনারা এই ব্লগ থেকে হিজরি সনের নাম গুলো জানতে পেরে উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ।
Add comment